ঢাকা ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

হুতিদের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার বিরোধী শক্তিগুলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৪১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • / ৩৪৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইয়েমেনি হুতিদের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হচ্ছে গোষ্ঠীটির বিরোধী শক্তিগুলো। তবে এক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। হুতিদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও করছে ইয়েমেন সরকার। এতে, চারপাশ থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা।

১৯৯০ এর দশকে ইয়েমেনের শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে হুতি গোষ্ঠী। আব্দুল মালিক আল-হুতির নেতৃত্বে একদল পাহাড়ি যোদ্ধা ধীরে ধীরে হয়ে উঠে বিদ্রোহী বাহিনী। যারা এখন বিশ্বশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। কয়েক হাজার সেনাসহ গোষ্ঠীটির সশস্ত্র ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল অস্ত্রাগার রয়েছে। যাদের পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি ইরান।

২০১৪ সালে হুতিরা রাজধানী সানা দখলের পর ইয়েমেনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধের পাশাপাশি সীমান্তে সুন্নি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হুতিরা।

তাদের দমাতে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে হাত মেলায় সৌদি আরব। সানাসহ ইয়েমেনের উত্তর ও পশ্চিমের বেশিরভাগ অংশ এখন হুতিদের দখলে। অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণের বেশকিছু জনবহুল শহর ও বন্দর নগরী এডেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে হুতিদের বিরোধী শক্তিগুলো।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো উলফ-খ্রিস্টান পেস বলেন, ‘হুতিরা মূলত ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে একটি বিদ্রোহী আন্দোলন পরিচালিত হয়ে আসছে। গেল ২০ বছর ধরেই গোষ্ঠীটি সক্রিয়। তবে ২০১৫ সালে রাজধানী সানা দখলের মাধ্যমেই কার্যত সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। ইয়েমেনের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠী তাদের নিয়ন্ত্রণে।’

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গেল ৩ বছর ধরে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ অনেকটাই স্থবির হয়ে আছে। তবে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে গোষ্ঠীটি। ফিলিস্তিনিদের হয়ে লড়াইয়ে নামে তারা।

লোহিত সাগরে ইসরাইলি সংশ্লিষ্ট জাহাজে হুতিদের ক্রমাগত হামলায় সংকটে পড়ে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। এরই জেরে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এমন অবস্থায় ইয়েমেনি সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ গোষ্ঠীগুলো আবারও হুতিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। হুতিদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে তাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে তারা।

যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হুদেইদাহ বন্দরও আছে। বিরোধীরা এখন তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সহায়তার দিকে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দেশটির অভ্যন্তরে বিদ্রোহীরা সফল হলেও, আবারও আঞ্চলিক অশান্তি বাড়বে। এমনকি ইরানও এতে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে ইয়েমেন সরকারের বিরুদ্ধে, এমন আশঙ্কাও অনেকের।

উলফ-খ্রিস্টান পেস বলেন, ‘হুতিরা বহু বছর ধরে ইরানের মিত্র হিসেবে আছে। পশ্চিমাদের ওপর চাপ প্রয়োগে ইরানের এটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। লোহিত সাগরের ওপর নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ অভ্যন্তরীণভাবেও হুতিদের শাসনের ন্যায্যতা বাড়ছে। ইয়েমেনি বাসিন্দাদেরও বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কর্মকাণ্ডে ইয়েমেনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।’

হুতিদের সাফ কথা, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হলে তারাও হামলা চালিয়ে যাবে। হুতিদের কেউ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চাইলে তাদেরকেও ছেড়ে দেয়া হবে না। অন্যদিকে, ইয়েমেন সরকার বলছে, হুতিদের নির্মূল করা তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল হুতিদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। এবার ইয়েমেন সরকারও তাদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েছে।

হুতিদের নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা সরকারি বাহিনীর জন্য কঠিন। এছাড়াও, এসব অঞ্চলে শক্তিশালী আদিবাসী গোষ্ঠীও হুতিদের সমর্থন করছে। তবে, বিরোধীদের লক্ষ্য হুদেইদাহ বন্দর, লোহিত সাগর ও সমভূমির বেশকিছু অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

