সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া কাশ্মীরে নিরাপত্তার শঙ্কা

- আপডেট সময় : ১২:২১:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / ৩৫০ বার পড়া হয়েছে

ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত বহু পুরোনো। দুই দেশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই ভূখণ্ডটি নিজেদের দাবি করে আসছে। সম্প্রতি পেহেলগামে ২৬ পর্যটক হত্যাকাণ্ডের জেরে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই দেশ। ভারত ও পাকিস্তানের পানির প্রধান উৎস নৈসর্গিক পাহাড়ি অঞ্চল কাশ্মীর। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া এই উপত্যকার নিরাপত্তা শঙ্কার মুখে পড়তে পারে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, ভারত বা পাকিস্তান যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেয়ার স্বাধীনতা ছিল কাশ্মীরের। তবে আদিবাসীদের আক্রমণের মুখে কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং সহায়তার বিনিময়ে ভারতের সঙ্গে যোগ দিতে সম্মত হন। ১৯৪৯ সালে কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, দুই দেশই সেনা প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানায়। কার্যত তখন থেকেই ভারতের জম্মু-কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীর নামে দুই অংশে ভাগ হয়।
পুরো কাশ্মীর ভূখণ্ড নিজেদের দাবি করলেও, কিছু অংশে কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে ভারত ও পাকিস্তান। সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়ায় দুই দেশ। কাশ্মীরে জঙ্গিদের মদদ দেয়ার অভিযোগ এনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয় ভারত।
কাশ্মীরের বড় একটি অংশ ভারতের শাসনে থাকতে রাজি না। বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা এবং কাশ্মীরি জনগণ পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিও জানায়। কাশ্মীরই ভারতের একমাত্র অঞ্চল যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। জম্মু-কাশ্মীরের ৭০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই মুসলিম। যেখানে উচ্চ বেকারত্বের পাশাপাশি বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ লেগেই আছে। সেনাবাহিনীর উপস্থিতিকেও মানতে নারাজ কাশ্মীরবাসী। এমন অবস্থায় ২০১৯ সালে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় নয়াদিল্লি।
লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরের এই অঞ্চল স্বাধীন হতে পারেনি। তাদের বাধ্য হয়ে দুই দেশের অংশ মেনে নিতে হয়েছে। কাশ্মীরের অনেক বাসিন্দা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি মেনে নিতে রাজি না। তবে কাশ্মীরের নিরাপত্তা কীভাবে টিকে থাকবে সেটি একটি প্রশ্ন।’
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে লাইন অব কন্ট্রোল দিয়ে বিভক্ত কাশ্মীর। এই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশই বহুবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় এসে কাশ্মীর ইস্যুতে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানকে। এর ঠিক এক বছর পরই পাঞ্জাবের পাঠানকোটে ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে হামলার দায় পাকিস্তানের ঘাড়ে চাপায় ভারত। ভেস্তে যায় দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা।
আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘দুই দেশের দমন-পীড়ন ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে অস্থিরতায় আছেন কাশ্মীরবাসী। তারা মর্যাদা নিয়ে ভয় ছাড়া এবং উভয় পক্ষের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ছাড়া বাঁচতে চায়। সীমান্তের উভয় পাশেই সেনাবাহিনী আছে।’
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের জন্য পানির অন্যতম উৎস কাশ্মীর উপত্যকা। বেশিরভাগ নদীগুলোর উৎস সেখান থেকে আসে। সিন্ধু চুক্তির আওতায় ৬টি নদী সমানভাগে ভাগ করে দেয়া হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। তবে ভারতের নদীগুলোর উজানে আর পাকিস্তানের নদীগুলো ভাটিতে। পাকিস্তানের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় নদীগুলোর পানিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে ভারত।