ঢাকা ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কাতার-যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মধ্যপ্রাচ্য সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে কাতারের সঙ্গে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ট্রাম্পকে উপহার দেয়া বোয়িং জেট বিমান নিয়ে সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। পরে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেন ফিফার প্রেসিডেন্ট, ইলন মাস্কসহ আরো অনেকে। এদিকে পরমাণু ইস্যুতে ট্রাম্পের সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে ইরান।

চার দিনের মধ্যপ্রাচ্যে সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই যাত্রায় প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন কাতারেও। দোহায় পৌঁছানোর পর তাকে দেয়া হয় রাজসিক সংবর্ধনা। এর আগে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার সঙ্গে সাক্ষাতের পর দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, যা তার মধ্যপ্রাচ্য সফরকে ঐতিহাসিক করে তুলেছে।

উপসাগরের গোটা সফরেই ট্রাম্পের প্রধান ইস্যু ছিল বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি। কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল অংকের যুগান্তকারী চুক্তি করেন ট্রাম্প। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে কাতার এয়ারওয়েজের ২১০টি বিমান কেনার চুক্তিও। যা আগামী ৭ বছরে সরবরাহ করা হবে। বোয়িংয়ের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় অর্ডার।

চুক্তির আওতায় আরও ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা থেকে ড্রোন ও ড্রোন-বিধ্বংসী প্রযুক্তি ক্রয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতে কাতারের বিনিয়োগ। এসব চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো।

এদিক কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল জেট গ্রহণের বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ডেমোক্র্যাটরা এটিকে ঘুষ, প্রতারণা ও দুর্নীতির সঙ্গে তুলনা করছেন। ৪০ কোটি ডলার ব্যয়ের বোয়িং সেভেন ফোর সেভেন-এইট বিমানটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিমান বহরের অংশ হবে। বর্তমান বহরে থাকা দুটি জেট ১৯৯০ সালের।

তবে জেট নিয়ে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়ালেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি। ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটি ট্রাম্পকে দেয়া ব্যক্তিগত উপহার নয়। অনেকেই এটি নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আমরা দেখেছি বোয়িং দেয়া নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের গল্প বানাচ্ছেন। এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন অনেকে। এটি ব্যক্তিগত উপহার নয়, এটি ছিল একটি সাধারণ দুই দেশের সরকারি পর্যায়ের চুক্তি।’

এদিকে ফ্লোরিডার পাম বিচে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাংলো মার-এ-লাগোর ওপর দিয়ে ‘কাতার-এ-লাগোতে স্বাগতম’ লেখা ব্যানার নিয়ে উড়ে যায় একটি বিমান। কাতারের কাছ থেকে বোয়িং উপহার নেয়ার প্রতিবাদে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয় ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি।

এদিকে পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে কাতারের সহযোগিতা চেয়েছেন ট্রাম্প। এসময় ট্রাম্প বলেন, পারমাণবিক আলোচনা সহিংসতার পথে যাক এমনটা তিনি চান না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের পরিস্থিতি একটি বিপজ্জনক পর্যায়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের জন্য সঠিক কাজটি করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু করতে চায় যা লাখ লাখ জীবন বাঁচাবে। ইরানের বিধ্বংসী পদক্ষেপে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আমরা তা হতে দেব না।’

ট্রাম্পের এমন সমালোচনার জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, কোনো বর্বরের কাছে মাথা নত করবে না তেহরান। ইরানকে মৃত্যু ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই বলেও মন্তব্য করেন পেজেশকিয়ান।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প ভেবেছেন তার হুঙ্কারে ইরান ভয় পাবে। কোনো ভয় বা হুমকির মুখে কোনো ধরনের চুক্তিতে যাবে না তেহরান। দেশের সম্মান ও স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে কোনো আপোস করা হবে না।’

কাতারের আমির তামাম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লুসাইল প্রাসাদে আয়োজিত নৈশভোজে উপস্থিত হন বোয়িং-এর সিইও কেলি অর্টবার্গ, টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক, ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

