৪০ দিনে ৬৫ রাজনৈতিক দলের আবেদন নির্বাচন কমিশনে

- আপডেট সময় : ১২:৩৩:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
- / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে

দেশের রাজনীতির মাঠে হঠাৎ করেই যেন নতুন দলের ঢল। ২০ মার্চ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির পর মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। এই সময়ের মধ্যে এমন হারে দল গঠনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যেনো নতুন দল গঠনের হিড়িক পড়ে গেছে।
যেসব দলের নাম এসেছে তার মধ্যে অনেকটাই অচেনা, অনেকটা অদ্ভুত ও চমকপ্রদ। ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ সংসারবন্দি পার্টি, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, আ-আম জনতা পার্টি, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, এমনকি ‘ইউক্লিয়াস পার্টি’ নামেও আবেদন পড়েছে ইসিতে।
নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন ভিড় নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ প্রবণতা শুধু গণতান্ত্রিক চর্চার প্রকাশ নয়-এর পেছনে রয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। একধরনের ‘চালাক রাজনীতি’র ছক তৈরি হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়ে তৈরি করা হয় পরিচিতি, যেটি আবার নানা কাজে লাগে- ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক সুবিধা আদায়েও।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর আবির্ভাবের ধরনও বৈচিত্র্যময়। কেউ সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেদের যাত্রা ঘোষণা করছে, কেউবা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বা ওয়েবসাইটে আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। আবার অনেক দল নিবন্ধনের আবেদনই একমাত্র কাজ হিসেবে সারছে। তাদের মাঠে তেমন কোনো তৎপরতা নেই, নেই সংগঠনের কাঠামো, কর্মসূচি বা জনসম্পৃক্ততা।
নামগুলোতেও নেই কোনো রাজনৈতিক ধারার ছাপ। অনেক ক্ষেত্রে নাম শুনেই বোঝা যায়, এগুলোর পেছনে আদর্শ নয়, বরং কিছু চটকদার ধারণা দিয়ে গণমাধ্যমে জায়গা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
তবে নতুন দলের নেতাদের বক্তব্য ভিন্ন। তাদের ভাষ্য, তারা রাজনীতিতে এসেছেন জনসেবার তাগিদে, দেশ ও জনগণের সেবা করাই একমাত্র উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি ও বাংলাদেশ একুশে পার্টির চেয়ারম্যান মো. শিপন ভুঁইয়া মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমরা কোনো ক্ষমতার লোভে দল গঠন করি নই। আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াতে চাই এবং তাদের খেদমত করার জন্যই দল গঠন করেছি।’
সাংবাদিক শওকত মাহমুদ ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে অভিষেক হওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জনতা পার্টি বাংলাদেশ। এ দলের মহাসচিব বলেন, আমরা ‘কিংস পার্টি’ নই, ‘কুইন্স পার্টি’ নই। আমরা নিজের শক্তিতে নির্বাচনে দাঁড়াতে চাই।’
তিনি বলেন, আমাদের পেছনে এমন কোন বেকিং নেই, যে বেকিংয়ের কারণে আমরা আকস্মিকভাবে নেমে পড়েছি আগামী নির্বাচনে আমাদের একটা কিছু করতেই হবে। আমরা আমাদের নিজেদের শক্তিতেই নির্বাচন করতে যাচ্ছি।
ডেসটিনি গ্রুপের বহুল আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনও এখন রাজনীতির মাঠে। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে ‘আ-আম জনতা পার্টি’ নামের একটি দলের নেতৃত্বে এগিয়ে আসছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শুধু ব্যবসা করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনীতিতে জড়িত থাকলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সরাসরি কাজ করার সুযোগ থাকে। দেশকে উন্নয়নের পথে নিতে হলে সেই ভূমিকা জরুরি।’
রাজনীতিতে আসার পেছনে তার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘আমি বিশ্বাস করি, দেশের জন্য কাজ করতে চাইলে রাজনীতিই সবচেয়ে কার্যকর প্ল্যাটফর্ম।’
তিনি দাবি করেন, বেকারত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্র তৈরি করতেই রাজনীতির ময়দানে তার পদচারণা। তিনি বলেন, আমি মনে করি রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলে দেশের জন্য ও দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করার সুযোগ খুব কম।
তিনি আরও বলেন, শুধু একটা ব্যবসা সেক্টর নিয়ে এক জাগায় বসে থাকলাম এবং ব্যবসা দিয়ে দেশের উন্নতি করে ফেললাম এ ব্যপারটা খুব লিমিটেশন। যখন রাজনীতিতে জড়িত হবো তখন আসার এ কাজ করার সুযোগ আরও বেড়ে যাবে। আমি আরও দেশেল উন্নয়নে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের যে হিড়িক আমরা দেখছি, এর পেছনে মূলত রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরির লক্ষ্য থাকে। কেউ কেউ এটিকে ব্যবহার করেন ভবিষ্যতে সরকারপন্থী জোটে জায়গা পাওয়ার জন্য, কেউবা বিভিন্ন সংলাপ-আলোচনায় জায়গা করে নিতে চান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন করার মাধ্যমে আপনি রাজনৈতিন নেতা হিসেবে আপনার একটা পরিচিতি তৈরি হয়ে যায়। এ পরিচিতিকে প্রভাব বিস্তারের স্বার্থে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগায়। এটাই হচ্ছে মূল কারণ। আত্মপ্রতিষ্ঠা রাজনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক ভাবে। তবে দুই একটা রাজনৈতিক দল থাকতে পারে যাদের উদ্দেশ্য হয়তো ভালো।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেই একজন রাজনৈতিক পরিচিতি পেয়ে যান, যেটি ভবিষ্যতে প্রভাব বিস্তার ও নানা স্বার্থে ব্যবহৃত হয়।’ তার মতে, ‘দু-একটি ব্যতিক্রম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নতুন দলগুলোর পেছনে থাকে আর্থিক বা ব্যক্তিগত এজেন্ডা। অতীতেও এমন অনেক দল দেখা গেছে, যারা শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে পারেনি।’