ঢাকা ০৪:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে বিপাকে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের বারবার সংঘর্ষে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যস্ততম নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন পার করতে হচ্ছে বলে জানান তারা। এদিকে ওই এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি বেসরকারি অনেক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে এসেও বিপাকে পড়েন রোগী ও স্বজনরা। সমস্যা সমাধানে উস্কানিদাতাদের আইনের আওতায় আনতে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বর্তমান সময়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া যেন সহজ একটি কাজ। ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ আর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডই তার প্রমাণ দেয়। দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস। নিয়মিত বিরতি দিয়ে চলে সংঘর্ষ।

এমন সংঘর্ষের দৃশ্য যেন মনে করিয়ে দেয় সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র হীরক রাজার দেশের কথা। মন চাইলেই নেমে পড়া যায় মারামারি করতে। ঠুনকো ঘটনা, বিতর্ক কিংবা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে কলেজ ছেড়ে নেমে পড়েন রাজপথে। কেউ খুলে নেন প্রতিষ্ঠানের নামফলক, কেউবা আবার বাহুর শক্তি দেখিয়ে অকারণে চালান ভাঙচুর। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন পথচারী, পরিবহনসহ আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্ষয়ক্ষতি হলেও জবাবদিহিতার বালাই নেই শিক্ষার্থীদের।

গত আট মাসে ১৩ বার বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়ায় এই তিন কলেজ। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেটসহ আশপাশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। হুটহাট সংঘর্ষ ঘটনায় প্রায় কয়েক হাজার ব্যবসায়ীকে থাকতে হয় আতঙ্কে। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতি তো আছেই।

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘হুটহাট করেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গ্যাঞ্জাম লাগিয়ে দেয়। স্টুডেন্ট দেখে অন্যরকম একটা বিষয় দেখায়, যে আমরা স্টুডেন্ট।’

অন্য একজন বলেন, ‘৩৫ বছর হলে এখানে দোকানদারি করি। এখন পর্যন্ত কতবার মারামারি দেখছি, তার ঠিক নাই।’

ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এদের মারামারির কারণে অনেক ক্ষতি হয়। সেজন্য আমরা দোকান বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকি, বা বাসায় চলে যাই। যেভাবে মারামারি চলছে, এভাবে চললে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হবে থালা-বাটি নিয়ে। এ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।’

তিন কলেজের সংঘর্ষে শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, ভোগান্তিতে পড়েন চলাচালকারী পথচারিরাও। সড়ক বন্ধ থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টার যানজটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। লোকসান গুণতে হয় পরিবহন শ্রমিকদেরও। এ ছাড়া বিপাকে পড়েন আশপাশে থাকা হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা।

বাসচালকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এই মারামারির সময় আমাদের ইনকাম বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। যেসময় রাস্তা বন্ধ থাকে ওই সময় তেলের টাকা মহাজন পকেট থেকে দেয়। আমরা বেতন পাই না।’

কেন বারবার এমন সংঘর্ষ? কেনই-বা ক্লাস ছেড়ে নিয়ম করে রাস্তায় নেমে আসা? এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে উস্কানি কিংবা তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সূত্রপাত হয় সংঘর্ষের। এ ছাড়া কলেজের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণও অনেকটা দায়ী, বলছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘স্যারদেরও মাঝে মাঝে গাফিলতি থাকে, এর সাথে প্রশাসনিক দুর্বলতা তো আছেই। সুস্পষ্ট কোনো কারণ নেই। তুচ্ছ একটা কারণেই হয়তো অনেক বড় ঘটনা ঘটে যায়।’

তবে নিজেদের দায় এড়িয়ে সমাধানের বিষয়ে আশ্বাস দেয় ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ। একইসাথে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে কাজ করছেন বলেও জানান তারা। তবে এ নিয়ে কথা বলতে চাননি সিটি কলেজ প্রশাসন।

ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রফিকুল আলম বলেন, ‘প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে যে, আর কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। সিসি ক্যামেরা দেখে যাকে পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা কলেজ যদি কোনো ছাত্রের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়, টিসি দেয়। তাহলে আশপাশের কোনো কলেজ ভর্তি করাবে না তাকে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে বিপাকে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা

