ঢাকা ০৪:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: মোদির সন্তুষ্টি, ফুঁসছেন শেহবাজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • / ৩৪০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতকে পাকিস্তানে হামলার পরিণাম ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। পার্লামেন্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শত্রুদের কড়া জবাব দেয়া হয়েছে। এসময় পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছেন তিনি। এদিকে অপারেশন সিঁন্দুরকে ভারতের গর্ব বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হামলায় পাকিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। পাল্টা হামলায় ভারতে নিহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।

দুই দশকেরও বেশি সময় পর ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত ভারত-পাকিস্তান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে আসছে অপারেশন সিঁন্দুর নামে রাতের আঁধারে চালানো হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।

সন্ত্রাসী আস্তানা টার্গেটের দাবি করলেও, আদতে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মুরিদকে শহরের মসজিদসহ বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনায় কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে সেই কথা তুলে ধরেছেন স্থানীয়রা। বেসামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করায় নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের সরকারও।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রথমে একটি ড্রোন দেখতে পাই, পরে মসজিদটির উপরে আরও তিনটি ড্রোন এসে হাজির হয়। তা দিয়ে মসজিদে আক্রমণ করা হচ্ছিলো। সরাসরি আঘাত হানায় ছাদ ধ্বংস হয়ে যায়। সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ছাদে কর্তব্যরত একজন ব্যক্তি ছিলেন, তিনি শহীদ হয়েছেন।’

অন্য একজন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার সময় মানুষ মাঠে ও খোলা জায়গায় বেরিয়ে পড়েছিল। রাত কেটে গেলেও অনেক ভয় ও আতঙ্ক মানুষকে তাড়া করছে।’

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল (বুধবার, ৭ মে) পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন ডাকে পাকিস্তান। রাতের অন্ধকারকে আক্রমণের সময় বেছে নেয়ায় ভারতকে কাপুরুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন পিপলস পার্টির চেয়ারপারসন বিলাওয়াল ভুট্টো।

তিনি বলেন, ‘যদি তাদের সাহস থাকত, তাহলে তারা দিনের বেলায় যুদ্ধ ঘোষণা করতো। তারা আমাদের সৈন্যদের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকত। কিন্তু তারা রাতের অন্ধকারে শিশুদের উপরও আক্রমণ চালিয়েছে। এ ঘটনায় শুধু পাকিস্তান নয়, সমগ্র বিশ্ব নিন্দা করছে।’

পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন থেকে ভারতের আক্রমণের পর পাক সামরিক বাহিনীকে হামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান তার নিজস্ব সময়, স্থান ও পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রাখে বলেও উল্লেখ করেন সংসদ সদস্যরা। এসময় সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। নিশ্চিত করেন পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার বিষয়ও।

শেহবাজ শরীফ বলেন, ‘শত্রুরা গতরাতে নিন্দনীয় হামলা চালিয়েছে। সাথে সাথেই ভারতের এ হামলার পাল্টা জবাব দিয়ে আক্রমণের রাতটিকে চাঁদ রাতে রূপ দিয়েছে পাকিস্তান।’

অন্যদিকে পাকিস্তান বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির দাবি করলেও অস্বীকার করছে ভারত। অপারেশন সিন্দুরকে ভারতের গর্ব হিসেবেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি ভারতের সশস্ত্র বাহিনী নির্ভুলভাবে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলে দাবি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা সঠিক সময়ে নির্ভুলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বেসামরিক জনগোষ্ঠী যাতে কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে। আমরা কেবল তাদেরই হত্যা করেছি যারা আমাদের নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে।’

যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানকে সতর্ক করে বার্তা দিলো আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। তাদের দাবি, দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সীমান্তে কামানের গোলা বিনিময়ের পর উত্তেজনা আরও বাড়ানো আঞ্চলিক স্বার্থের পরিপন্থি। উভয় দেশকেই সংযম হওয়ার আহ্বান জানালো আফগানিস্তানসহ বিশ্বনেতারা।

জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থানে হামলা চালায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

নিউজটি শেয়ার করুন

ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: মোদির সন্তুষ্টি, ফুঁসছেন শেহবাজ

