মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফরে যাওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে বিশ্বনেতাদের। ইউক্রেনের পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে ওভাল অফিসে ডেকে এনে চূড়ান্ত অপমানের পর এমনটাই দাবি মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের। তাদের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গণমাধ্যমের সামনে বিশ্বনেতাদের অপদস্থ করে নিজের ক্ষমতা জাহিরের পাশাপাশি কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের মহড়া দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ- পৃথিবীর যে কোনো দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য যথেষ্ট সম্মানের। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সঙ্গে যে আচরণ করছেন- তাতে ওয়াশিংটনের নিমন্ত্রণ গ্রহণের আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে বিশ্বনেতাদের।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পর গেল বুধবার দক্ষিণ আফিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে ওয়াশিংটন ডিসির ওভাল অফিসে ডেকে এনে নাস্তানাবুদ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এঘটনার জেরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, বিশ্বরাজনীতিতে নতুন কন্টেন্ট যোগ করেছেন তিনি। ওভাল অফিস থেকে লাইভ স্ট্রিমিং এ দেখানো হচ্ছে ট্রাম্পের ঔদ্ধত্যের উৎকৃষ্ট নমুনা। সিএনএন আরও দাবি করছে, ট্রাম্পের এই অভিনব অতিথি সেবায় প্রতিবারই দেখা যাচ্ছে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও উপদেষ্টা ইলন মাস্ককে।
এর আগে শরণার্থী হিসেবে গাজার বাসিন্দাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য গেল ফেব্রুয়ারিতে জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহকে বিব্রতকরভাবে চাপ দেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় অপ্রীতিকর অবস্থায় পড়ে নিজেদের সামলে নিয়েছেন এমন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের নামও উঠে এসেছে সিএনএনের প্রতিবেদনে।
রাজা তৃতীয় চার্লসের একটি চিঠির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে ট্রাম্পের মন গলানোয় নিজ দেশে সর্বোচ্চ প্রশংসা পেয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ইউক্রেনে পাঠানো অর্থ ইউরোপ ফেরত পাবে-ট্রাম্পের এই মিথ্যাচার শুনেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাত ধরে তাকে প্রিয় বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করে চাতুর্য্যের পরিচয় দিতে দেখা গেছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকেও।
এই তালিকায় আরও আছেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সেতুবন্ধনে আগ্রহী ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। প্রায়শই ট্রাম্পের রিসোর্ট মার-এ-লাগোতে বেড়াতে যান তিনি। এবং অভিবাসী সংকট নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও কট্টর-ডানপন্থী পপুলিস্ট এই নেত্রীকে কোনো বিপাকে পড়তে হয়নি।
তবে ট্রাম্পের মন জয়ের ক্ষেত্রে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কোনো জুড়ি পাওয়া যায় না। বন্ধু রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি তাদের আন্তরিকতার খবর বারবার এসেছে গণমাধ্যমে।
ওভাল অফিসে এমনকাণ্ড করলেও মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে আরব নেতাদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ট্রাম্প। সিএনএনের দাবি, প্রয়োজনে তোষামোদ আর মনঃক্ষুণ্ন হলে গালাগাল দেয়ার কূটনীতিতেই বিশ্বাস করেন এই রিপাবলিকান। আর এসবের মধ্য দিয়ে নিজের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের মহড়াই দিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।