ক্ষুধায় মারা যেতে পারে ৩০ কোটি মানুষ

- আপডেট সময় : ১০:২৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ৩৭১ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বে গত এক বছরে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এ কারণে খাদ্য সংকটে পড়ে কেবল ক্ষুধায় বিশ্বের ৩০ কোটি মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আজ শুক্রবার জাতিসংঘের প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ (জিআরএফসি)‑এ এই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ক্ষুধায় মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি ফিলিস্তিনের গাজা ও সুদানে, ৯৫ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া হাইতি, মালি ও দক্ষিণ সুদানেও সংকট রয়েছে। কয়েক বছর ধরে সংকটে থাকা মিয়ানমারকে তালিকায় রাখা হলেও দেশটির খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা ও সুদানের মতো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি। বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সুদানের জমজম আইডিপি ক্যাম্পে দুর্ভিক্ষ শনাক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই সংকট দারফুর ও পশ্চিম নুবা পর্বতমালার অন্যান্য ক্যাম্পেও ছড়িয়ে পড়ে। ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির আরও পাঁচটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ হয়েছে। আরও ১৭টি এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালের পর এই প্রথম কোনো এলাকায় দুর্ভিক্ষ শনাক্ত হলো।
শুক্রবার প্রকাশিত খাদ্য সংকট সংক্রান্ত ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৫৩টি দেশ ও অঞ্চলের ২৯ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি, যা গবেষণার আওতায় থাকা মোট জনসংখ্যার ২২.৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে ৩৬টি দেশ এবং অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য সংকট রয়েছে। এসব এলাকায় ২০১৬ সাল থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ প্রতি বছর চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ ছাড়া ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ভয়াবহ স্তরের সম্মুখীন হওয়া মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৪ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সংঘাত, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, হাইতি, সুদান, দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার এবং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। প্রথমবারের মতো বার্ষিক প্রতিবেদনে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্যও সরবরাহ করা হয়েছে। এতে অনুমান করা হয়েছে, ২৬টি দেশে ৬-৫৯ মাস বয়সী প্রায় ৪ কোটি শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার।
নতুন প্রতিবেদনের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, ২০২৪ সালে শুধু সংঘাতের কারণে ২০টি দেশে ১৪ কোটির বেশি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে। সুদান, গাজা, হাইতি ও মালিতে এ পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে সুদানে। দাতা দেশগুলোর তহবিল কমিয়ে দেওয়ায় ২০২৫ সালের পূর্বাভাস ‘উদ্বেগজনক’ বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও মানবিক সাহায্য কমে যাওয়া, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ধাক্কা গত বছর নতুন করে আরও ১ কোটি ৩৭ লাখ মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলেছে। তীব্র সংঘাত, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও তহবিল হ্রাস তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও গভীর করছে।
এতে বলা হয়, ১৯টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ক্রমাগত পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। এই পরিস্থিতির কারণ সংঘাত। এসব দেশের তালিকায় মিয়ানমার, নাইজেরিয়া ও কঙ্গো রয়েছে। এ ছাড়া খরার মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে ইথিওপিয়া, কেনিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে।
এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক বন্যা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সম্মিলিত প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ এশিয়া অঞ্চলের বৃহত্তম খাদ্য সংকটে থাকা এলাকায় পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চ স্তরের সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আফগানিস্তানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক স্থবিরতার মধ্যেও তা অত্যন্ত ভঙ্গুর, একই সঙ্গে সংঘাত বেড়েছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশের ২৯ শতাংশ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি। সংখ্যায় এটি প্রায় ৭ কোটি।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে বলা হয়, গত এক বছর এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিল বাংলাদেশ। এশিয়ার চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের মধ্যে ৩৬ শতাংশই বাংলাদেশের। এর পেছনে প্রধান কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতির কথাও উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে যত মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিল, এই সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে বেশি।