আপডেট সময় : ১২:০৬:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

ভারতকে পাকিস্তানে হামলার পরিণাম ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। পার্লামেন্ট জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শত্রুদের কড়া জবাব দেয়া হয়েছে। এসময় পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছেন তিনি। এদিকে অপারেশন সিঁন্দুরকে ভারতের গর্ব বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। হামলায় পাকিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। পাল্টা হামলায় ভারতে নিহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।

দুই দশকেরও বেশি সময় পর ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত ভারত-পাকিস্তান। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে উঠে আসছে অপারেশন সিঁন্দুর নামে রাতের আঁধারে চালানো হামলায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র।

সন্ত্রাসী আস্তানা টার্গেটের দাবি করলেও, আদতে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মুরিদকে শহরের মসজিদসহ বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনায় কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে সেই কথা তুলে ধরেছেন স্থানীয়রা। বেসামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করায় নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের সরকারও।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘প্রথমে একটি ড্রোন দেখতে পাই, পরে মসজিদটির উপরে আরও তিনটি ড্রোন এসে হাজির হয়। তা দিয়ে মসজিদে আক্রমণ করা হচ্ছিলো। সরাসরি আঘাত হানায় ছাদ ধ্বংস হয়ে যায়। সবকিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ছাদে কর্তব্যরত একজন ব্যক্তি ছিলেন, তিনি শহীদ হয়েছেন।’

অন্য একজন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার সময় মানুষ মাঠে ও খোলা জায়গায় বেরিয়ে পড়েছিল। রাত কেটে গেলেও অনেক ভয় ও আতঙ্ক মানুষকে তাড়া করছে।’

যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল (বুধবার, ৭ মে) পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন ডাকে পাকিস্তান। রাতের অন্ধকারকে আক্রমণের সময় বেছে নেয়ায় ভারতকে কাপুরুষ বলে আখ্যা দিয়েছেন পিপলস পার্টির চেয়ারপারসন বিলাওয়াল ভুট্টো।

তিনি বলেন, ‘যদি তাদের সাহস থাকত, তাহলে তারা দিনের বেলায় যুদ্ধ ঘোষণা করতো। তারা আমাদের সৈন্যদের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকত। কিন্তু তারা রাতের অন্ধকারে শিশুদের উপরও আক্রমণ চালিয়েছে। এ ঘটনায় শুধু পাকিস্তান নয়, সমগ্র বিশ্ব নিন্দা করছে।’

পার্লামেন্টে জরুরি অধিবেশন থেকে ভারতের আক্রমণের পর পাক সামরিক বাহিনীকে হামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাকিস্তান তার নিজস্ব সময়, স্থান ও পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রাখে বলেও উল্লেখ করেন সংসদ সদস্যরা। এসময় সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। নিশ্চিত করেন পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও দুটি ড্রোন ভূপাতিত করার বিষয়ও।

শেহবাজ শরীফ বলেন, ‘শত্রুরা গতরাতে নিন্দনীয় হামলা চালিয়েছে। সাথে সাথেই ভারতের এ হামলার পাল্টা জবাব দিয়ে আক্রমণের রাতটিকে চাঁদ রাতে রূপ দিয়েছে পাকিস্তান।’

অন্যদিকে পাকিস্তান বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির দাবি করলেও অস্বীকার করছে ভারত। অপারেশন সিন্দুরকে ভারতের গর্ব হিসেবেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি ভারতের সশস্ত্র বাহিনী নির্ভুলভাবে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলে দাবি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা সঠিক সময়ে নির্ভুলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। বেসামরিক জনগোষ্ঠী যাতে কোনোভাবেই প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে। আমরা কেবল তাদেরই হত্যা করেছি যারা আমাদের নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে।’

যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানকে সতর্ক করে বার্তা দিলো আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। তাদের দাবি, দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সীমান্তে কামানের গোলা বিনিময়ের পর উত্তেজনা আরও বাড়ানো আঞ্চলিক স্বার্থের পরিপন্থি। উভয় দেশকেই সংযম হওয়ার আহ্বান জানালো আফগানিস্তানসহ বিশ্বনেতারা।

জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত নয়টি স্থানে হামলা চালায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী।