ঢাকা ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৫৫:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
  • / ৩৪৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশকে রিজিওনাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে (আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্রে) পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিকে ‘প্রথম শর্ত’ হিসেবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ছয় গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার (২ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মূল ম্যান্ডেট হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করা। দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিতে এবং তরুণদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি করতে এটি প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘এই ম্যানুফ্যাকচারিং হাব শুধু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নয়, এটি পুরো অঞ্চলের ৩০-৪০ কোটি মানুষের জন্য হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করেই এই হাব গড়ে উঠবে। এখানে উৎপাদিত পণ্য শুধু দেশে বা আশপাশের অঞ্চলে নয়, বিদেশেও রপ্তানি হবে।’

রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করতে বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘একজন বিদেশি রপ্তানিকারক বাংলাদেশে পণ্য তৈরি করতে আসবেন কম উৎপাদন খরচের জন্য। কিন্তু তিনি চাইবেন যত দ্রুত সম্ভব পণ্য রপ্তানি করতে। এজন্য আমাদের পোর্টের এফিশিয়েন্সি দরকার। দুবাইতে যেখানে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১ মিনিট লাগে, বাংলাদেশে সেখানে ৫ মিনিট লাগছে।’

এই দক্ষতা বাড়াতে বিশ্বের সেরা ও অভিজ্ঞ বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সাথে আলোচনা চলছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা সেই কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলছি, যাদের পুরো পৃথিবীতে স্ট্যাবলিশড রেকর্ড আছে। কোনো ফালতু কোম্পানি না। যারা ৭০-৮০টা পোর্ট হ্যান্ডেল করছেন, বিভিন্ন মহাদেশে কাজ করছেন, তাদের সাথেই আমরা কথা বলছি। আমরা চাইছি এটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে।’

তিনি জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামের সব টার্মিনাল (লালদিয়া, বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, মাতারবাড়ীসহ) মিলিয়ে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ১২ লাখ ৭০ হাজার টিইইউ’স। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ছয় গুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ ৬০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

শফিকুল আলম যোগ করেন, ‘চট্টগ্রাম ঘিরে পুরো অঞ্চলটাই পোর্টের জন্য উপযুক্ত। বন্দরের দক্ষতার সাথে সংযুক্ত সড়কসহ সবকিছুরই সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আশাও প্রকাশ করেন তিনি।

মিয়ানমার সীমান্তে সম্ভাব্য মানবিক করিডোর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। করিডোর হতে হবে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতায়। আমরা বলেছি যে, মানবিক করিডোরে আমরা ইচ্ছুক, যদি জাতিসংঘ কোনো উদ্যোগ নেয়। তাছাড়া এ ধরনের বিষয়ে দুটি দেশের সাথে কথা বলতে হয়। জাতিসংঘ যদি উদ্যোগ নেয় আর মিয়ানমার যদি রাজি থাকে, তখন বাংলাদেশ থেকে সিদ্ধান্তটা আসবে। এ বিষয় চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলা হবে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের কথা বলার কোনো অধিকারই নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গা নাম নিতেও ভয় পেত। মিয়ানমারের লোকেরা বলত রোহিঙ্গারা বাঙালি, তারাও সেই কথা বলত। রোহিঙ্গা নাম নিতে ভয় পেয়ে তারা নাম দিয়েছিল এফডিএমএন (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক)। রোহিঙ্গা নাম না নেওয়া মানে আপনি রোহিঙ্গাদের অধিকারে বিশ্বাস করেন না।’

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এবং পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয় না বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, ‘অপরাধ করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। কে আওয়ামী লীগের দোসর, সেটা দেখে সরকার ব্যবস্থা নেয় না। সরকার যখন দেখবে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, তখন অ্যাকশনে যাবে, সে যে-ই হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ নওয়াজ উপস্থিত ছিলেন। বাসস

নিউজটি শেয়ার করুন

বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ছয় গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা

