ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৫৮:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • / ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।

গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ মুখপাত্র টমি পিগট বলেন, তারা বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।

টমি পিগট বলেন, ‘আমরা জানি যে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সবধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে, যতক্ষণ না দলটির বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় আসে। আমরা বাংলাদেশের কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। আমরা একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সবার জন্য ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। আমরা সব দেশের—তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে—প্রতি আহ্বান জানাই— মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতা যেন সবার জন্য রক্ষা করা হয়।’

আরেক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে উগ্র মতাদর্শ ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কী? বাংলাদেশ সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইয়্যেবা’র বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে কাশ্মির ইস্যুতে সহিংসতা উসকে দেওয়া রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সমর্থন বাড়ছে। এই বৈঠকটি বাংলাদেশ সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ে হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

জবাবে টমি পিগট বলেন, ‘আমি আগের প্রশ্নের উত্তরেই একটি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলাম—সেটিই পুনরায় বলব। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ৫০ বছরের বেশি সময়ের অংশীদারিত্বকে মূল্য দিই। আমরা এই অংশীদারত্ব আরও গভীর করতে আগ্রহী এবং এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছি। আগের প্রশ্নে আমি যা বলেছি, সেটিই বলার মতো রয়েছে। এর বেশি কিছু যোগ করার নেই।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষেদ্ধের দাবি করতে থা্কে। এরপর সম্প্রতি রাজনৈতিক দল এনসিপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে লাগাতার বিক্ষোভ শুরু করে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মে সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ দিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘কোনো উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ না করেই আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ একটি উদ্বেগজনক ঘটনা।’ একইসঙ্গে বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন জয়সওয়াল।

ভারত সরকারের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতি যেন সবাই শ্রদ্ধা দেখায়।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন ছিল।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘আমাদের মনে আছে, কীভাবে আওয়ামী লীগ বারবার প্রহসনমূলক নির্বাচনের আশ্রয় নিয়েছে এবং আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

আপডেট সময় : ১২:৫৮:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।

গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্য জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ মুখপাত্র টমি পিগট বলেন, তারা বাংলাদেশের কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।

টমি পিগট বলেন, ‘আমরা জানি যে, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের সবধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে, যতক্ষণ না দলটির বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় আসে। আমরা বাংলাদেশের কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না। আমরা একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সবার জন্য ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি। আমরা সব দেশের—তার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে—প্রতি আহ্বান জানাই— মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন করার স্বাধীনতা যেন সবার জন্য রক্ষা করা হয়।’

আরেক প্রশ্নে ওই সাংবাদিক দাবি করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে উগ্র মতাদর্শ ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কী? বাংলাদেশ সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইয়্যেবা’র বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে কাশ্মির ইস্যুতে সহিংসতা উসকে দেওয়া রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের সমর্থন বাড়ছে। এই বৈঠকটি বাংলাদেশ সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ে হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

জবাবে টমি পিগট বলেন, ‘আমি আগের প্রশ্নের উত্তরেই একটি সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলাম—সেটিই পুনরায় বলব। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ৫০ বছরের বেশি সময়ের অংশীদারিত্বকে মূল্য দিই। আমরা এই অংশীদারত্ব আরও গভীর করতে আগ্রহী এবং এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছি। আগের প্রশ্নে আমি যা বলেছি, সেটিই বলার মতো রয়েছে। এর বেশি কিছু যোগ করার নেই।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষেদ্ধের দাবি করতে থা্কে। এরপর সম্প্রতি রাজনৈতিক দল এনসিপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে লাগাতার বিক্ষোভ শুরু করে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মে সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারার আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ দিকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘কোনো উপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ না করেই আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ একটি উদ্বেগজনক ঘটনা।’ একইসঙ্গে বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন জয়সওয়াল।

ভারত সরকারের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতি যেন সবাই শ্রদ্ধা দেখায়।’

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন ছিল।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘আমাদের মনে আছে, কীভাবে আওয়ামী লীগ বারবার প্রহসনমূলক নির্বাচনের আশ্রয় নিয়েছে এবং আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।’