ঢাকা ১১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নানা সংকটের পরেও রপ্তানিতে গতি ধরে রেখেছে তৈরি পোশাক শিল্প

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:০৮:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নানা সংকটের পরেও রপ্তানিতে গতি ধরে রেখেছে তৈরি পোশাক শিল্প। সেপ্টেম্বরে বাজার হঠাৎ অস্থির হলেও ক্রয়াদেশ কমেনি। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। যা একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। অপ্রচলিত বাজারেও বেড়েছে রপ্তানি। এতো সুখবরের মধ্যেও ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ভাবনায় ফেলেছে এই খাতের উদ্যোক্তা ও শিল্পমালিকদের। শুল্ক সমস্যার সমাধান না হলে শীর্ষ এ রপ্তানি খাতের সম্ভাবনা চাপে পড়তে পারে বলে শঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

গেল ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে তৈরি পোশাকখাত। মাসখানেক চলা সে অস্থিরতায় কালো মেঘ জমে তৈরি পোশাকের ভাগ্যাকাশে। কমে যায় পোশাক উৎপাদন। স্থানান্তর হতে থাকে ক্রয়াদেশ। তবে, সে মেঘ গাঢ় হওয়ার আগেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। ঘুরে দাঁড়ায় প্রধান এ রপ্তানি খাত।

হিসাব বলছে, পোশাক খাতের অস্থিরতায় রপ্তানিতে প্রভাব পড়েনি খুব একটা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।

যেখানে সবচেয়ে এগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার। মোট পোশাকের প্রায় ৫০ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে এ বাজারে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১১, কানাডায় ৩ আর প্রায় ১৭ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হয়েছে নতুন বাজারগুলোতে। ইতিবাচক ধারার এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘যে সময় ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ ছিল আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। ওই সময় আমাদের একটু লো সিজন যায়। ওই সময় আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গাজীপুর, চট্টগ্রামের গার্মেন্টসগুলো সাপোর্ট দিয়েছে।’

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেন্জের এমডি মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমরা সক্ষমতা যতো বেশি ধরে রাখতে পারবো ততো বেশি আমাদের উন্নতি করার সুযোগ আছে।’

অপ্রচলিত বাজারেও বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে অপ্রচলিত বাজারে মোট ৫১২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ।

গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। তবে এমন সুখবরের মধ্যেও ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে টান পড়েছে প্রবৃদ্ধির সুতোয়। এর সুষ্ঠু সমাধান ছাড়া শীর্ষ এ রপ্তানি খাতের জৌলুস হারানোর শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে তার বেনিফিট বাংলাদেশ খুব একটা পাবে না। যেকোনো মূল্যে এই ট্যারিফ চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে যে পরিমাণ শুল্ক অব্যাহত রয়েছে তার উপর নতুন করে আবার বাড়লে উৎপাদকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বলেন, এসময় উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে তেমনি পোশাকের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন রপ্তানিকারকরা।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যদি ১০ শতাংশ ট্যারিফ থাকে। হয়তো সেখানে ১০২ টাকা বা ১০৪ টাকা হয়ে যাবে। ১১০ টাকা তো হবে না। ফলে যতটুকু ট্যারিফ হবে তা আমেরিকার দামের উপর যাবে না। বেশিরভাগ আসবে তারা যেখানে থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের যারা প্রোডিউসার তাদের মার্জিন কমে যাবে।’

এদিকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও এ সময় পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। তাই এ সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক সমস্যা সমাধানের পরামর্শ তাদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

নানা সংকটের পরেও রপ্তানিতে গতি ধরে রেখেছে তৈরি পোশাক শিল্প

আপডেট সময় : ০২:০৮:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

নানা সংকটের পরেও রপ্তানিতে গতি ধরে রেখেছে তৈরি পোশাক শিল্প। সেপ্টেম্বরে বাজার হঠাৎ অস্থির হলেও ক্রয়াদেশ কমেনি। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। যা একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। অপ্রচলিত বাজারেও বেড়েছে রপ্তানি। এতো সুখবরের মধ্যেও ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি ভাবনায় ফেলেছে এই খাতের উদ্যোক্তা ও শিল্পমালিকদের। শুল্ক সমস্যার সমাধান না হলে শীর্ষ এ রপ্তানি খাতের সম্ভাবনা চাপে পড়তে পারে বলে শঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

গেল ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠে তৈরি পোশাকখাত। মাসখানেক চলা সে অস্থিরতায় কালো মেঘ জমে তৈরি পোশাকের ভাগ্যাকাশে। কমে যায় পোশাক উৎপাদন। স্থানান্তর হতে থাকে ক্রয়াদেশ। তবে, সে মেঘ গাঢ় হওয়ার আগেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। ঘুরে দাঁড়ায় প্রধান এ রপ্তানি খাত।

হিসাব বলছে, পোশাক খাতের অস্থিরতায় রপ্তানিতে প্রভাব পড়েনি খুব একটা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।

যেখানে সবচেয়ে এগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার। মোট পোশাকের প্রায় ৫০ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে এ বাজারে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১১, কানাডায় ৩ আর প্রায় ১৭ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হয়েছে নতুন বাজারগুলোতে। ইতিবাচক ধারার এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘যে সময় ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ ছিল আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি। ওই সময় আমাদের একটু লো সিজন যায়। ওই সময় আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গাজীপুর, চট্টগ্রামের গার্মেন্টসগুলো সাপোর্ট দিয়েছে।’

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেন্জের এমডি মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমরা সক্ষমতা যতো বেশি ধরে রাখতে পারবো ততো বেশি আমাদের উন্নতি করার সুযোগ আছে।’

অপ্রচলিত বাজারেও বেড়েছে তৈরি পোশাক রপ্তানি। অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে অপ্রচলিত বাজারে মোট ৫১২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ।

গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। তবে এমন সুখবরের মধ্যেও ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে টান পড়েছে প্রবৃদ্ধির সুতোয়। এর সুষ্ঠু সমাধান ছাড়া শীর্ষ এ রপ্তানি খাতের জৌলুস হারানোর শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে তার বেনিফিট বাংলাদেশ খুব একটা পাবে না। যেকোনো মূল্যে এই ট্যারিফ চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে যে পরিমাণ শুল্ক অব্যাহত রয়েছে তার উপর নতুন করে আবার বাড়লে উৎপাদকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বলেন, এসময় উৎপাদন খরচ যেমন বাড়বে তেমনি পোশাকের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন রপ্তানিকারকরা।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যদি ১০ শতাংশ ট্যারিফ থাকে। হয়তো সেখানে ১০২ টাকা বা ১০৪ টাকা হয়ে যাবে। ১১০ টাকা তো হবে না। ফলে যতটুকু ট্যারিফ হবে তা আমেরিকার দামের উপর যাবে না। বেশিরভাগ আসবে তারা যেখানে থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের যারা প্রোডিউসার তাদের মার্জিন কমে যাবে।’

এদিকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও এ সময় পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। তাই এ সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে শুল্ক সমস্যা সমাধানের পরামর্শ তাদের।