বজ্রপাতের কারণে বছরের পর বছর ধরে প্রাণ হারাচ্ছেন হাজারো মানুষ। ২০১৬ সালে ভয়াবহতা বিবেচনায় বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নেয়া হয় তালগাছ রোপণ ও বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনসহ বেশকিছু উদ্যোগ। যেগুলোকে পরীক্ষামূলক বলছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞের মতে, প্রান্তিক মানুষদের মৃত্যুতে বরাবরই উদাসীন থাকে রাষ্ট্র কাঠামো।
আবহমান বাংলার কৃষিজীবনের চিরচেনা প্রতিচ্ছবি। ফসল ফলিয়ে, ঘাম ঝরিয়ে, গোধূলির আলো মেখে, ঘরে ফেরা। কিন্তু সবার ফেরা হয় না,আচমকা বজ্রপাত ফিরতে দেয় না।
ফিরতে দেয়নি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার চরটেকী গ্রামের নবম শ্রেণি পড়ুয়া ইরিনা আক্তারকে। এই মে মাসের ৬ তারিখে স্কুলে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ইরিনা ও তার সহপাঠি আদৃতার।
প্রতি বছর বিশ্বে বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু হয়- এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর এসব মৃত্যুর অধিকাংশই হয় গ্রামীণ জনপদে। সরকারি তথ্য আর গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রায় শ'খানেক প্রাণহানি হয়েছে বজ্রপাতে। আর গেল ১৪ বছরে মারা গেছেন ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। যাদের ৭০ শতাংশই কৃষক।
বছর কয়েক আগে তালগাছ রোপণ আর বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনের মাধ্যমে সরকারিভাবে বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু নড়বড়ে পরিকল্পনায় গচ্চা যায় শতকোটি টাকা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, এসব প্রকল্পকে পরীক্ষামূলকভাবে নেয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর একটি অ্যাপস নিয়ে কাজ করছে, যাতে বজ্রপাতের ৩০-৪০ মিনিটের আগে ম্যাসেজ দিতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বজ্রপাত গবেষক অধ্যাপক আশরাফ দেওয়ান বলেন, প্রান্তিক মানুষদের মৃত্যুতে রাষ্ট্র বরাবরই উদাসীন। বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও তাই।
এই গ্রামীণ জনপদ জানে না বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক কারণ এবং প্রতিরোধ। বিজ্ঞানী আর সরকার, যারা এসব জানেন- প্রাণহানি ঠেকাতে তাদের দিকেই তাকিয়ে প্রান্তিক মানুষেরা।