আপডেট সময় : ০১:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের বারবার সংঘর্ষে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যস্ততম নিউমার্কেটসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন পার করতে হচ্ছে বলে জানান তারা। এদিকে ওই এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি বেসরকারি অনেক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে এসেও বিপাকে পড়েন রোগী ও স্বজনরা। সমস্যা সমাধানে উস্কানিদাতাদের আইনের আওতায় আনতে দাবি শিক্ষার্থীদের।

বর্তমান সময়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া যেন সহজ একটি কাজ। ঢাকা কলেজ-সিটি কলেজ আর আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডই তার প্রমাণ দেয়। দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস। নিয়মিত বিরতি দিয়ে চলে সংঘর্ষ।

এমন সংঘর্ষের দৃশ্য যেন মনে করিয়ে দেয় সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র হীরক রাজার দেশের কথা। মন চাইলেই নেমে পড়া যায় মারামারি করতে। ঠুনকো ঘটনা, বিতর্ক কিংবা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে কলেজ ছেড়ে নেমে পড়েন রাজপথে। কেউ খুলে নেন প্রতিষ্ঠানের নামফলক, কেউবা আবার বাহুর শক্তি দেখিয়ে অকারণে চালান ভাঙচুর। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন পথচারী, পরিবহনসহ আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্ষয়ক্ষতি হলেও জবাবদিহিতার বালাই নেই শিক্ষার্থীদের।

গত আট মাসে ১৩ বার বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়ায় এই তিন কলেজ। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হন সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেটসহ আশপাশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। হুটহাট সংঘর্ষ ঘটনায় প্রায় কয়েক হাজার ব্যবসায়ীকে থাকতে হয় আতঙ্কে। সেই সঙ্গে আর্থিক ক্ষতি তো আছেই।

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘হুটহাট করেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গ্যাঞ্জাম লাগিয়ে দেয়। স্টুডেন্ট দেখে অন্যরকম একটা বিষয় দেখায়, যে আমরা স্টুডেন্ট।’

অন্য একজন বলেন, ‘৩৫ বছর হলে এখানে দোকানদারি করি। এখন পর্যন্ত কতবার মারামারি দেখছি, তার ঠিক নাই।’

ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এদের মারামারির কারণে অনেক ক্ষতি হয়। সেজন্য আমরা দোকান বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকি, বা বাসায় চলে যাই। যেভাবে মারামারি চলছে, এভাবে চললে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হবে থালা-বাটি নিয়ে। এ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার থাকবে না।’

তিন কলেজের সংঘর্ষে শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, ভোগান্তিতে পড়েন চলাচালকারী পথচারিরাও। সড়ক বন্ধ থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টার যানজটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। লোকসান গুণতে হয় পরিবহন শ্রমিকদেরও। এ ছাড়া বিপাকে পড়েন আশপাশে থাকা হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা।

বাসচালকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এই মারামারির সময় আমাদের ইনকাম বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। যেসময় রাস্তা বন্ধ থাকে ওই সময় তেলের টাকা মহাজন পকেট থেকে দেয়। আমরা বেতন পাই না।’

কেন বারবার এমন সংঘর্ষ? কেনই-বা ক্লাস ছেড়ে নিয়ম করে রাস্তায় নেমে আসা? এমন প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে উস্কানি কিংবা তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সূত্রপাত হয় সংঘর্ষের। এ ছাড়া কলেজের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণও অনেকটা দায়ী, বলছেন তারা।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘স্যারদেরও মাঝে মাঝে গাফিলতি থাকে, এর সাথে প্রশাসনিক দুর্বলতা তো আছেই। সুস্পষ্ট কোনো কারণ নেই। তুচ্ছ একটা কারণেই হয়তো অনেক বড় ঘটনা ঘটে যায়।’

তবে নিজেদের দায় এড়িয়ে সমাধানের বিষয়ে আশ্বাস দেয় ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ। একইসাথে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে কাজ করছেন বলেও জানান তারা। তবে এ নিয়ে কথা বলতে চাননি সিটি কলেজ প্রশাসন।

ঢাকা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রফিকুল আলম বলেন, ‘প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে যে, আর কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। সিসি ক্যামেরা দেখে যাকে পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা কলেজ যদি কোনো ছাত্রের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়, টিসি দেয়। তাহলে আশপাশের কোনো কলেজ ভর্তি করাবে না তাকে।’