জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন থানা ও নিম্ন আদালতে দায়ের করা মামলা ছুঁয়েছে হাজারের কোটা। নির্মম এই হত্যাযজ্ঞের অধিকাংশ মামলার বয়স ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একটি মামলারও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। তবে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, মামলার বিচার শেষ করতে তাড়াহুড়ো করবে না তারা। এদিকে, মামলা বাণিজ্যসহ বিচারকাজের ধীরগতি নিয়ে হতাশা স্বজন হারানো পরিবারগুলোর। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শাহজাহান আলীর বাবা মায়ের এখন একটাই প্রশ্ন ছেলে হত্যার বিচার কবে পাবেন?
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিউমার্কেটে রক্তাক্ত অবস্থায় নিহত হয়ে পড়েছিলেন পাপোশের দোকানের কর্মচারী শাহজাহান আলী। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ের প্রথমদিকে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতাকর্মীদের নামে যে কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম শাহজাহান আলী হত্যা মামলা।
এই মামলাটির মতোই সারাদেশে অন্তত এমন কয়েকশত হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে যার বয়স এখন ৮ থেকে ৯ মাস। স্বজন হারানো শতশত ভুক্তভোগী পরিবার যেখানে বিচার পেতে মরিয়া ঠিক সেখানে এই মামলাগুলোর তদন্ত কতটা এগিয়েছে?
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর গত বছরের তেরো আগস্ট সদরঘাট থেকে আটক হয় সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান। তাদের প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার দেখানো হয় নিউমার্কেট থানার শাহজাহান আলী হত্যা মামলায়। দুই দফা তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে এখন মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা মনির হোসেন। ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া সম্ভব হবে, বলতে পারছেন না তিনি।
জুলাই আন্দোলনে শহীদ শাহজাহানের পরিবারের মতো বিচার পাওয়া নিয়ে এমন শঙ্কা আছে অনেকেরই। এই যেমন, আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদ মামলা করে এখন নিজেই হয়রানির ভয়ে আছেন।
তবে নিম্ন আদালতে চলমান এসব মামলায় কিছু ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, লালবাগে পুলিশের গুলিতে নিহত জুলাই শহীদ শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ'র মামলা। এই মামলারও নির্দেশদাতা হিসেবে প্রধান আসামী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আসামী করা হয়েছে ঐ সময়ে লালবাগে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদেরও।
ইতোমধ্যে পুলিশের কোন কোন সদস্য সেদিন শটগান ব্যবহার করেছিল তাদের জেরা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ তার নেতাকর্মীরা যেভাবে নির্দেশ ও বক্তব্য দিয়েছিল সম্পন্ন করা হয়েছে সেসব ফরেনসিকও। প্রশ্ন হলো এত কিছুর পরও এই মামলার চার্জশিট জমা দিতে দেরি হচ্ছে কেনো? এখন অপেক্ষা কেবল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের।
বাস্তবতা হলো জুলাই হত্যাকাণ্ডে এখনো মামলা হচ্ছে বিচারিক আদালতে। এসব মামলার সংখ্যা ইতোমধ্যে হাজার ছুঁয়েছে। সংখ্যাটি এত বেশি যে, এসব মামলায় কতজন তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজ করছে তারও হিসেবও নেই ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে। গণহারে দায়ের করা এসব মামলার তাহলে ভবিষ্যৎ কি?
সার্বিকভাবে বিচারকার্যের এই যে ধীরগতি, তাতে হত্যাকাণ্ডের মতো চরম নির্মমতার শিকার পরিবারগুলো হতাশ। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তাদের কেনো তাড়াহুড়ো নেই।
এদিকে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলা বাণিজ্যসহ সামগ্রিকভাবে যে, লেজেগুবরে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বিচার পাওয়াটাই এখন অনিশ্চিত।
বিচারিক আদালতের এমন চিত্র থাকলেও অন্যদিকে গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচার পাবেন এই আশা নিয়ে বসে আসেন স্বজন হারানো ভুক্তভোগীরা।