ঢাকা ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

‘ইচ্ছে-খুশির’ আন্দোলনের শহর: মুক্তির উপায় কী?

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:১৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
  • / ৩৯১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মেগাসিটি ঢাকা যেন পরিণত হচ্ছে আন্দোলনের শহরে। যার যখন, যেভাবে খুশি সড়কে বসে পড়ছেন দাবি আদায়ের লম্বা তালিকা নিয়ে। ফলে ভোগান্তি যেন নিত্যদিনের সঙ্গী রাজধানীবাসীর। বিশেষজ্ঞদের মত, আইনের শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটাতে না করতে পারলে আন্দোলনের নামে জনভোগান্তি রাষ্ট্রের অকল্যাণ বয়ে আনবে। পাশাপাশি আন্দোলন-কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো উন্মুক্ত করা বা আরও প্রসারিত করে দিলে ভোগান্তি কমার আশা।

মেগা সিটি ঢাকা, প্রায় দুই কোটি মানুষের এই শহরে ভোগান্তির শেষ নেই, তবে পটপরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিদিনই কোন না কোন আন্দোলন দেখছে নগরবাসী। যে কারণে জনদুর্ভোগ যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর ভাগ্যে। ছোট-বড় যেকোনো ইস্যুতে মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকার রাজপথ। অবাধে চলে অবরোধ, সমাবেশ কিংবা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি।

প্রতিনিয়ত কর্মসূচির জন্য ব্যস্ততম এই নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে অচলাবস্থা। আন্দোলনের নামে জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী কিংবা বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। যার যখন যেভাবে খুশি সড়কে বসে পড়ছেন দাবি দাওয়ার লম্বা তালিকা নিয়ে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূস সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দাবি আদায়ের আন্দোলনে যেন ক্লান্ত ঢাকার রাজপথ। বিভিন্ন সূত্র মতে, গেল ৯ মাসে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হয়েছে অন্তত ৫০০ এরও বেশি।

সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছানো ও অসুস্থ রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া কিংবা সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে এক ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। কেউ কেউ বলছেন, কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।

রিকশাচালকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আপনারা ১০ জনের স্বার্থের জন্য আমাদের হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষকে ভোগাইবেন, এটা তো ঠিক না।’

পথচারীদের মধ্যে একজন নারী বলেন, ‘কোনো রোগী সাথে থাকলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আবার আমি একজন নারী। বেশি জার্নি করতে পারি না। গরমে, জ্যামে অস্থির হয়ে যাই।’

ডিএমপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এলাকা নির্দিষ্ট করে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও থামানো যাচ্ছে না আন্দোলনকারী। ফলে এসব আন্দোলন সামলাতে নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টার চেয়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশদের। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আন্দোলনের কারণে মোটরযান আইন প্রয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলো বিঘ্ন হচ্ছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে ওই কাজেই সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়। এমনকি কোনোসময় গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয় আন্দোলনের কারণে। আমাদের অতিরিক্ত ডিউটিও করতে হয়, অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করত হয়। সেজন্য আমাদের আইন বলবৎ করার জন্য কাজ করতে পারি না। এই ট্রাফিক জ্যাম করানোর কাজেই আমরা ব্যস্ত থাকি।’

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল খান জানান, আন্দোলনের জন্য বিভিন্ন জায়গা রয়েছে প্রয়োজনে সেগুলো কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই নগরপরিকল্পনাবিদ। রাষ্ট্র এই ক্ষেত্রে আইনের শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ করতে না পারলে ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে এবং রাষ্ট্র একটি অকার্যকর হিসেবে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আন্দোলন যদি কেউ করতে চায় তার জন্য তো একটি সুনির্দিষ্ট জায়গা আছে। সে জায়গাগুলো আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, রাষ্ট্রের কাছে আমরা সেই আলোচনাটা করতে পারি। এটা যদি আমরা এখনই না থামাতে পারি, রাষ্ট্র যদি এইক্ষেত্রে তার আইনের প্রয়োগটা না করে তাহলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে যে এটার স্কেলটা আরও বেড়ে যাবে। তখন রাষ্ট্র আরও অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভোগান্তি বাড়ার কারণে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তৈরি হবে জনরোষ, যা কখনই রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

‘ইচ্ছে-খুশির’ আন্দোলনের শহর: মুক্তির উপায় কী?

