ঢাকা ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তেঁতুলিয়ার তীব্র ভাঙনের কবলে নয় কিলোমিটার এলাকা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০২:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বরিশালে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের নয় কিলোমিটার এলাকা। ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকাতে ৭২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

তেঁতুলিয়া নদীর তীব্র ভাঙনের কবলে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ। বিলীন হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি। ফাটল দেখা দিয়েছে মসজিদ আর কবরস্থানের দেয়ালেও।

এক অধিবাসী জানান, মেহেন্দিগঞ্জের মূল সড়কও এ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি পাশে দুইশো বছরের পুরোনো এ মসজিদেও ফাঁটল ধরে গেছে।

আরেকজন জানান, এই তেঁতুলিয়া নদী সবকিছু বিলীন করে নিয়ে গেছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ সব নদীগর্ভে চলে গেছে।

তেঁতুলিয়া নদীর দক্ষিণ উলানিয়া, চাঁনপুর ও মেহেন্দিগঞ্জ সদর উপজেলা জুড়ে প্রতিনিয়ত চলছে ভাঙন। শীতে কিছুটা শান্ত থাকলেও বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ নেয় এই ভাঙন।

চলতি বছরের মার্চ থেকে ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন শত শত মানুষ। আর ভাঙনের ঝুঁকিতে শতাধিক স্থাপনা, ঘরবাড়ি ও আশপাশের এলাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে একাধিকবার জিও ব্যাগ ফেলা হলেও মেলেনি স্থায়ী সমাধান। ফলে শুধু খরচ হয়েছে সরকারি অর্থ।

বরিশাল তথা উপকূলীয় এলাকার নদীগুলো বেশ প্রশস্ত হয়ে থাকে। যা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়। এসব নদীতে বাকের সংখ্যাও অনেক। থাকে প্রচণ্ড স্রোত। প্রতিবছর অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়ে এসব নদী ভাঙ্গন কবলিত হয়ে থাকে। যেমন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার এই তেঁতুলিয়া নদী। নানা কারণে নদীটি এখন বেশ ভাঙ্গন কবলিত।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘যেভাবে কোনো একটা নদী ভাঙনের ক্ষেত্রে প্রকল্প নেয়া দরকার সেভাবে নেয়া হয় না। দেখা যায় রিঅ্যাক্টিভ ন্যাচারে কিছু একটা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প নেয়া হয়। এবং অনেক টাকা নষ্ট করা হয়। এতে করে কিছু ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাভবান হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকাতে ৭২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, নদীর একপাশে চর পড়ায় অন্য পাশ ভাঙনের কবলে পড়ছে। এতে চরের বালু কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলছেন কর্মকর্তারা।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড তথা পানি মন্ত্রণালয় গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। ৭২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প উন্নয়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হেড অফিসে দাখিল করেছি। আমরা আশা করছি যে এ প্রকল্প যদি অনুমোদিত হয় তাহলে এ ৯ কিলোমিটার অংশের নদী ভাঙন রোধ হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুধুমাত্র তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষ। আর এই নদীর ভাঙন ঠেকানো গেলে রক্ষা করা যাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

স্থানীয়দের মতে ২০২২-২৩ সালের বর্ষায় এই তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন হয়েছিলো সবচেয়ে তীব্র। উপজেলা সদর এবং পৌরসভা থেকে এই নদীর দূরত্ব এখন মাত্র এক কিলোমিটার। প্রতিনিয়ত এই দূরত্ব কমছেই। এই ভাঙ্গন এখনই যথাযথভাবে ঠেকানো না গেলে এক সময় মেহেন্দিগঞ্জের অস্তিত্ব থাকবে না এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

তেঁতুলিয়ার তীব্র ভাঙনের কবলে নয় কিলোমিটার এলাকা

আপডেট সময় : ০২:০০:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

বরিশালে তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের নয় কিলোমিটার এলাকা। ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকাতে ৭২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

তেঁতুলিয়া নদীর তীব্র ভাঙনের কবলে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ। বিলীন হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি। ফাটল দেখা দিয়েছে মসজিদ আর কবরস্থানের দেয়ালেও।

এক অধিবাসী জানান, মেহেন্দিগঞ্জের মূল সড়কও এ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি পাশে দুইশো বছরের পুরোনো এ মসজিদেও ফাঁটল ধরে গেছে।

আরেকজন জানান, এই তেঁতুলিয়া নদী সবকিছু বিলীন করে নিয়ে গেছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ সব নদীগর্ভে চলে গেছে।

তেঁতুলিয়া নদীর দক্ষিণ উলানিয়া, চাঁনপুর ও মেহেন্দিগঞ্জ সদর উপজেলা জুড়ে প্রতিনিয়ত চলছে ভাঙন। শীতে কিছুটা শান্ত থাকলেও বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ নেয় এই ভাঙন।

চলতি বছরের মার্চ থেকে ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন শত শত মানুষ। আর ভাঙনের ঝুঁকিতে শতাধিক স্থাপনা, ঘরবাড়ি ও আশপাশের এলাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে একাধিকবার জিও ব্যাগ ফেলা হলেও মেলেনি স্থায়ী সমাধান। ফলে শুধু খরচ হয়েছে সরকারি অর্থ।

বরিশাল তথা উপকূলীয় এলাকার নদীগুলো বেশ প্রশস্ত হয়ে থাকে। যা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে দেখা যায়। এসব নদীতে বাকের সংখ্যাও অনেক। থাকে প্রচণ্ড স্রোত। প্রতিবছর অসংখ্য ঘূর্ণিঝড়ে এসব নদী ভাঙ্গন কবলিত হয়ে থাকে। যেমন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার এই তেঁতুলিয়া নদী। নানা কারণে নদীটি এখন বেশ ভাঙ্গন কবলিত।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, ‘যেভাবে কোনো একটা নদী ভাঙনের ক্ষেত্রে প্রকল্প নেয়া দরকার সেভাবে নেয়া হয় না। দেখা যায় রিঅ্যাক্টিভ ন্যাচারে কিছু একটা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্প নেয়া হয়। এবং অনেক টাকা নষ্ট করা হয়। এতে করে কিছু ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লাভবান হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকাতে ৭২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব। আর জেলা প্রশাসক বলছেন, নদীর একপাশে চর পড়ায় অন্য পাশ ভাঙনের কবলে পড়ছে। এতে চরের বালু কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলছেন কর্মকর্তারা।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড তথা পানি মন্ত্রণালয় গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। ৭২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প উন্নয়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হেড অফিসে দাখিল করেছি। আমরা আশা করছি যে এ প্রকল্প যদি অনুমোদিত হয় তাহলে এ ৯ কিলোমিটার অংশের নদী ভাঙন রোধ হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, শুধুমাত্র তেঁতুলিয়া নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষ। আর এই নদীর ভাঙন ঠেকানো গেলে রক্ষা করা যাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

স্থানীয়দের মতে ২০২২-২৩ সালের বর্ষায় এই তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন হয়েছিলো সবচেয়ে তীব্র। উপজেলা সদর এবং পৌরসভা থেকে এই নদীর দূরত্ব এখন মাত্র এক কিলোমিটার। প্রতিনিয়ত এই দূরত্ব কমছেই। এই ভাঙ্গন এখনই যথাযথভাবে ঠেকানো না গেলে এক সময় মেহেন্দিগঞ্জের অস্তিত্ব থাকবে না এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।