অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন নারী সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি হেফাজতের

- আপডেট সময় : ১০:২৬:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করে আলেমদের পরামর্শ ও ধর্মপ্রাণ নারীদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে পাঠ করা ঘোষণাপত্রে এ দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি। ১২ দফা ঘোষণাপত্রে সংবিধানে বহুত্ববাদ সংযোজনের আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরে আসারও আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণা করা হয়, দাবি আদায়ে আগামী ২৩ মে সারাদেশে বিক্ষোভ করবে হেফাজতে ইসলাম।
সারাদেশ থেকে আসা হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় শনিবার ঘুম ভেঙেছে ঐতিহাসিক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের। ভোর থেকে এখানে জড়ো হওয়া লাখো জনতার উপস্থিতিতে ভাটা পড়েনি তপ্ত রোদ কিংবা দুপুরের বৃষ্টিতেও।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, বহুত্ববাদ নয় আল্লাহর ওপর আস্থা স্থাপন, শাপলাসহ গণহত্যার অপরাধে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি আর আলেমদের মামলা প্রত্যাহারের এই সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। এরপর একে একে এখানে বক্তব্য দেন, সারা দেশের প্রধান আলেম ওলামা, ধর্মীয় শিক্ষক ও পীড় মাশায়েখরা। তাদের উষ্মা ছিল নারী কমিশন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে। আওয়ামী লীগ ও ভারতের আগ্রাসন নীতির বিরোধিতায়ও তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট।
এই সমাবেশে সংহতি জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মোটাদাগে তারা বলেছেন, ফ্যাসিজমের বিলোপ সাধনই সবচে বড় সংস্কার।
হাসনাত বলেন, ‘প্রিয় সংগ্রামী সহযোদ্ধা, আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার ৮ মাস পরে আমরা এখানে জমায়েত হতে পেরেছি। আমরা যেসব দাবিতে আজ এখানে জমায়েত হতে পেরেছি সেটি আমাদের জন্য গর্বের কিছু নয়। বরং এটি আমাদের জন্য লজ্জার।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রতি সারা বাংলাদেশের মানুষ রেড কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে ৫ আগস্ট। ৫ আগস্ট আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি এ ভূখণ্ডে আর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ আমাদের দাঁড়ি টুপিওয়ালা ভাইদের বায়তুল মোকাররম থেকে টেনে টেনে রাস্তায় নিয়ে এসেছে। সেই আওয়ামী লীগের এই দেশে আর পুনর্বাসন হবে না।’
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শাপলা চত্বরে যারা গণহত্যার শিকার হয়েছে তাদের প্রত্যেকের শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করতে হবে। এটাই আজকে আমার এক নাম্বার দাবি।’
সমাবেশের শেষপ্রান্তে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে ১২ দফা ঘোষণাপত্র তুলে ধরা হয়। পতিত স্বৈরাচারের বিচারের আগে নির্বাচন নয় এবং রাখাইনকে করিডর দেয়া হবে আত্মঘাতী এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয় সমবেত জনতার সামনে। দাবি করা হয়, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করে ধর্মপ্রাণ নারীদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন কমিশন গঠনের।
এখান থেকে আগামী ২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং ৩ মাসের মধ্যে বিভাগে বিভাগে সম্মেলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, ইসলামপন্থী মানুষের অনেক রক্ত জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে।
এদেশের বিশ্বাসকে অবমাননা করে সরকার কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যোহরের নামাজের আগেই দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় হেফাজতের এই ঢাকা সমাবেশ।
এমন একটা সময় হেফাজতের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো, যখন নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থীদের একটা রাজনৈতিক জোট হওয়ার আলোচনা মাঠে সরব। তাই হেফাজত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, নারী কমিশনে আপত্তি কিংবা আওয়ামী লীগের বিচারের দাবির এই কর্মসূচিকে, রাজনীতির এই পক্ষটির শক্তি প্রদর্শনের একটা উপলক্ষ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।