ঢাকা ১০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১২০ বছর চ্যাম্পিয়ন প্যালেস

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • / ৩৫২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ক্রিস্টাল প্যালেসের চলতি মৌসুমের শুরুটা হয়েছিল বিভীষিকার মতো। প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমের প্রথম জয়ের দেখা পেতে অলিভিয়ের গ্লাসনারের দলকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৯ ম্যাচ। এমন বাজেভাবে মৌসুম শুরু করা দলটাই কি না মৌসুম শেষ করছে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য নিয়ে!

না, প্যালেস প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেনি। লিগের ৩৬ ম্যাচ শেষে ১২ নম্বরে আছে। তবে এফএ কাপে রূপকথার অবিশ্বাস্য গল্প লিখেছে লন্ডনের ক্লাবটি।

গতকাল ওয়েম্বলিতে এফএ কাপের ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্যালেস। ক্লাব ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বড় শিরোপা জিতল দলটি।

তাতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এফএ কাপে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো পেপ গার্দিওলার দলকে। গত মৌসুমে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে ফাইনালে হেরেছিল সিটি। গতকাল প্যালেসের কাছে হারতেই নিশ্চিত হয়েছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর আরেকটা ট্রফিহীন মৌসুম কাটাচ্ছে সিটি। আর কোচিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো মৌসুম খালি হাতেই শেষ করছেন গার্দিওলা।

গার্দিওলার দল গতকাল যে খুব খারাপ খেলেছে, এমন নয়। বরং আক্রমণ আর বলের দখল, দু-জায়গাতেই দাপট দেখিয়েছে সিটি। ম্যাচের ৭৮ শতাংশ বলের দখলে রাখা গার্দিওলার দল শট নিয়েছিল ২৩টি। কিন্তু প্যালেসের গোলপোস্টের নিচে যেন চীনের প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়েছিলেন ডিন হেন্ডারসন। আর্লিং হলান্ড-জেরেমি ডকু-বের্নাদো সিলভাদের একের পর এক প্রচেষ্টা একাই ঠেকিয়েছেন বিশ্বস্ত হাতে।

শুধু তাই নয়, আটকে দিয়েছেন ম্যাচের ৩৬ মিনিটে নেওয়া ওমর মারমুশের পেনাল্টিও। অবশ্য ওই পেনাল্টির আগেই এবেরেচে এজের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল প্যালেস। সিটির টানা আক্রমণ সামলে ম্যাচের ১৬ মিনিটে দারুণ এক প্রতিআক্রমণে ওঠে গ্লাসনারের দল। আক্রমণের শেষ ভাগে মাঠের ডানপ্রান্ত থেকে বক্সের ভেতর ক্রস করেছিলেন দানিয়েল মুনোস। আর দারুণ এক ভলিতে সেটা সিটির জালে পাঠিয়ে দেন এজে।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আরও একবার গোল উদযাপন করেছিল প্যালেস। মুনোসের ওই গোলটা বাতিল হয়েছে অফসাইডে। তাতে অবশ্য ম্যাচের ফলে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। শেষ পর্যন্ত গার্দিওলার দলকে হতাশা উপহার দিয়েই শিরোপা উদযাপনে মাতে প্যালেস।

ম্যাচ শেষে ফাইনালের একমাত্র গোলদাতা এজে অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘ক্লাব কিংবা আমার নিজের- স্বপ্ন বোধহয় এভাবেই পূর্ণতা পায়। কে ভেবেছিল আমরা এটা জিততে পারব? আমরা ইতিহাস লিখেছি।’

প্যালেসের এ ইতিহাস লেখার প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড গ্লাসনার। ১৫ মাস আগে প্যালেসের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে ২০২২ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টকে জিতিয়েছেন ইউরোপা লিগের শিরোপা। এবার প্যালেসকে প্রথমবারের মতো কোনো ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টের টিকিট নিশ্চিত করে দিলেন।

অবিশ্বাস্য এ পথচলার পেছনে সমর্থকদের ধৈর্য আর আস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ অস্ট্রিয়ান কোচ বলেছেন, ‘কেউ চিন্তাও করেনি, ফ্রাঙ্কফুর্ট ইউরোপা লিগ কিংবা প্যালেস এফএ কাপ জিততে পারে। কিন্তু আপনারা দেখলেন, ধৈর্যের ফল কেমন হতে পারে।’

মৌসুমের শুরুর দিকে বাজে পারফরম্যান্সকে টেনে এসে গ্লাসনার বলেছেন, ‘আমাদের শুরুটা হয়েছিল খুবই বাজে। প্রিমিয়ার লিগে ৮ ম্যাচ শেষে ৩ পয়েন্ট। এ অবস্থায় সাধারণত সমর্থকেরা ধৈর্যহারা হয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। কিন্তু আমাদের সমর্থকেরা ভরসা রেখেছিল। এমনকি আমরা যখন গতমাসে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে হারলাম, এরপরও সমর্থকরা আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছে।’

সে কারণে ক্লাবের প্রথম শিরোপাটা সমর্থকদেরই উৎসর্গ করেছেন গ্লাসনার, ‘কঠিন সময়ে সমর্থন দরকার হয়। এমন কাউকে দরকার নেই, যারা দূরে ঠেলে দেয়। বরং তাদেরকেই দরকার, যারা বুকে টেনে নেয়। আমাদের এ বিশেষ জয়টা সমর্থকদের জন্যই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১২০ বছর চ্যাম্পিয়ন প্যালেস

আপডেট সময় : ১২:১৯:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

ক্রিস্টাল প্যালেসের চলতি মৌসুমের শুরুটা হয়েছিল বিভীষিকার মতো। প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমের প্রথম জয়ের দেখা পেতে অলিভিয়ের গ্লাসনারের দলকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৯ ম্যাচ। এমন বাজেভাবে মৌসুম শুরু করা দলটাই কি না মৌসুম শেষ করছে ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্য নিয়ে!

