ঢাকা ০৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

স্থান একই শুধু বদলে গেছে দাবি ও আন্দোলনকারী

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৪৩:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

স্থান একই আছে শুধু বদলে গেছে দাবি ও আন্দোলনকারীরা। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চ। বিতর্কিত মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে স্লোগান তোলা হয়। ২০২৫ সালে এসে বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। আজ সেই একই জায়গায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজপথে নেমেছে জামায়াত-শিবিরসহ জুলাই বিপ্লবের প্রেরণাকে ধারণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ।

২০১৩ সালে কিছু ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট গণজাগরণ মঞ্চ নামে বিরোধীমত দমনের মঞ্চ বসান শাহবাগে। সমাবেশে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের উপায় হিসেবে আন্দোলনকারীরা বেছে নিয়েছিলেন স্লোগান, গান, কবিতা, নাটক। যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে পোড়ানো হয় জামায়াত নেতাদের কুশপুত্তলিকা। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল— কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ও জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কট করা।

তবে ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর হাসিনা সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের অবসানের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সেই শাহবাগেই জামায়াত-শিবির আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঝড় তুলছে। শুধু জামায়াত-শিবির নয়; জুলাই বিপ্লবের প্রেরণাকে ধারণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষও কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে স্লোগান তুলছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের।

গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত থেকে এনসিপি নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। শুক্রবার সকালে সেখান থেকে শাহবাগে মিছিল নিয়ে এসে অবস্থান নেন হাজারো মানুষ। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে মূল সড়কে বসে পড়ে শুরু হয় ‘শাহবাগ ব্লকেড’। আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

শাহবাগ ঘুরে দেখা যায়, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির। এই আন্দোলনে বিএনপি ছাড়া প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই সমর্থন জানিয়ে অংশ নিয়েছে। তবে জামায়াত-শিবির নেতাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

এদিন রাত ১১টার দিকে শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহ নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সে সময় তিনি বলেন, আজকে আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি ২৫ ঘণ্টা হয়েছে। গতকাল রাত ১০টা থেকে আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি। আমরা জানি না এই কর্মসূচির শেষ কোথায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তিন দফা দাবি দিয়েছি। তিন দফার মধ্যে প্রথম দফা হচ্ছে—আওয়ামী লীগের যত সহযোগী সংগঠন রয়েছে, সব সংগঠনসহ আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমাদের দ্বিতীয় দফা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে এবং তৃতীয় দাবি জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।

তিনি বলেন, এই তিন দফা দাবি যতক্ষণ না পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই মাঠ ছাড়বো না।

এদিকে শুক্রবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে হাসনাত লিখেছেন, শাহবাগ ছাড়া ঢাকা বা সারাদেশের হাইওয়েগুলোতে ব্লকেড দেবেন না। জেলাগুলোতে স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত করুন, সমাবেশ করুন। কিন্তু ব্লকেড না, ব্লকেড খুলে দিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

স্থান একই শুধু বদলে গেছে দাবি ও আন্দোলনকারী

আপডেট সময় : ০১:৪৩:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

স্থান একই আছে শুধু বদলে গেছে দাবি ও আন্দোলনকারীরা। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চ। বিতর্কিত মামলায় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে স্লোগান তোলা হয়। ২০২৫ সালে এসে বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। আজ সেই একই জায়গায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজপথে নেমেছে জামায়াত-শিবিরসহ জুলাই বিপ্লবের প্রেরণাকে ধারণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ।

২০১৩ সালে কিছু ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্ট গণজাগরণ মঞ্চ নামে বিরোধীমত দমনের মঞ্চ বসান শাহবাগে। সমাবেশে বিক্ষোভ ও আন্দোলনের উপায় হিসেবে আন্দোলনকারীরা বেছে নিয়েছিলেন স্লোগান, গান, কবিতা, নাটক। যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে পোড়ানো হয় জামায়াত নেতাদের কুশপুত্তলিকা। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল— কাদের মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ও জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বয়কট করা।

তবে ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর হাসিনা সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়নের অবসানের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। সেই শাহবাগেই জামায়াত-শিবির আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঝড় তুলছে। শুধু জামায়াত-শিবির নয়; জুলাই বিপ্লবের প্রেরণাকে ধারণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষও কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে স্লোগান তুলছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের।

গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত থেকে এনসিপি নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। শুক্রবার সকালে সেখান থেকে শাহবাগে মিছিল নিয়ে এসে অবস্থান নেন হাজারো মানুষ। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে মূল সড়কে বসে পড়ে শুরু হয় ‘শাহবাগ ব্লকেড’। আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

শাহবাগ ঘুরে দেখা যায়, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির। এই আন্দোলনে বিএনপি ছাড়া প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই সমর্থন জানিয়ে অংশ নিয়েছে। তবে জামায়াত-শিবির নেতাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

এদিন রাত ১১টার দিকে শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহ নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সে সময় তিনি বলেন, আজকে আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি ২৫ ঘণ্টা হয়েছে। গতকাল রাত ১০টা থেকে আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছি। আমরা জানি না এই কর্মসূচির শেষ কোথায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তিন দফা দাবি দিয়েছি। তিন দফার মধ্যে প্রথম দফা হচ্ছে—আওয়ামী লীগের যত সহযোগী সংগঠন রয়েছে, সব সংগঠনসহ আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমাদের দ্বিতীয় দফা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে এবং তৃতীয় দাবি জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।

তিনি বলেন, এই তিন দফা দাবি যতক্ষণ না পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই মাঠ ছাড়বো না।

এদিকে শুক্রবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে হাসনাত লিখেছেন, শাহবাগ ছাড়া ঢাকা বা সারাদেশের হাইওয়েগুলোতে ব্লকেড দেবেন না। জেলাগুলোতে স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত করুন, সমাবেশ করুন। কিন্তু ব্লকেড না, ব্লকেড খুলে দিন।