সহযোগিতা-সহমর্মিতা সহজ করে একক মাতৃত্বের সংগ্রাম

- আপডেট সময় : ১১:৩৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / ৩৪০ বার পড়া হয়েছে

সন্তানের যত্ন থেকে ভরণপোষণ, সঙ্গে পরিবার সামলানোর চাপ, যাপিত জীবনের নিত্যদিনকার প্রতিবন্ধকতা, একাই সব বহন করতে হয় সিঙ্গেল মাদারকে। একক মাতৃত্বের চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে অনেকেই ভোগেন মানসিক চাপে। আবার সামাজিক নানা বাঁধার জালে মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগও পান না এই মায়েরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন আর সহযোগিতায় একক মাতৃত্বের সংগ্রাম সহজ করে তোলা সম্ভব।
বনানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা কল্পনা খাতুন। সকাল সকাল তোড়জোড় দ্রুত কাজে যাওয়ার। ৬ সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়েটাকে সাথে নিয়েই যেতে হয় কাজে কারণ মা ছাড়া তাকে দেখার কেউ নেই! স্বামী চার বছর আগে মারা গেলেও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে নতুন সংসারে জড়াননি কল্পনা খাতুন।
কল্পনা খাতুন বলেন, ‘মেয়েরে রেখে যে কাজ করতে যাবো এতে আমার ভয় করে অনেক। মেয়েরে নিয়ে কাজে গেলে অনেকে পছন্দ করে না। কষ্ট হলেও সন্তানদের মানুষ করতে হবে।’
ফুল বিক্রেতা আসমা বেগমের লড়াইয়ের গল্পটার দিকে এবার কানপাতা যাক। স্বামী একাধিক বিয়ে এবং নেশায় আসক্ত থাকায় সংসার ভেঙেছে অনেক আগে। ফুল তার নিত্যদিনকার সঙ্গী। তার দোকানের ফুলই অনেকের খোঁপায় বা খুশির খোরাক হলেও এই মায়ের জীবন যেন কাঁটায় ভরা। প্রতিবন্ধী সন্তানসহ ৬ সন্তানকে নিয়ে বছরের পর বছর টেনে নিচ্ছেন এই দীর্ঘ পথ।
ফুল বিক্রেতা আসমা বেগম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মেয়ে আমার। ছোট থেকেই এমন। কারো কাছে হাত পেতে কিছু পায়নি। অনেক কষ্ট করেছি মেয়েরে নিয়ে।’
এবার লড়াইয়ের গল্প শুনবো একজন ব্যাংকার মায়ের। ঘরের দেয়ালজুড়ে মা মেয়ের গল্প। মা সামিয়া একজন ব্যাংকার তাই অফিস শেষে যতটা পারা যায় মেয়ে ইয়াসরার সঙ্গে থাকা।
পাঁচ বছর আগে স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর থেকে মেয়েকে বড় করতে নিজের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সামিয়া। এই লড়াই সিঙ্গেল মায়ের জন্য কি আরো বেশি? প্রশ্ন ছিল তার কাছে।
মা সামিয়া বলেন, ‘যখন একটা মেয়ে মা হয়ে যায় তখন তার ভিতর অন্যরকম পাওয়ার কাজ করে। আমরা তো মানুষ। দিনশেষে মনে হয় আমরা পারছি না। এই মনে হয় শেষ হয়ে গেল। যখন আমার বাচ্চাকে দেখি বা বাচ্চা এসে আমাকে হাগ দেই তখন ওইগুলো কিছু না। আমার বাচ্চাই সব।’
একক মাতৃত্বে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আর্থিক বিষয় বলছেন আইনজীবীরা। পরিবারের অসহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক সংকটে অনেকসময় আইনি লড়াই এড়িয়ে যায় অনেক মা।
আইনজীবী রাশেদা চৌধুরী নিলু বলেন, ‘অনেক সময় কেউ যদি তার অধিকারে বঞ্চিত হয় তখন দেখা যায় সামাজিকভাবে আত্মসম্মানবোধ থেকে আদালতে দারস্থ হয় না। একজন মা আইনের অবস্থার দিক দিয়ে ভীষণ শক্ত। এখানে শুধু প্রয়োজন প্রয়োগ, জানা ও সেটা প্রয়োগ করার মতো সাহস।’
একক মাতৃত্বের কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক স্বীকৃতি, মানসিক দৃঢ়তা এবং পরিবারের সহায়তা একজন সিঙ্গেল মাদারকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সমাজ বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘মানসিক চাপ দেয়া সিঙ্গেল মাদারকে। তাদের যাপিত জীবনকে বার বার বাধাগ্রস্ত করা। নানান রকম কু-কথা বলে মাকে পিছিয়ে দেয়া। এইগুলা থেকে যতদিন সমাজ বের হতে পারবে না ততদিন সিঙ্গেল মাদারকে এই সমাজ সুন্দর জীবন দিতে পারবে না।’
মায়ের জন্য প্রয়োজন আলাদা যত্ন। সিঙ্গেল মায়েদের ক্ষেত্রে তা আরো জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের তাগিদ তাদের।