মানবিক করিডোর নিয়ে অন্ধকারে রেখেছে সরকার: বিএনপি

- আপডেট সময় : ১০:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
- / ৩৪৪ বার পড়া হয়েছে

মানবিক করিডোর নিয়ে জনগণকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী করিডোরের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, বাংলাদেশ কি যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে?
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলাদা দুটি অনুষ্ঠানে তারা মানবিক করিডোরের বিষয়ে কথা বলেন।
গত সোমবার টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ ধরার সময় দুই বাংলাদেশি জেলেকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ সময় তিন জেলেকে ধরেও নিয়ে যায় তারা। এ সব ঘটনায় উদ্বিগ্ন দেশের মানুষ। এ অবস্থায় নানা প্রশ্ন উঠেছে মানবিক করিডোর নিয়েও।
মানবিক করিডোর নিয়ে জনগণের মতামত নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছে বিএনপি। মানবিক করিডোর নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা কি নতুন কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? এ নিয়ে তো রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসে সরকারের আলাপ আলোচনা করা উচিৎ ছিল। কিন্তু দেখি যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক কথা বলেন, প্রেস সচিব অন্য এক কথা বলেন। আরেক উপদেষ্টা বলেছেন, না আমরা এখন পর্যন্ত এই করিডোরের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো মতামত দেই নি। জনগণ অন্ধকারে আছে।’
এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণ সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশকে গাজায় পরিণত করার পাঁয়তারা চলছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘মানবিক করিডোরের অর্থটা কি? এটা কার সাথে আলাপ হয়েছে? একটি অনির্বাচিত সরকার তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তারা কথা বলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি জানে না, সিভিল সোসাইটির কেউ জানে না। এটা কার এজেন্ডা? বাংলাদেশকে কি আমরা আবার একটি গাজায় পরিণত করতে চাই? আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা ঠেলে নিয়ে যেতে চাচ্ছি?’
দেশে নির্বাচিত সরকার থাকলে মানবিক করিডোর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র সংঘাত চলছে। প্রদেশটির অধিকাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকান আর্মির কাছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সীমান্ত তাও নিয়ন্ত্রণ করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
গত মার্চে বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাখাইনে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা চান। এর অংশ হিসেবে একটি মানবিক প্যাসেজ তৈরির প্রস্তাবও দেন তিনি।
এর মধ্যে গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের প্রস্তাবে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বাংলাদেশ।
অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ রাজনৈতিক নেতারা।
অবশ্য সমালোচনার মুখে পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, রাখাইনে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয় নি সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এরমধ্যে গত ৪ মে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানান, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তা করিডোর জন্য আমরা আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম। জাতিসংঘ এটি পরিচালনা করবে, এর মাধ্যমে ত্রাণ যাবে, খাদ্য যাবে, অস্ত্র নয়। এই যোগাযোগ রাখাইনে নিরাপদ পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে।’