ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এবার তার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল (বুধবার, ৭ মে) দুদকের পক্ষ থেকে তার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা ও গুলশান-২ এর বাসার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে তলবি নোটিশ।
যদিও ভিন্ন একটি মামলার তদন্তে তার বক্তব্য জানতে তলব করা হয়েছে। ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে ফ্ল্যাট নেয়ার অভিযোগের তদন্তে আসামি হিসেবে আগামী বুধবার (১৪ মে) সকাল ১০টায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, একই মামলায় রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশাররফ হোসেনকেও ওই দিন হাজির হওয়ার জন্য পৃথক নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে, বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজের নামে বিপুল অর্থ লুটপাটের অভিযোগে শেখ হাসিনাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৮ মে দুদকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গুলশানের একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেয়ার অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল টিউলিপ সিদ্দিকসহ রাজউকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সংস্থাটি। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান ও সর্দার মোশারফ হোসেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৬৩ সালে বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরী গুলশানে ১ বিঘা ১৯ কাঠা ১৩ ছটাক আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ পান। সরকারি ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, ৯৯ বছরের মধ্যে প্লটটির হস্তান্তর বা ভাগ করে বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। তবে ১৯৭৩ সালে তিনি মো. মজিবুর রহমান ভূঁইয়াকে আমমোক্তারনামা দেন। পরবর্তীতে প্লটটি ভাগ হয়ে বিক্রি হয় এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের মাধ্যমে সেখানে ভবন নির্মাণ শুরু হয়।
জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার সন্তানদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে মামলা হয়। মামলার চলমান অবস্থায় এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও রাজউকের সংশ্লিষ্ট আইন উপদেষ্টারা ইস্টার্ন হাউজিংকে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের অনুমোদন দেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ ছিল। কারণ ওই কোম্পানিটি প্লটের লিজ হোল্ডার বা বৈধ প্রতিনিধি ছিল না। রাজউকের নথি অনুযায়ী, ৯৯ বছরের ইজারার শর্তে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে প্লট হস্তান্তরের কোনো সুযোগ ছিল না। তবুও ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার করে প্লটটি ভাগ করে ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ ও হস্তান্তরের অনুমোদন দেয়া হয় বলে উল্লেখ রয়েছে মামলার এজহারে।
এতে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে ‘অবৈধভাবে’ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হয় এবং এর বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ‘অবৈধ পারিতোষিক’ হিসেবে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ‘বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট’ গ্রহণ করেন। এতে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে ইস্টার্ন হাউজিংকে আমমোক্তার অনুমোদন এবং ফ্ল্যাট বিক্রয়ের অনুমোদন করিয়ে অবৈধ সুবিধা নেয়ার ও নিজে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট গ্রহণের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে বলে এজাহারে দাবি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির একাধিক ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি সাত সদস্যের টিম ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিভিন্ন অভিযোগের অনুসন্ধান করছে।
এর আগে পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির একটি মামলায় টিউলিপ সিদ্দিককে আসামি করা হয়েছিল এবং ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছিল আদালত। গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেয়ার প্রমাণ পাওয়ায় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
ওই মামলাগুলো আমলে নিয়েই মূলত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ছয়টি মামলার মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিক প্লট না নিয়েও আসামি হয়েছেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয় যে টিউলিপ তার খালা শেখ হাসিনাকে ‘চাপ’ প্রয়োগ করেছিলেন।