আপডেট সময় : ০১:১৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

মেগাসিটি ঢাকা যেন পরিণত হচ্ছে আন্দোলনের শহরে। যার যখন, যেভাবে খুশি সড়কে বসে পড়ছেন দাবি আদায়ের লম্বা তালিকা নিয়ে। ফলে ভোগান্তি যেন নিত্যদিনের সঙ্গী রাজধানীবাসীর। বিশেষজ্ঞদের মত, আইনের শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটাতে না করতে পারলে আন্দোলনের নামে জনভোগান্তি রাষ্ট্রের অকল্যাণ বয়ে আনবে। পাশাপাশি আন্দোলন-কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত স্থানগুলো উন্মুক্ত করা বা আরও প্রসারিত করে দিলে ভোগান্তি কমার আশা।

মেগা সিটি ঢাকা, প্রায় দুই কোটি মানুষের এই শহরে ভোগান্তির শেষ নেই, তবে পটপরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিদিনই কোন না কোন আন্দোলন দেখছে নগরবাসী। যে কারণে জনদুর্ভোগ যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর ভাগ্যে। ছোট-বড় যেকোনো ইস্যুতে মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে উঠে ঢাকার রাজপথ। অবাধে চলে অবরোধ, সমাবেশ কিংবা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি।

প্রতিনিয়ত কর্মসূচির জন্য ব্যস্ততম এই নগরজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে অচলাবস্থা। আন্দোলনের নামে জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের কৌশল হিসেবে বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী কিংবা বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। যার যখন যেভাবে খুশি সড়কে বসে পড়ছেন দাবি দাওয়ার লম্বা তালিকা নিয়ে। বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ড. ইউনূস সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দাবি আদায়ের আন্দোলনে যেন ক্লান্ত ঢাকার রাজপথ। বিভিন্ন সূত্র মতে, গেল ৯ মাসে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হয়েছে অন্তত ৫০০ এরও বেশি।

সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছানো ও অসুস্থ রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া কিংবা সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে এক ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। কেউ কেউ বলছেন, কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।

রিকশাচালকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আপনারা ১০ জনের স্বার্থের জন্য আমাদের হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষকে ভোগাইবেন, এটা তো ঠিক না।’

পথচারীদের মধ্যে একজন নারী বলেন, ‘কোনো রোগী সাথে থাকলে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আবার আমি একজন নারী। বেশি জার্নি করতে পারি না। গরমে, জ্যামে অস্থির হয়ে যাই।’

ডিএমপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এলাকা নির্দিষ্ট করে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও থামানো যাচ্ছে না আন্দোলনকারী। ফলে এসব আন্দোলন সামলাতে নির্ধারিত কর্ম ঘণ্টার চেয়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশদের। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আন্দোলনের কারণে মোটরযান আইন প্রয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রমগুলো বিঘ্ন হচ্ছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে ওই কাজেই সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হয়। এমনকি কোনোসময় গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয় আন্দোলনের কারণে। আমাদের অতিরিক্ত ডিউটিও করতে হয়, অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করত হয়। সেজন্য আমাদের আইন বলবৎ করার জন্য কাজ করতে পারি না। এই ট্রাফিক জ্যাম করানোর কাজেই আমরা ব্যস্ত থাকি।’

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল খান জানান, আন্দোলনের জন্য বিভিন্ন জায়গা রয়েছে প্রয়োজনে সেগুলো কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন এই নগরপরিকল্পনাবিদ। রাষ্ট্র এই ক্ষেত্রে আইনের শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ করতে না পারলে ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে এবং রাষ্ট্র একটি অকার্যকর হিসেবে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আন্দোলন যদি কেউ করতে চায় তার জন্য তো একটি সুনির্দিষ্ট জায়গা আছে। সে জায়গাগুলো আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, রাষ্ট্রের কাছে আমরা সেই আলোচনাটা করতে পারি। এটা যদি আমরা এখনই না থামাতে পারি, রাষ্ট্র যদি এইক্ষেত্রে তার আইনের প্রয়োগটা না করে তাহলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে যে এটার স্কেলটা আরও বেড়ে যাবে। তখন রাষ্ট্র আরও অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভোগান্তি বাড়ার কারণে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তৈরি হবে জনরোষ, যা কখনই রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে না।