কাতার-যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি

আপডেট সময় : ১০:৪৮:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্য সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে কাতারের সঙ্গে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ট্রাম্পকে উপহার দেয়া বোয়িং জেট বিমান নিয়ে সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। পরে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেন ফিফার প্রেসিডেন্ট, ইলন মাস্কসহ আরো অনেকে। এদিকে পরমাণু ইস্যুতে ট্রাম্পের সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে ইরান।

চার দিনের মধ্যপ্রাচ্যে সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই যাত্রায় প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেন কাতারেও। দোহায় পৌঁছানোর পর তাকে দেয়া হয় রাজসিক সংবর্ধনা। এর আগে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার সঙ্গে সাক্ষাতের পর দেশটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন, যা তার মধ্যপ্রাচ্য সফরকে ঐতিহাসিক করে তুলেছে।

উপসাগরের গোটা সফরেই ট্রাম্পের প্রধান ইস্যু ছিল বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি। কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল অংকের যুগান্তকারী চুক্তি করেন ট্রাম্প। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে কাতার এয়ারওয়েজের ২১০টি বিমান কেনার চুক্তিও। যা আগামী ৭ বছরে সরবরাহ করা হবে। বোয়িংয়ের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় অর্ডার।

চুক্তির আওতায় আরও ছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা থেকে ড্রোন ও ড্রোন-বিধ্বংসী প্রযুক্তি ক্রয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি খাতে কাতারের বিনিয়োগ। এসব চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো।

এদিক কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল জেট গ্রহণের বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ডেমোক্র্যাটরা এটিকে ঘুষ, প্রতারণা ও দুর্নীতির সঙ্গে তুলনা করছেন। ৪০ কোটি ডলার ব্যয়ের বোয়িং সেভেন ফোর সেভেন-এইট বিমানটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিমান বহরের অংশ হবে। বর্তমান বহরে থাকা দুটি জেট ১৯৯০ সালের।

তবে জেট নিয়ে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়ালেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি। ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটি ট্রাম্পকে দেয়া ব্যক্তিগত উপহার নয়। অনেকেই এটি নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, আমরা দেখেছি বোয়িং দেয়া নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের গল্প বানাচ্ছেন। এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছেন অনেকে। এটি ব্যক্তিগত উপহার নয়, এটি ছিল একটি সাধারণ দুই দেশের সরকারি পর্যায়ের চুক্তি।’

এদিকে ফ্লোরিডার পাম বিচে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বাংলো মার-এ-লাগোর ওপর দিয়ে ‘কাতার-এ-লাগোতে স্বাগতম’ লেখা ব্যানার নিয়ে উড়ে যায় একটি বিমান। কাতারের কাছ থেকে বোয়িং উপহার নেয়ার প্রতিবাদে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয় ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি।

এদিকে পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে কাতারের সহযোগিতা চেয়েছেন ট্রাম্প। এসময় ট্রাম্প বলেন, পারমাণবিক আলোচনা সহিংসতার পথে যাক এমনটা তিনি চান না।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের পরিস্থিতি একটি বিপজ্জনক পর্যায়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের জন্য সঠিক কাজটি করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু করতে চায় যা লাখ লাখ জীবন বাঁচাবে। ইরানের বিধ্বংসী পদক্ষেপে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আমরা তা হতে দেব না।’

ট্রাম্পের এমন সমালোচনার জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, কোনো বর্বরের কাছে মাথা নত করবে না তেহরান। ইরানকে মৃত্যু ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই বলেও মন্তব্য করেন পেজেশকিয়ান।

তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প ভেবেছেন তার হুঙ্কারে ইরান ভয় পাবে। কোনো ভয় বা হুমকির মুখে কোনো ধরনের চুক্তিতে যাবে না তেহরান। দেশের সম্মান ও স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে কোনো আপোস করা হবে না।’

কাতারের আমির তামাম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লুসাইল প্রাসাদে আয়োজিত নৈশভোজে উপস্থিত হন বোয়িং-এর সিইও কেলি অর্টবার্গ, টেসলা প্রধান ইলন মাস্ক, ফিফার প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।