আপডেট সময় : ১০:৫৫:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশকে রিজিওনাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে (আঞ্চলিক উৎপাদন কেন্দ্রে) পরিণত করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধিকে ‘প্রথম শর্ত’ হিসেবে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ছয় গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার (২ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মূল ম্যান্ডেট হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি ম্যানুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করা। দেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিতে এবং তরুণদের জন্য বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি করতে এটি প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘এই ম্যানুফ্যাকচারিং হাব শুধু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য নয়, এটি পুরো অঞ্চলের ৩০-৪০ কোটি মানুষের জন্য হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করেই এই হাব গড়ে উঠবে। এখানে উৎপাদিত পণ্য শুধু দেশে বা আশপাশের অঞ্চলে নয়, বিদেশেও রপ্তানি হবে।’

রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করতে বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘একজন বিদেশি রপ্তানিকারক বাংলাদেশে পণ্য তৈরি করতে আসবেন কম উৎপাদন খরচের জন্য। কিন্তু তিনি চাইবেন যত দ্রুত সম্ভব পণ্য রপ্তানি করতে। এজন্য আমাদের পোর্টের এফিশিয়েন্সি দরকার। দুবাইতে যেখানে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ১ মিনিট লাগে, বাংলাদেশে সেখানে ৫ মিনিট লাগছে।’

এই দক্ষতা বাড়াতে বিশ্বের সেরা ও অভিজ্ঞ বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোর সাথে আলোচনা চলছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা সেই কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলছি, যাদের পুরো পৃথিবীতে স্ট্যাবলিশড রেকর্ড আছে। কোনো ফালতু কোম্পানি না। যারা ৭০-৮০টা পোর্ট হ্যান্ডেল করছেন, বিভিন্ন মহাদেশে কাজ করছেন, তাদের সাথেই আমরা কথা বলছি। আমরা চাইছি এটা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে।’

তিনি জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামের সব টার্মিনাল (লালদিয়া, বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা টার্মিনাল, মাতারবাড়ীসহ) মিলিয়ে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় ১২ লাখ ৭০ হাজার টিইইউ’স। ২০৩০ সালের মধ্যে তা ছয় গুণ বাড়িয়ে ৭৮ লাখ ৬০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

শফিকুল আলম যোগ করেন, ‘চট্টগ্রাম ঘিরে পুরো অঞ্চলটাই পোর্টের জন্য উপযুক্ত। বন্দরের দক্ষতার সাথে সংযুক্ত সড়কসহ সবকিছুরই সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আশাও প্রকাশ করেন তিনি।

মিয়ানমার সীমান্তে সম্ভাব্য মানবিক করিডোর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। করিডোর হতে হবে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টতায়। আমরা বলেছি যে, মানবিক করিডোরে আমরা ইচ্ছুক, যদি জাতিসংঘ কোনো উদ্যোগ নেয়। তাছাড়া এ ধরনের বিষয়ে দুটি দেশের সাথে কথা বলতে হয়। জাতিসংঘ যদি উদ্যোগ নেয় আর মিয়ানমার যদি রাজি থাকে, তখন বাংলাদেশ থেকে সিদ্ধান্তটা আসবে। এ বিষয় চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলা হবে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের কথা বলার কোনো অধিকারই নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গা নাম নিতেও ভয় পেত। মিয়ানমারের লোকেরা বলত রোহিঙ্গারা বাঙালি, তারাও সেই কথা বলত। রোহিঙ্গা নাম নিতে ভয় পেয়ে তারা নাম দিয়েছিল এফডিএমএন (বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক)। রোহিঙ্গা নাম না নেওয়া মানে আপনি রোহিঙ্গাদের অধিকারে বিশ্বাস করেন না।’

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এবং পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয় না বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, ‘অপরাধ করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। কে আওয়ামী লীগের দোসর, সেটা দেখে সরকার ব্যবস্থা নেয় না। সরকার যখন দেখবে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, তখন অ্যাকশনে যাবে, সে যে-ই হোক।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটির সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ নওয়াজ উপস্থিত ছিলেন। বাসস