না, প্যালেস প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেনি। লিগের ৩৬ ম্যাচ শেষে ১২ নম্বরে আছে। তবে এফএ কাপে রূপকথার অবিশ্বাস্য গল্প লিখেছে লন্ডনের ক্লাবটি।

গতকাল ওয়েম্বলিতে এফএ কাপের ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্যালেস। ক্লাব ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বড় শিরোপা জিতল দলটি।

তাতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এফএ কাপে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো পেপ গার্দিওলার দলকে। গত মৌসুমে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে ফাইনালে হেরেছিল সিটি। গতকাল প্যালেসের কাছে হারতেই নিশ্চিত হয়েছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর আরেকটা ট্রফিহীন মৌসুম কাটাচ্ছে সিটি। আর কোচিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো মৌসুম খালি হাতেই শেষ করছেন গার্দিওলা।

গার্দিওলার দল গতকাল যে খুব খারাপ খেলেছে, এমন নয়। বরং আক্রমণ আর বলের দখল, দু-জায়গাতেই দাপট দেখিয়েছে সিটি। ম্যাচের ৭৮ শতাংশ বলের দখলে রাখা গার্দিওলার দল শট নিয়েছিল ২৩টি। কিন্তু প্যালেসের গোলপোস্টের নিচে যেন চীনের প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়েছিলেন ডিন হেন্ডারসন। আর্লিং হলান্ড-জেরেমি ডকু-বের্নাদো সিলভাদের একের পর এক প্রচেষ্টা একাই ঠেকিয়েছেন বিশ্বস্ত হাতে।

শুধু তাই নয়, আটকে দিয়েছেন ম্যাচের ৩৬ মিনিটে নেওয়া ওমর মারমুশের পেনাল্টিও। অবশ্য ওই পেনাল্টির আগেই এবেরেচে এজের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল প্যালেস। সিটির টানা আক্রমণ সামলে ম্যাচের ১৬ মিনিটে দারুণ এক প্রতিআক্রমণে ওঠে গ্লাসনারের দল। আক্রমণের শেষ ভাগে মাঠের ডানপ্রান্ত থেকে বক্সের ভেতর ক্রস করেছিলেন দানিয়েল মুনোস। আর দারুণ এক ভলিতে সেটা সিটির জালে পাঠিয়ে দেন এজে।

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আরও একবার গোল উদযাপন করেছিল প্যালেস। মুনোসের ওই গোলটা বাতিল হয়েছে অফসাইডে। তাতে অবশ্য ম্যাচের ফলে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। শেষ পর্যন্ত গার্দিওলার দলকে হতাশা উপহার দিয়েই শিরোপা উদযাপনে মাতে প্যালেস।

ম্যাচ শেষে ফাইনালের একমাত্র গোলদাতা এজে অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘ক্লাব কিংবা আমার নিজের- স্বপ্ন বোধহয় এভাবেই পূর্ণতা পায়। কে ভেবেছিল আমরা এটা জিততে পারব? আমরা ইতিহাস লিখেছি।’

প্যালেসের এ ইতিহাস লেখার প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড গ্লাসনার। ১৫ মাস আগে প্যালেসের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর আগে ২০২২ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টকে জিতিয়েছেন ইউরোপা লিগের শিরোপা। এবার প্যালেসকে প্রথমবারের মতো কোনো ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টের টিকিট নিশ্চিত করে দিলেন।

অবিশ্বাস্য এ পথচলার পেছনে সমর্থকদের ধৈর্য আর আস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ অস্ট্রিয়ান কোচ বলেছেন, ‘কেউ চিন্তাও করেনি, ফ্রাঙ্কফুর্ট ইউরোপা লিগ কিংবা প্যালেস এফএ কাপ জিততে পারে। কিন্তু আপনারা দেখলেন, ধৈর্যের ফল কেমন হতে পারে।’

মৌসুমের শুরুর দিকে বাজে পারফরম্যান্সকে টেনে এসে গ্লাসনার বলেছেন, ‘আমাদের শুরুটা হয়েছিল খুবই বাজে। প্রিমিয়ার লিগে ৮ ম্যাচ শেষে ৩ পয়েন্ট। এ অবস্থায় সাধারণত সমর্থকেরা ধৈর্যহারা হয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। কিন্তু আমাদের সমর্থকেরা ভরসা রেখেছিল। এমনকি আমরা যখন গতমাসে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে হারলাম, এরপরও সমর্থকরা আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছে।’

সে কারণে ক্লাবের প্রথম শিরোপাটা সমর্থকদেরই উৎসর্গ করেছেন গ্লাসনার, ‘কঠিন সময়ে সমর্থন দরকার হয়। এমন কাউকে দরকার নেই, যারা দূরে ঠেলে দেয়। বরং তাদেরকেই দরকার, যারা বুকে টেনে নেয়। আমাদের এ বিশেষ জয়টা সমর্থকদের জন্যই।’