রাখাইনকে করিডোর দিলে নিরাপত্তা ঝুঁকির শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

- আপডেট সময় : ১১:৫১:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
- / ৩৪২ বার পড়া হয়েছে

জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে রাখাইনকে করিডোর দিলে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই আরও সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাগিদ তাদের।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের স্বার্থে মিয়ানমার জান্তা সরকার বা আরাকান আর্মি কারও পক্ষ নেওয়াই উচিত হবে না। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরও জটিল হতে পারে। আঞ্চলিক রাজনীতিতেও মেরূকরণ হতে পারে।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ হতে পারে এমন শঙ্কায় বাংলাদেশকে মানবিক করিডোর দেওয়ার প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘ। গত মার্চে বাংলাদেশ সফরে এসে সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রাখাইনে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা চান।
এর পর একাধিক মার্কিন প্রতিনিধিও একই তাগিদ দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে গত রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, শর্ত সাপেক্ষে মানবিক করিডোর দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এটুকু আপনাদেরকে বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এটাতে সম্মত। কারণ, মানবিক প্যাসেজ হবে। আমাদের কিছু শর্ত আছে। এ শর্তে রাজি হলে আমরা অবশ্যই সহায়তা করবো, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অবশ্যই।’
এই সিদ্ধান্তের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আরাকানদের সাথে যোগাযোগের জন্য যে হিউম্যানিটি প্যাসেজ তৈরি করার সিদ্ধান্ত; সেটি সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া উচিত ছিল। সরকারের দায়িত্ব ছিল সকল রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলা। কারণ আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমনিতেই সমস্যায় আছি, আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না। আমরা গাজায় পরিণত হতে চাই না।’
সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার তাগিদ দিয়েছেন নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরাও। তারা বলছেন, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তা সরকারে টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশের এ সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেবে না নেপিদো।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘ধরেন আমাদের ভেতরেই এই করিডোরটা, সেই করিডোরে এসে মিয়ানমার জান্তা বোম্বিং করল। এরকম এয়ারক্রাফট তাদের আছে। কিন্তু এটা প্রতিরোধ করার মতো আর্মির কাছে কোনো এয়ারক্রাফট নাই।’
অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সেখানে আমাদের ভূমিতে এসে যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনী আঘাত করে, তখন আমাদের একটা নৈতিক দায়িত্ব হয়ে যাবে টু এনকাউন্টার। এটা করতে গেলে কি হবে! আমাদের জন্য কত বিপদ সেখানে আসবে। আরাকান আর্মিকে তারা (জান্তা) কখনোই ছাড় দেবে না। যখন তারা দেখবে আরাকান আর্মি আরও বেশি সমর্থন পাচ্ছে এবং সেটা তাদের শক্তিশালী করছে, তখন কি মিয়ানমার বসে থাকবে? তারা বসে থাকবে না। তখনই কিন্তু সমস্যাটা সৃষ্টি হবে। আমাদের শঙ্কাটা কিন্তু সেই জায়গায়।’
মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে আমেরিকা, চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ঢাকাকে ভূরাজনীতির বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘জাতিসংঘ অনেক স্টেপ নেয়, কিন্তু যখন ঝামেলা তৈরি হয় তখন কিন্তু তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। মনে রাখতে হবে, আমেরিকা আফগানিস্তানে ঢুকতে পেড়েছিল এ কারণেই, যেহেতু পাকিস্তান বড় আকারে সাহায্য করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে আমরা দেখলাম আমেরিকা চলে গেল এবং পাকিস্তান ঝামেলায় পড়ে গেল। এমন ঝামেলা যে এখন আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধ হয়। সে জায়গায় আমাদের খেয়াল রাখা দরকার।’
আর অভিবাসন বিশ্লেষকের আশঙ্কা, এই করিডোর শুধু নিরাপত্তাই নয়, রোহিঙ্গা সংকটকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
অভিবাসন বিশ্লেষক শরীফুল ইসলাম হাসান বলেন, ‘প্যাসেজ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য আছে কিনা, রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নেবে কিনা, এটা দেওয়ার বিনিময়ে আমি কি পাব এবং এই যে আমি প্যাসেজ দিচ্ছি তাতে অবৈধ কোনো কার্যক্রম যুক্ত হবে না মাদক থেকে আরম্ভ করে অস্ত্র যে পাচার হবে না সে বিষয়গুলো কোনোভাবে পরিষ্কার করা।’
কোন শর্তে করিডোর দিতে রাজি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার তা জাতির সামনে তুলে ধরার দাবি জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।