বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় ১১ জনের মৃত্যু

- আপডেট সময় : ০৪:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
- / ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে

বজ্রপাতে একদিনে দেশের ৫ জেলায় ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২ জন। নিহতদের মধ্যে ৪ জন কুমিল্লার, ৩ জন কিশোরগঞ্জের, ২ জন নেত্রকোণার এবং ১ জন করে মারা গেছেন চাঁদপুর ও সুনামগঞ্জে।
এছাড়া, কালবৈশাখি ঝড়ে লালমনিরহাটের বেশ কিছু এলাকায় সঞ্চালন লাইনের খুঁটি উপড়ে শনিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে চর এলাকায় ভুট্টা ও ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কুমিল্লায় বজ্রপাতের পৃথক দুটি ঘটনায় দুই কৃষক ও দুই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ও দুপুরের দিকে এসব ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহতদের মধ্যে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং দুইজন স্কুলছাত্র রয়েছে।
সকালে সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে বজ্রপাতে মারা যান দুই ব্যক্তি। তারা হলেন- দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩৫) ও কোরবানপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া (কালীবাড়ি) এলাকার মৃত বীরচরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, ওই সময় তারা মাঠে কাজ করছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম (মেম্বার) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, আমরা স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়েছি। তাদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া একই দিনে দুপুরের দিকে বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে দুই স্কুলছাত্র। নিহতরা হলেন- ঐ এলাকার মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং একই এলাকার আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুজনেই বড় হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। হালকা মেঘলা আবহাওয়ায় তারা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, কিশোরগঞ্জের হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে এক কৃষানি ও দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সকাল ৮টার দিকে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে ও সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর এবং কলমা হাওরে এসব ঘটনা ঘটে।
মিঠামইনে নিহত কৃষানি ফুলেছা বেগম (৬৫) উপজেলার রাণীগঞ্জ কেওয়ারজোড় এলাকার মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী। অষ্টগ্রামে নিহত ইন্দ্রজীত দাস (৩৬) উপজেলার হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে এবং স্বাধীন মিয়া (১৪) খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে।
অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘সকালে ইন্দ্রজীত দাস বাড়ির পাশে হালালপুর হাওরে পাকা ধান কাটছিলেন। এ সময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ইন্দ্রজীত দাসের। একই সময় খয়েরপুর হাওরে স্বাধীন মিয়া ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ দুই ঘটনাস্থলেই যায়।’
অপরদিকে, সুনামগঞ্জের শাল্লায় বজ্রপাতে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা গবাদিপশুটিও মারা যায়। আজ (সোমবার, ২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এই ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন তালুকদার শাল্লা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মত সোমবার সকালে শাল্লার বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গেলে হঠাৎ বৃষ্টিপাত শুরু হলে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার ও তার সাথে নিয়ে যাওয়া গরুর মৃত্যু হয়।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বজ্রপাতে এক কলেজশিক্ষার্থী ও তার গরুর মৃত্যু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষার্থীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
নেত্রকোণায় রোববার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টির পর সোমবার ভোর থেকে শুরু হয় বজ্রসহ ঝড়-বৃষ্টি। টানা প্রায় ৩ ঘণ্টা চলে বৃষ্টিপাত। রাতে কলমাকান্দায় বজ্রপাতে মারা যান মাদ্রাসা শিক্ষক দিদারুল ইসলাম। মদনে মাদ্রাসা যাওয়ার পথে বজ্রপাতে আরাফাত (১০) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। আজ (সোমবার, ২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আরাফাত উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে।
আরাফাতের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিয়শ্রী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন জানান, আরাফাত বাড়ির পাশের হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ে। প্রতিদিনের মতো সোমবার সকালে ফজরের নামাজ শেষে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল আরাফাত। মাদ্রাসার পাশে পৌঁছলে হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাতে হলে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আরাফাতের।
মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অলিদুজ্জামান বলেন, ‘আরাফাত নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’
এদিকে, লালমনিরহাটে রবি ও সোমবার দফায় দফায় কালবৈশাখি ঝড় হয়েছে। এর জেরে ভোটমারীসহ বেশ কিছু এলাকায় সঞ্চালন লাইনের খুঁটি উপড়ে ব্যাহত হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। এছাড়া, ৩ উপজেলায় ছোটবড় বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়েছে। ভুট্টা ও ধানের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চরাঞ্চলে।