হুতিদের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার বিরোধী শক্তিগুলো

আপডেট সময় : ১২:৪১:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

ইয়েমেনি হুতিদের বিরুদ্ধে এবার সোচ্চার হচ্ছে গোষ্ঠীটির বিরোধী শক্তিগুলো। তবে এক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। হুতিদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও করছে ইয়েমেন সরকার। এতে, চারপাশ থেকেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা।

১৯৯০ এর দশকে ইয়েমেনের শিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আন্দোলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে হুতি গোষ্ঠী। আব্দুল মালিক আল-হুতির নেতৃত্বে একদল পাহাড়ি যোদ্ধা ধীরে ধীরে হয়ে উঠে বিদ্রোহী বাহিনী। যারা এখন বিশ্বশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। কয়েক হাজার সেনাসহ গোষ্ঠীটির সশস্ত্র ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল অস্ত্রাগার রয়েছে। যাদের পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি ইরান।

২০১৪ সালে হুতিরা রাজধানী সানা দখলের পর ইয়েমেনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধের পাশাপাশি সীমান্তে সুন্নি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হুতিরা।

তাদের দমাতে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে হাত মেলায় সৌদি আরব। সানাসহ ইয়েমেনের উত্তর ও পশ্চিমের বেশিরভাগ অংশ এখন হুতিদের দখলে। অন্যদিকে পূর্ব ও দক্ষিণের বেশকিছু জনবহুল শহর ও বন্দর নগরী এডেন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে হুতিদের বিরোধী শক্তিগুলো।

আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো উলফ-খ্রিস্টান পেস বলেন, ‘হুতিরা মূলত ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে একটি বিদ্রোহী আন্দোলন পরিচালিত হয়ে আসছে। গেল ২০ বছর ধরেই গোষ্ঠীটি সক্রিয়। তবে ২০১৫ সালে রাজধানী সানা দখলের মাধ্যমেই কার্যত সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। ইয়েমেনের প্রায় ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠী তাদের নিয়ন্ত্রণে।’

জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গেল ৩ বছর ধরে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ অনেকটাই স্থবির হয়ে আছে। তবে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে গোষ্ঠীটি। ফিলিস্তিনিদের হয়ে লড়াইয়ে নামে তারা।

লোহিত সাগরে ইসরাইলি সংশ্লিষ্ট জাহাজে হুতিদের ক্রমাগত হামলায় সংকটে পড়ে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। এরই জেরে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এমন অবস্থায় ইয়েমেনি সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ গোষ্ঠীগুলো আবারও হুতিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। হুতিদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে তাদের বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে তারা।

যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হুদেইদাহ বন্দরও আছে। বিরোধীরা এখন তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সহায়তার দিকে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দেশটির অভ্যন্তরে বিদ্রোহীরা সফল হলেও, আবারও আঞ্চলিক অশান্তি বাড়বে। এমনকি ইরানও এতে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে ইয়েমেন সরকারের বিরুদ্ধে, এমন আশঙ্কাও অনেকের।

উলফ-খ্রিস্টান পেস বলেন, ‘হুতিরা বহু বছর ধরে ইরানের মিত্র হিসেবে আছে। পশ্চিমাদের ওপর চাপ প্রয়োগে ইরানের এটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল। লোহিত সাগরের ওপর নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ অভ্যন্তরীণভাবেও হুতিদের শাসনের ন্যায্যতা বাড়ছে। ইয়েমেনি বাসিন্দাদেরও বিশ্বাস যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কর্মকাণ্ডে ইয়েমেনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।’

হুতিদের সাফ কথা, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ না হলে তারাও হামলা চালিয়ে যাবে। হুতিদের কেউ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চাইলে তাদেরকেও ছেড়ে দেয়া হবে না। অন্যদিকে, ইয়েমেন সরকার বলছে, হুতিদের নির্মূল করা তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল হুতিদের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। এবার ইয়েমেন সরকারও তাদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েছে।

হুতিদের নিয়ন্ত্রণাধীন পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা সরকারি বাহিনীর জন্য কঠিন। এছাড়াও, এসব অঞ্চলে শক্তিশালী আদিবাসী গোষ্ঠীও হুতিদের সমর্থন করছে। তবে, বিরোধীদের লক্ষ্য হুদেইদাহ বন্দর, লোহিত সাগর ও সমভূমির বেশকিছু অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া।