জয়-পরাজয়ের হিসাব ছাড়াই প্রশংসায় ভাসছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী

- আপডেট সময় : ০৯:১৩:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / ৩৫৩ বার পড়া হয়েছে

৮৭ ঘণ্টার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জয়ী কে? এ বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও বিশ্লেষকদের দাবি, সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী। জনসমর্থনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী বন্দনায় ব্যস্ত পাকিস্তানিরা। তবে এ সমর্থন কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
২০২৩ সালের ৯ মে রাজপথে লাখো পিটিআই সমর্থকের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর নির্দেশেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। তাই হামলা চালানো হয় রাওয়ালপিন্ডির সেনানিবাসে। দাঙ্গার মধ্যে সামরিক স্থাপনায় ছড়িয়ে দেয়া হয় আগুন।
ঠিক দুই বছর পরে রাজধানীতে লাখো জনতার হাতে পাকিস্তানের পতাকা। কণ্ঠে সেনাবাহিনীর বন্দনা। কারণ ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে দৃঢ়চিত্তে লড়ে গেছে সেনারা। ফলে ৮৭ ঘণ্টার মাথায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে পরাক্রমশালী নয়াদিল্লি।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা, অপারেশন সিন্দূর, অপারেশন বুনিয়ান উন মারসুস, সবশেষ যুদ্ধবিরতি। ১৯ দিনের শ্বাসরুদ্ধকর সংঘাতে জয় পরাজয় নির্ধারণ অনেকটাই আপেক্ষিক বিষয়। তবে সামরিক এই সংঘাতে দেশের জনগণের কাছে ইমেজ পুনরুদ্ধারের কারণে আসল বিজয়ী পাক সামরিক বাহিনী, এ বিষয়ে দ্বিধা নেই কারও।
ভারতীয় প্রথমসারির গণমাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে বিজেপি সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। তাই অপারেশন সিন্দুরের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কোনো তথ্যই প্রকাশ করেনি তারা। যেসব অনলাইন পোর্টাল সত্য প্রকাশ করেছে, তাদেরকে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হয়। তাই শিক্ষিত ভারতীয় তরুণদের ধারণা, এই যুদ্ধে জয়ী হয়েছে পাকিস্তান।
দ্যা ক্যারাভান ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদক হারতোশ সিং বাল বলেন, ‘প্রথমদিনের হামলায় ভারতের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। পরিষ্কারভাবে এ বিষয়ে একটি লাল রেখা টেনেছে সরকার। অর্থাৎ কোনো গণমাধ্যমেই সরকার কিংবা সামরিক বাহিনীর দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরা যাবে না।’
ভোট ভাইভের সাংবাদিক অমিতাভ তিওয়ারি বলেন, ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮ শতাংশ তরুণ, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, তারা মনে করেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছে।’
১৯৪৭ সালে জন্মের পর থেকে ৪ বার সামরিক অভ্যুত্থান দেখেছে পাকিস্তান। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধেও জড়িয়েছে চার বার। ৭৮ বছরের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ করতে পারেননি পূর্ণ মেয়াদ। এর পেছনে রয়েছে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব। তারপরেও বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় বাড়ছে উর্দি পরিহিতদের পক্ষে সমর্থন।
যুদ্ধবিরতির পরের চারদিনের জরিপে দেখা যায়, প্রায় সবক্ষেত্রেই লেটার মার্কস পেয়েছে পাক সামরিক বাহিনী। ৯৬ শতাংশ পাকিস্তানি মনে করেন যুদ্ধে জয়লাভ করেছে পাকিস্তান। ৮২ শতাংশ মানুষ আসিম মুনীরের সেনাদের পারফরমেন্স মুগ্ধ। আর সামরিক বাহিনী সম্পর্কে অভিমত বদলেছে ৯২ শতাংশ পাকিস্তানির।
সীমান্তবর্তী পাঞ্জাবে জনপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকলেও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গুমের অভিযোগ লেগে আছে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক পিটিআই সমর্থক এখনো ভোলেনি ইমরান খানকে কারারুদ্ধ করে রাখার ঘটনা। তাই সেনাদের পক্ষে কতদিন এই জনসমর্থন বজায় থাকে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।