ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় সমাধান দেখছে না ইরান

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:১৮:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • / ৩৬৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখছেন না ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ নিয়ে যে উচ্চাভিলাষী দাবি উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা তেহরানের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিকে, পরমাণু ইস্যুতে পঞ্চম ধাপের বৈঠকের সময়সূচী ঘোষণার দায়িত্ব মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমানের ওপর ছেড়ে দিয়েছ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।

১২ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ওমানের মধ্যস্থতায় ৪র্থ ধাপে বৈঠকের পর পরমাণু ইস্যুতে সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।

সফর শেষে ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, পরমাণু সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তেহরান। কিন্তু ইরানের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়, যেখানে ওয়াশিংটন এখনও পর্যন্ত লিখিত কোনো প্রস্তাব হাজির করতে পারেনি, সেখানে চুক্তিতে রাজি হওয়া বা ইতিবাচক সাড়া দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

যখন সমঝোতা নীতি ব্যর্থ হল, তখন চাপ প্রয়োগ আর হুমকির কূটনীতি বেছে নিলেন ট্রাম্প। হুঁশিয়ারি দিলেন, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে তেহরানকে।

পরমাণু অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহারের বিপক্ষে বরাবরই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির স্মরণ সভায় অংশ নিয়ে খামেনি আরও একবার মনে করিয়ে দেন, জনকল্যাণমূলক কাজে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের জন্যই ইউরেনিয়াম মজুদ করে আসছে তেহরান। তাই এবার ট্রাম্পের লাগামহীন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খামেনি সাফ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরমাণু ইস্যুতে সমাধানে পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না তিনি।

যদিও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ৭ বছর আগে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে তেহরান। তৈরি হচ্ছে অস্ত্রও।

২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানির সাথে একটি চুক্তি করেছিল ইরান। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ-কে পরমাণু প্রকল্প পরিদর্শনের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছিল। বিনিময়ে তেহরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হয় ৬ পরাশক্তি।

কিন্তু গেল ফেব্রুয়ারি মাসে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা সতর্ক করেছে যে ইরানে মজুদকৃত ইউরেনিয়ামের পরিমাণ প্রায় ২৭৫ কেজি এবং তা প্রায় ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ। সংস্থাটির আশঙ্কা, এই পরিমাণ ইউরেনিয়ামের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ করা গেলে তা ছয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট।

প্রথম মেয়াদেই ২০১৫-এর চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আল জাজিরা বলছে, ২০১৫ সালের ঐ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের অক্টোবরে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তির সঙ্গে নতুন চুক্তি বা নিষেধাজ্ঞার আলোচনা টেবিলে গড়ানোর আগে তেহরানের সঙ্গে সমঝোতা বা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প।

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় সমাধান দেখছে না ইরান

আপডেট সময় : ০৩:১৮:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখছেন না ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে পরমাণু সমৃদ্ধকরণ নিয়ে যে উচ্চাভিলাষী দাবি উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা তেহরানের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিকে, পরমাণু ইস্যুতে পঞ্চম ধাপের বৈঠকের সময়সূচী ঘোষণার দায়িত্ব মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমানের ওপর ছেড়ে দিয়েছ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।

১২ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ওমানের মধ্যস্থতায় ৪র্থ ধাপে বৈঠকের পর পরমাণু ইস্যুতে সমঝোতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান।

সফর শেষে ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, পরমাণু সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তেহরান। কিন্তু ইরানের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়, যেখানে ওয়াশিংটন এখনও পর্যন্ত লিখিত কোনো প্রস্তাব হাজির করতে পারেনি, সেখানে চুক্তিতে রাজি হওয়া বা ইতিবাচক সাড়া দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

যখন সমঝোতা নীতি ব্যর্থ হল, তখন চাপ প্রয়োগ আর হুমকির কূটনীতি বেছে নিলেন ট্রাম্প। হুঁশিয়ারি দিলেন, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে তেহরানকে।

পরমাণু অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহারের বিপক্ষে বরাবরই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির স্মরণ সভায় অংশ নিয়ে খামেনি আরও একবার মনে করিয়ে দেন, জনকল্যাণমূলক কাজে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের জন্যই ইউরেনিয়াম মজুদ করে আসছে তেহরান। তাই এবার ট্রাম্পের লাগামহীন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খামেনি সাফ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরমাণু ইস্যুতে সমাধানে পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না তিনি।

যদিও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ৭ বছর আগে আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে তেহরান। তৈরি হচ্ছে অস্ত্রও।

২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া এবং জার্মানির সাথে একটি চুক্তি করেছিল ইরান। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ-কে পরমাণু প্রকল্প পরিদর্শনের অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছিল। বিনিময়ে তেহরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সম্মত হয় ৬ পরাশক্তি।

কিন্তু গেল ফেব্রুয়ারি মাসে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা সতর্ক করেছে যে ইরানে মজুদকৃত ইউরেনিয়ামের পরিমাণ প্রায় ২৭৫ কেজি এবং তা প্রায় ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ। সংস্থাটির আশঙ্কা, এই পরিমাণ ইউরেনিয়ামের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ করা গেলে তা ছয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট।

প্রথম মেয়াদেই ২০১৫-এর চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আল জাজিরা বলছে, ২০১৫ সালের ঐ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের অক্টোবরে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তির সঙ্গে নতুন চুক্তি বা নিষেধাজ্ঞার আলোচনা টেবিলে গড়ানোর আগে তেহরানের সঙ্গে সমঝোতা বা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ট্রাম্প।