ঢাকা ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ইইউ-ব্রিটেন বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:২১:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
  • / ৩৮২ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন হলে ব্রিটেনের অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বরিস জনসনের শাসনামলে যেখানে অধিকাংশ চুক্তিই ছিল দ্বিপক্ষীয়, সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর পদক্ষেপকে বর্তমান প্রশাসনের সাফল্য হিসেবে দেখছেন তারা। যদিও ইইউভুক্ত দেশগুলোকে যুক্তরাজ্যের জলসীমায় মাছ ধরার অনুমতি দেয়ায় স্থানীয় মৎস্যজীবীদের বিরাগভাজন হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

ব্রেক্সিটের পর প্রথমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হলো যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আশা, ইইউ-যুক্তরাজ্য চুক্তি ২০৪০ সাল নাগাদ দেশের অর্থনীতিতে যোগ করবে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার।

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, নয় বছর পর আয়োজিত যুক্তরাজ্য-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশীদ্বারিত্ব বাবদ ১৭ হাজার কোটি ডলার ঋণ পাবে যুক্তরাজ্য। চুক্তি অনুসারে ইউরোপের ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর যৌথ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশ নিতে পারবে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো। এছাড়া এর আওতায় যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ১২ বছর মাছ ধরার অনুমতি পাচ্ছে ইইউর রাষ্ট্রসমূহ। বিপরীতে ইইউর দেশগুলোয় যুক্তরাজ্যের খাদ্যপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কমানো হবে বিধিনিষেধ। যদিও মৎস্যজীবীরা মনে করেন ইইউর সঙ্গে চুক্তি ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খোদ ব্রিটিশরাই।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যদি আমরা মাছ ধরার সুযোগ না পাই, উত্তরপূর্ব স্কটল্যান্ডের অসংখ্য পরিবারের উপার্জনের আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘অধিকাংশ জেলেরা সর্বস্ব হারাবেন। আবারও মৎস্য শিল্পকে সমঝোতার একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে হলো।’

মৎস্যজীবীদের অভিযোগ ছাড়াও ইইউ’র সঙ্গে চুক্তির কারণে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে স্টারমার প্রশাসন। বিচ্ছেদ ভুলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে কী না? কিংবা এই চুক্তির ফলে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ১২ বিলিয়ন ডলার যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি এমন প্রশ্নও উঠছে নানা মহলে। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রীতিতে চটে গেছে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টিও।

যদিও ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে সম্মত হওয়ার বিষয়টিকে বর্তমান প্রশাসনের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির চেয়ে ইউরোপের একটি জোটের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপন ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে বলে ধারণা করছেন তারা। বিশ্লেষকদের দাবি, এতে করে যুক্তরাজ্যের বাজারে বিনিয়োগ বাড়ারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘তারা সবসময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জোর দিয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়টা গেল প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কাজেই এই চুক্তির কারণে ব্রেক্সিটপন্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যের রপ্তানিতে ২১ শতাংশ এবং আমদানিতে সাত শতাংশ পতন দেখা যায়। ইইউর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য ব্যবস্থার এই বেহাল দশাও দূর করা সম্ভব বলে আশা করছে ব্রিটিশ সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

ইইউ-ব্রিটেন বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা

আপডেট সময় : ০১:২১:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন হলে ব্রিটেনের অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বরিস জনসনের শাসনামলে যেখানে অধিকাংশ চুক্তিই ছিল দ্বিপক্ষীয়, সেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর পদক্ষেপকে বর্তমান প্রশাসনের সাফল্য হিসেবে দেখছেন তারা। যদিও ইইউভুক্ত দেশগুলোকে যুক্তরাজ্যের জলসীমায় মাছ ধরার অনুমতি দেয়ায় স্থানীয় মৎস্যজীবীদের বিরাগভাজন হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

ব্রেক্সিটের পর প্রথমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হলো যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আশা, ইইউ-যুক্তরাজ্য চুক্তি ২০৪০ সাল নাগাদ দেশের অর্থনীতিতে যোগ করবে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার।

রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, নয় বছর পর আয়োজিত যুক্তরাজ্য-ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা অংশীদ্বারিত্ব বাবদ ১৭ হাজার কোটি ডলার ঋণ পাবে যুক্তরাজ্য। চুক্তি অনুসারে ইউরোপের ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর যৌথ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশ নিতে পারবে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো। এছাড়া এর আওতায় যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ১২ বছর মাছ ধরার অনুমতি পাচ্ছে ইইউর রাষ্ট্রসমূহ। বিপরীতে ইইউর দেশগুলোয় যুক্তরাজ্যের খাদ্যপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কমানো হবে বিধিনিষেধ। যদিও মৎস্যজীবীরা মনে করেন ইইউর সঙ্গে চুক্তি ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খোদ ব্রিটিশরাই।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘যদি আমরা মাছ ধরার সুযোগ না পাই, উত্তরপূর্ব স্কটল্যান্ডের অসংখ্য পরিবারের উপার্জনের আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।’

অন্য একজন বলেন, ‘অধিকাংশ জেলেরা সর্বস্ব হারাবেন। আবারও মৎস্য শিল্পকে সমঝোতার একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে হলো।’

মৎস্যজীবীদের অভিযোগ ছাড়াও ইইউ’র সঙ্গে চুক্তির কারণে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে স্টারমার প্রশাসন। বিচ্ছেদ ভুলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে কী না? কিংবা এই চুক্তির ফলে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে ১২ বিলিয়ন ডলার যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি এমন প্রশ্নও উঠছে নানা মহলে। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রীতিতে চটে গেছে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টিও।

যদিও ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে সম্মত হওয়ার বিষয়টিকে বর্তমান প্রশাসনের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির চেয়ে ইউরোপের একটি জোটের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপন ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে বলে ধারণা করছেন তারা। বিশ্লেষকদের দাবি, এতে করে যুক্তরাজ্যের বাজারে বিনিয়োগ বাড়ারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘তারা সবসময় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জোর দিয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার বিষয়টা গেল প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কাজেই এই চুক্তির কারণে ব্রেক্সিটপন্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যের রপ্তানিতে ২১ শতাংশ এবং আমদানিতে সাত শতাংশ পতন দেখা যায়। ইইউর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্য ব্যবস্থার এই বেহাল দশাও দূর করা সম্ভব বলে আশা করছে ব্রিটিশ সরকার।