ঢাকা ০৩:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পুলিশের মারণাস্ত্র প্রত্যাহার: প্রশ্ন তুলেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৩৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • / ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পুলিশের হাতের মারণাস্ত্র উঠিয়ে নিলে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হতে পারে; যেকোনো অভিযানে পুলিশেরই হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলেন, অস্ত্র প্রত্যাহার নয়; বরং বাহিনীটিকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করার মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।

চায়নিজ রাইফেল, সাব মেশিনগান ও ৯ এমএমের মতো পিস্তল পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। যার বড় ব্যবহার হয় গত বছরের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে।

ছাত্র জনতার অভুত্থ্যানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন মহলে দাবি উঠে পুলিশের হাত থেকে মারণাস্ত্র তুলে নেয়ার। ফেব্রুয়ারিতে হওয়া ডিসি সম্মেলনেও একাধিক প্রশাসক পুলিশের হাত থেকে এসব মরণঘাতী অস্ত্র তুলে নেয়ার পক্ষে মত দেন।

এমন প্রেক্ষিতে গত সোমবার (১২ মে) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মরণঘাতী এসব অস্ত্র আর থাকছে না পুলিশের হাতে।

প্রায় ২ লাখের মতো এ বাহিনীটি জনগণের কাছাকাছি থেকে কাজ করেন। যাদের উদ্দেশ্য শুধু সেবা দেয়াই নয়, অপরাধ কিংবা সন্ত্রাস দমনের মতো বড় কাজ। এর জন্য তাদের হাতে থাকতে হয় আধুনিক সব অস্ত্র।

উপমহাদেশে যেখানে বড় সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দেয়ার ঘটনা আছে, সেখানে বাংলাদেশ এসব অস্ত্র তুলে দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যাবে কতটা- এমন প্রশ্ন ছিল পুলিশের সাবেক আইজিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদার বলেন, ‘পুলিশের হাতে কী অস্ত্র থাকবে। সেটাতো পরিষ্কার করতে হবে। কারণ অস্ত্র ছাড়া, শক্তি প্রয়োগ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বা অপরাধের সঠিক তদন্ত করা সম্ভব না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যাদের কাছে মরণঘাতী এসব অস্ত্র আছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কী লাঠি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবে? সেটি তো হবে না। এই সিদ্ধান্তে আসতে গেলে রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে দেশের কারো কাছে অস্ত্র থাকবে না।’

রাজনৈতিক দলগুলোর এই বাহিনীটিকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করার মানসিক পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, অতি উৎসাহী পুলিশের চেয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই হত্যাকাণ্ড বাড়ে পুলিশের হাতে। তাই মারণাস্ত্র রাখা যেতে পারে, তবে এর অনৈতিক ব্যবহার যেন কেউ না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘নির্দেশের জায়গা থেকে পুলিশের মধ্যে থেকে কেউ রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে এই ধরনের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো নির্দেশ দিতে না পারে।’

সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদার বলেন, যারা এইসব দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবেন যেসব কর্মকর্তা যারা মাঠ পর্যায়ে নিশ্চিত করবে অস্ত্রের যেন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার না হয়। অপ্রয়োগ যেন না হয়। যেটা ৫ আগস্টের আগে বিগত ১৫ বছর দেখেছি।

এপিবিএনের সংখ্যা খুবই কম, যাদের হাতে মারণাস্ত্র থাকলেও সেটার সুফল পুলিশের মতো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কাজ করবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

পুলিশের মারণাস্ত্র প্রত্যাহার: প্রশ্ন তুলেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা

আপডেট সময় : ১২:৩৭:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

পুলিশের হাতের মারণাস্ত্র উঠিয়ে নিলে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হতে পারে; যেকোনো অভিযানে পুলিশেরই হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলেন, অস্ত্র প্রত্যাহার নয়; বরং বাহিনীটিকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করার মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।

চায়নিজ রাইফেল, সাব মেশিনগান ও ৯ এমএমের মতো পিস্তল পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। যার বড় ব্যবহার হয় গত বছরের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে।

ছাত্র জনতার অভুত্থ্যানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন মহলে দাবি উঠে পুলিশের হাত থেকে মারণাস্ত্র তুলে নেয়ার। ফেব্রুয়ারিতে হওয়া ডিসি সম্মেলনেও একাধিক প্রশাসক পুলিশের হাত থেকে এসব মরণঘাতী অস্ত্র তুলে নেয়ার পক্ষে মত দেন।

এমন প্রেক্ষিতে গত সোমবার (১২ মে) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মরণঘাতী এসব অস্ত্র আর থাকছে না পুলিশের হাতে।

প্রায় ২ লাখের মতো এ বাহিনীটি জনগণের কাছাকাছি থেকে কাজ করেন। যাদের উদ্দেশ্য শুধু সেবা দেয়াই নয়, অপরাধ কিংবা সন্ত্রাস দমনের মতো বড় কাজ। এর জন্য তাদের হাতে থাকতে হয় আধুনিক সব অস্ত্র।

উপমহাদেশে যেখানে বড় সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দেয়ার ঘটনা আছে, সেখানে বাংলাদেশ এসব অস্ত্র তুলে দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা যাবে কতটা- এমন প্রশ্ন ছিল পুলিশের সাবেক আইজিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদার বলেন, ‘পুলিশের হাতে কী অস্ত্র থাকবে। সেটাতো পরিষ্কার করতে হবে। কারণ অস্ত্র ছাড়া, শক্তি প্রয়োগ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বা অপরাধের সঠিক তদন্ত করা সম্ভব না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘যাদের কাছে মরণঘাতী এসব অস্ত্র আছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কী লাঠি নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবে? সেটি তো হবে না। এই সিদ্ধান্তে আসতে গেলে রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে দেশের কারো কাছে অস্ত্র থাকবে না।’

রাজনৈতিক দলগুলোর এই বাহিনীটিকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করার মানসিক পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, অতি উৎসাহী পুলিশের চেয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই হত্যাকাণ্ড বাড়ে পুলিশের হাতে। তাই মারণাস্ত্র রাখা যেতে পারে, তবে এর অনৈতিক ব্যবহার যেন কেউ না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘নির্দেশের জায়গা থেকে পুলিশের মধ্যে থেকে কেউ রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে এই ধরনের জনগণের বিরুদ্ধে কোনো নির্দেশ দিতে না পারে।’

সাবেক মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদার বলেন, যারা এইসব দেখাশোনার দায়িত্বে থাকবেন যেসব কর্মকর্তা যারা মাঠ পর্যায়ে নিশ্চিত করবে অস্ত্রের যেন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার না হয়। অপ্রয়োগ যেন না হয়। যেটা ৫ আগস্টের আগে বিগত ১৫ বছর দেখেছি।

এপিবিএনের সংখ্যা খুবই কম, যাদের হাতে মারণাস্ত্র থাকলেও সেটার সুফল পুলিশের মতো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে কাজ করবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।