ক্ষুধার যন্ত্রণায় আবর্জনার নষ্ট খাবার কুড়াচ্ছেন গাজাবাসী

- আপডেট সময় : ১১:৪০:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
- / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে

আগ্রাসনের মধ্যেই দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরাইলি অবরোধে গাজায় দৃশ্যমান হচ্ছে দুর্ভিক্ষের চিত্র। অর্থ থাকলেও খাবার পাচ্ছে না মানুষ। ক্ষুধার জ্বালায় আবর্জনার স্তূপ থেকে নষ্ট খাবার কুড়িয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের এ নগরীর অনেক বাসিন্দা। ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে শিশুরা।
ইসরাইলি অবরোধে খাদ্য ও সহায়তা সামগ্রীর অভাবে মার্চ মাসের ২ তারিখ থেকে দুর্ভিক্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয় অসহায় গাজাবাসীর। দুই মাস অতিবাহিত হওয়ায় যা এখন দৃশ্যমান।
ক্ষুধার জ্বালায় নিরীহ মানুষের হাহাকার তীব্র হচ্ছে অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে। পঁচা-বাসি খাবার এবং পশু খাদ্যতো আছেই, আবর্জনার স্তূপ থেকে নষ্ট খাবার কুড়িয়ে জীবন রক্ষায় খেতে বাধ্য হচ্ছেন ধ্বংসস্তূপের এ নগরীর অনেক বাসিন্দা। তাদেরই একজন গাজার বাসিন্দা হেশাম।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আমি আবর্জনার পাত্র থেকে এই রুটির টুকরোগুলো সংগ্রহ করেছি। আমি রুটি খুঁজতে ডাস্টবিনে যাই। এছাড়া পশুদের খাওয়ানোর জন্য এই বাসি রুটিগুলো প্রতি ব্যাগ ১০ শেকেলের বিনিময়ে বিক্রি করতাম। এখন তাও আমরা নিজেরাই খাই।’
বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘এসব খাবার খেয়ে বাচ্চারাসহ আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি, কিন্তু আমাদের কোন বিকল্প নেই। এমন কোন হাসপাতাল নেই যেখানে আমরা চিকিৎসা নিতে পারি।’
ইসরাইলি আগ্রাসনের আগে ২০ শেকেলে তিন দিনের খাবার চাহিদা মিটলেও, বর্তমানে ১০০ শেকেলে একবেলার খাবারও পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান গাজাবাসী। অর্থাৎ অর্থ থাকলেও মিলছে না খাবার। তাইতো জাতিসংঘসহ গাজায় মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার বিলি করা খাবার সংগ্রহে দিনকে দিন লাইন দীর্ঘ হচ্ছে নিরুপায় গাজাবাসীর। বাস্তবতা হলো, সহায়তার ভাণ্ডারও ফুরিয়ে এসেছে।
বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘ক্রসিং বন্ধ এবং সরবরাহের ঘাটতির কারণে আমরা জীবনযাপন করতে পারছি না। আমরা আর কাজও করতে পারছি না। যেসব পণ্য কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে তার দাম বিশ গুণ বেশি। পুষ্টির ঘাটতি বাড়ছে। অনেক সহায়তা কেন্দ্রেও খাবার শেষ।’
গাজায় নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবিক প্রধান জোনাথন হুইটল বলেন, ‘খাদ্য নেই, জ্বালানি নেই, ত্রাণ সরবরাহ নেই, একেবারে কিছুই নেই, কোনও বাণিজ্যিক পণ্য নেই। অর্থাৎ অন্তত ২১ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কোনও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই।’
গাজা কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, দুই মাসে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগে প্রাণ গেছে ৫০ জনের বেশি বাসিন্দার, এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। বর্তমানে ৬০ হাজারের বেশি শিশু চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধার্ত যন্ত্রণায় ভুগছেন।
একদিকে সীমান্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া একটি জাহাজে শুক্রবার হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। অপরাধ ঢাকতে, ওই জাহাজে হামাস সদস্য ছিল বলে দাবি তেল আবিবের।