চড়া সবজির বাজার, বেড়েছে ডিম-মুরগির দাম

- আপডেট সময় : ০১:২৫:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫
- / ৩৪৪ বার পড়া হয়েছে

বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন চাল। তবুও চালের দাম খুব একটা কমেনি। এদিকে গত রমজানের পর থেকেই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। এ অবস্থায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে সস্তার ডিম-মুরগিতে। বাড়তে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম।
শুক্রবার (৯ মে) সকালে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ফার্মগেট এলাকার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারগুলোতে দেখা যায়, চিকন চাল ৮০ থেকে ধরনভেদে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ বাজার ও ধরনভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে। এর মধ্যে স্বর্ণার কেজি ৫৫ টাকা আর গুটিসহ অন্যান্য মোটা চাল সর্বোচ্চ ৫৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বেশ কিছুদিন ধরেই চাল এ দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের কেজি ৬০ থেকে ধরনভেদে ৬৫ টাকা। তবে তুলনামূলক কিছুটা কম মানের পেঁয়াজ ৫০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। দেশি ছোট্ট রসুনের কেজি ১৪০ টাকা, আমদানি করা বড় রসুনের কেজি ২৪০ টাকা টাকা, আদার কেজি বাজার ও ধরনভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত মিলছে। চিকন মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১২০ টাকা, আমদানি করা মুগডাল ১৪০ টাকা এবং দেশি মুগডাল ১৬০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।
সবজির মধ্যে বড় বেগুনের কেজি ১০০ টাকা, মাঝারি ধরনের বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ৮০ টাকা কেজি, ধুন্ধল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ঢেড়স ৬০ টাকা কেজি দরে মিলছে। করল্লা বাজারভেদে কেজি ৬০ থকে ৭০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৭০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
পটলের কেজি ৫০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ২৫০ গ্রামের ফুলকপি ৬০ টাকা, আলুর কেজি ২০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা এবং কলার হালি ৪০ থেকে ধরনভেদে ৫০ টাকায় মিলছে বাজারে। লাল শাকের মুঠি ১৫ টাকা, মুলা শাক ৩০ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা, কলমি লতা ১৫ টাকা, পাট শাক ১৫ টাকা এবং কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ টাকায় মিলছে।
বাজারে ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি হালি ডিমের দাম ৪৫ টাকা, ডজন ১৩৫ টাকা। মিরপুর-২ বাজারের ডিম বিক্রেতা আমিরুল বলেন, আজ ডিমের দাম কিছুটা বেশি; কেন বেশি জানি না! মোকামে বাড়তি দাম নিয়েছে, আমিও বেশি দামে বিক্রি করছি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত। আর ব্রয়লার মুরগির কেজিতে দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। দাম বৃদ্ধির ফলে প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম ১৩০ থেকে বেড়ে ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ১৮০ টাকা। বাজারভেদে এ মুরগি ১৮৫ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
অবশ্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, গত বছর এ সময়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম উঠেছিল ২১০ টাকায়।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানেই ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে। চড়া সবজির দামের কারণে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে ডিমের। যে কারণে দাম বাড়তে শুরু করেছে।
ভোক্তারা বলছেন, সস্তা প্রোটিনের উৎস হিসেবে পরিচিত ডিম ও মুরগির দাম বাড়লে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর এর চাপ তৈরি হয়। তার ওপর যখন বাজারে সবজি, চাল সবকিছুই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বাজারে শ্রমজীবী মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। কম আয়ের মানুষকে পাঙ্গাস, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া, রুই ও কাতলের মাছের দোকান ভিড় করতে দেখা যায়। বড় পাঙ্গাস কেটে ভাগ করে নিচ্ছিলেন অনেকে।
আছিমন আরা এমন একজন। স্বামীর সঙ্গে মিরপুর-১৪ নম্বরে ব্যাটালিয়ান বাজারে এসেছেন। দুজনেরই আজ সাপ্তাহিক ছুটি। স্বামী একটি বড় পাঙ্গাস কেটে নেওয়ার জন্য দরদাম করছেন, আছিমন পাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন।
দাম নিয়ে খুশি না হলেও করার কিছু নেই। তাই সাধ্যের মধ্যে মাছ কেনার চেষ্টা আছিয়া দম্পতির। আছিয়া বলেন, ‘আমরা কি বেশি দামের মাছ কিনতে পারি? বেতনের পরপর হলে দামি মাছ বা মাংস কেনা হয়। এখন কম দামেরই মাছ কিনি। ’
এদিকে বাজারে ভোজ্যতেলের লিটার ১৯০ টাকা। বাজারে এখন সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে যথেষ্ট।
গরুর মাংস ৭৫০ থেকে বাজারভেদে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস ১২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের মাংস বাজারভেদে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (৯ মে) সকালে রাজধানীর রামপুরা-মালিবাগ এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
বাজারে কিছু দেশি মাছের দাম তুলনামূলক আরও বেশি। যেমন, বোয়াল বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং দেশি শিং ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে জাতীয় মাছ ইলিশের দাম সবসময়ই চড়া থাকে। আজকের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২৫০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর রামপুরা-মালিবাগ বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, মাংস, মুরগি, ডিম, সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম ওঠানামা করে, কিন্তু ব্যতীক্রম শুধু মাছের বাজার। মাছের দাম দীর্ঘদিন ধরেই কমছে না। আজকেও বাজারে সব ধরনের মাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষ মাছ কিনে খেতে পারছে না।
এদিকে মাছের দাম বাড়ার বিষয়ে রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, আসলে মাছের দাম একটু বেশি গেছে ঠিকই, তবে এর পেছনে কারণও আছে। ফিড বা খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই উৎপাদন খরচ বাড়ছে। চাষিরা বেশি দামে মাছ তুলছে, পাইকারিরাও দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। আমাদের হাতে তেমন কিছু থাকে না।
রাজধানীর বাজারে আম ও লিচু আসা শুরু করেছে। দুয়েকটি কাঁঠালও চোখে পড়লো। আগে বাজারে আসে সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ আম। প্রতি কেজি গোবিন্দভোগ ১২০ থেকে ধরনভেদে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুয়েকটি বাজারে গোপালভোগও আসা শুরু করেছে। গোপালভোগের কেজি ১২০ টাকা এবং হিম সাগরের কেজি ১৫০ টাকায় মিলছে।
প্রতি একশ’ লিচুর দাম ৪০০ থেকে ধরনভেদে ৬০০ টাকা, তিন কেজি ওজনের পাকা কাঁঠাল ২৫০ টাকা এবং তরমুজ ৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে।