ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ কি অন্যদের উৎসাহিত করবে?

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:২৬:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫
  • / ৩৪৮ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত দেড় বছরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখেরও বেশি। এমন বাস্তবতায় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা হলে তা মিয়ানমারে অবস্থানরত বাকি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া চলমান ‘প্রত্যাবাসন’ প্রচেষ্টাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলেও মনে করছেন তারা।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পার হয়েছে অর্ধ যুগ। তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার নানা তদবির করলেও সুরাহা মেলেনি। উল্টো চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও ১ লাখ ১৩ হাজার নতুন করে আসা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা।

সম্প্রতি শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়কে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয় সংস্থাটি। তবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কোন জবাব দেয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলছে, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইউএন যেটা চেয়েছিল যে, আমরা তো এদের রেজিস্ট্রেশন করেছি, কিন্তু এদের তো থাকার কোনো জায়গা নেই। এরা অনেকদিন ধরেই এদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকছে। এদের তো আবাসনের ব্যবস্থা করা দরকার। তো আমরাও বলেছি যে, আপনারা তো দেখছেন, আমাদের এখানে আর জায়গা নেই। আমরা এরূপ সম্মতি দিয়েছি যে তোমরা যেখানে যেখানে পারো ব্যবস্থা করো, এই অবস্থা হয়েছে।’

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় নতুন অনুপ্রবেশকারীদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তা মিয়ানমারে অবস্থানরত বাকি রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত করবে। এছাড়া চলমান ‘প্রত্যাবাসন’ প্রচেষ্টাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিজিবি এবং আরাকান আর্মি যদি ওখানে আনঅফিশিয়ালি সেটেলমেন্ট করে অনুপ্রবেশটা বন্ধ করে দিতে পারলে সেটা আমাদের জন্য ভালো। কারণ আমাদের এখানে এটা কিন্তু একটা কনজেস্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই এই বিষয়গুলোতে আমাদের একটু লক্ষ্য রাখা দরকার। মানবিক কারণে হয়তো এরা ঢুকছে, বাংলাদেশের সরকারও এটা সফ্টলি দেখছে। তবে সবকিছু মিলিয়েই আমি মনে করি যে এটা বন্ধ করা উচিৎ।’

অতীতের রাজনৈতিক সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ব্যর্থ হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনুস বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ও তার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. মাইমুল আহসান খান বলেন, ‘এই লোকগুলো যাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এই লোকদের প্রতি আসবে এবং আমাদের কাছে যে সাহায্যটুকু আসতো, সেই সাহায্যটা আমাদের মাধ্যমেই তাদের কাছে যাবে। আমি চাইবো যে এটা একটা বাফার স্টেট হিসেবে কাজ করুক, তাহলে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবো।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে কয়েক ধাপে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে দেশটির সরকার। যদিও গত সাড়ে ৭ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি দেশটি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আরো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ কি অন্যদের উৎসাহিত করবে?

আপডেট সময় : ০২:২৬:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

গত দেড় বছরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখেরও বেশি। এমন বাস্তবতায় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা হলে তা মিয়ানমারে অবস্থানরত বাকি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া চলমান ‘প্রত্যাবাসন’ প্রচেষ্টাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলেও মনে করছেন তারা।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পার হয়েছে অর্ধ যুগ। তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকার নানা তদবির করলেও সুরাহা মেলেনি। উল্টো চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও ১ লাখ ১৩ হাজার নতুন করে আসা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা।

সম্প্রতি শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়কে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয় সংস্থাটি। তবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কোন জবাব দেয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলছে, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইউএন যেটা চেয়েছিল যে, আমরা তো এদের রেজিস্ট্রেশন করেছি, কিন্তু এদের তো থাকার কোনো জায়গা নেই। এরা অনেকদিন ধরেই এদের বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকছে। এদের তো আবাসনের ব্যবস্থা করা দরকার। তো আমরাও বলেছি যে, আপনারা তো দেখছেন, আমাদের এখানে আর জায়গা নেই। আমরা এরূপ সম্মতি দিয়েছি যে তোমরা যেখানে যেখানে পারো ব্যবস্থা করো, এই অবস্থা হয়েছে।’

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বসবাস করছে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় নতুন অনুপ্রবেশকারীদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তা মিয়ানমারে অবস্থানরত বাকি রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত করবে। এছাড়া চলমান ‘প্রত্যাবাসন’ প্রচেষ্টাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘বিজিবি এবং আরাকান আর্মি যদি ওখানে আনঅফিশিয়ালি সেটেলমেন্ট করে অনুপ্রবেশটা বন্ধ করে দিতে পারলে সেটা আমাদের জন্য ভালো। কারণ আমাদের এখানে এটা কিন্তু একটা কনজেস্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই এই বিষয়গুলোতে আমাদের একটু লক্ষ্য রাখা দরকার। মানবিক কারণে হয়তো এরা ঢুকছে, বাংলাদেশের সরকারও এটা সফ্টলি দেখছে। তবে সবকিছু মিলিয়েই আমি মনে করি যে এটা বন্ধ করা উচিৎ।’

অতীতের রাজনৈতিক সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ব্যর্থ হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনুস বিশ্বব্যাপী পরিচিতি ও তার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মো. মাইমুল আহসান খান বলেন, ‘এই লোকগুলো যাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এই লোকদের প্রতি আসবে এবং আমাদের কাছে যে সাহায্যটুকু আসতো, সেই সাহায্যটা আমাদের মাধ্যমেই তাদের কাছে যাবে। আমি চাইবো যে এটা একটা বাফার স্টেট হিসেবে কাজ করুক, তাহলে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবো।’

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে কয়েক ধাপে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সম্প্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করে দেশটির সরকার। যদিও গত সাড়ে ৭ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি দেশটি।