ঢাকা ১১:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

সন্তানকে খাবার দিতে দিশেহারা গাজার মায়েরা

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:১৭:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে শুরু করলেও উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে শুধু খাবারের জন্য হাহাকার। ইসরাইলি হামলা আতঙ্কের মধ্যেই সন্তানদের মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে দাতব্য সংস্থাগুলোতে ছুটোছুটি করছেন অসহায় মায়েরা। তাদের অভিযোগ, উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশের কথা শুধু শুনছেন তারা, এখনও পর্যন্ত চোখে দেখেননি খাবার। এমনকি দুধের শিশুর জন্য কোথাও একটু দুধও পাচ্ছেন না অনেক মা।

মার্ভেত হিজাজি আর তার নয় সন্তান, গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) কারও পেটে পড়েনি এক টুকরো রুটি। পিনাট বাটারের এক প্যাকেট দিয়ে অপুষ্টিতে জন্ম নেয়া বাচ্চাটাকে শুধু অভুক্ত রাখেননি। গত রোববার (১৮ মে) মাত্র আধা কেজি স্যুপ পেয়েছেন পুরো পরিবারের জন্য, সোমবার (১৯ মে) পেয়েছেন অল্প কিছু সবজি আর আলু সেদ্ধ। বাধ্য হয়ে পানি খেয়ে ভরেছেন পেট।

মঙ্গলবার (২০ মে) দাতব্য সংস্থা থেকে পেয়েছেন আধা কেজি পাস্তা। বুধবার (২১ মে) অপর্যাপ্ত হলেও ভারত-ডাল খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই দাতব্য সংস্থা বন্ধ থাকায় সারাদিন কপালে জোটেনি এক ফোটা খাবার। বাচ্চাকে খাইয়েছেন পিনাট বাটার, কারণ দুধ তো উপত্যকা থেকে উধাও হয়ে গেছে।

মার্ভেত হিজাজি বলেন, ‘মেয়েটা এখন পর্যন্ত কিছু খায়নি। বাচ্চারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিতে যাচ্ছে। স্যুপ পেলে খায়, না পেলে না খেয়ে থাকতে হয়। পরিস্থিতি এমন যে, মৃত্যু কামনা করি নিজের। রাতে ঘুমাতে পারি না, বাচ্চারা কী খাবে, এই চিন্তা করে।’

হিজাজির পরিবার উপত্যকার উত্তরে গাজা শহরে থাকতেন। ইসরাইলের আগ্রাসনে স্বামী হারানোর পর পালিয়ে দক্ষিণের দেইর আল বালাহতে আসেন। যুদ্ধবিরতির পর গাজা শহরে ফিরে গেলেও এখন থাকতে হচ্ছে তাবুতে। হতাশা নিয়ে তিনি জানান, স্বামীকে হারিয়ে সব হারিয়েছেন তিনি। আরব দেশগুলো পর্যন্ত গাজার মানুষের চিৎকার পৌঁছায় না। এই যুদ্ধ থেকে কেউ তাদের বাঁচাতে আসে না। অথচ যুদ্ধের আগে আয় ছিল, খাবার ছিল। এখন একটুকরো রুটির জন্য যুদ্ধ করতে হয় তাদের।

মার্ভেত হিজাজি বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে ওকে দুধ দিতে পারছি না। এজেন্সিতে গেলাম। দুধ চাইলে তারা বললো, যখন এক বছর হলে টিকা দিতে আসবো, তখন এক ক্যান দুধ দেবে। ততদিন কি ওকে পানি খাইয়ে রাখবো? বাচ্চাদের একটুকরো রুটি পর্যন্ত দিতে পারছি না।’

হিজাজির মতো পরিস্থিতি গাজার প্রায় সব মায়েদের। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তারা। ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে শুরু করলেও সবজি, ফল কিংবা গম, চোখেও দেখেননি তারা। খাবারের অভাবে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। দাতব্য সংস্থার খাবারে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিশু।

গাজায় অবস্থানকারী একজন মা বলেন, ‘পৃথিবীতে আমরাই সবচেয়ে বেশি নির্মমতার শিকার। প্রতি দুই বছর পরপর, কিংবা প্রতি এক বছর পরপর আমাদের ওপর আগ্রাসন চালানো হয়। আমরা মাফ চাই। আল্লাহ ক্ষমাশীল। আমাদের কেন নিস্তার দেয়া হচ্ছে না। আমাদের ত্রাণ দিন।’

গাজা উপত্যকার অর্ধেকের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছে, জাতিসংঘ এমন সতর্কবার্তা দিলেও ইসরাইল বলেই যাচ্ছে উপত্যকায় পর্যাপ্ত খাবার আছে। গেলো ২ মার্চের পর চলতি সপ্তাহেই গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। তেল আবিবের পরিকল্পনা ছিল, শুধু সেই এলাকাতে ত্রাণ যাবে, যেই এলাকা ইসরাইলের সেনাদের দখলে। যেখানে ভেটো দিয়ে জাতিসংঘসহ বাকি মানবাধিকার সংস্থা জানায়, এতে করে পুরো উপত্যকায় আরও বাস্তুচ্যুত হবে মানুষ। জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, ইসরাইল যে ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তা সমুদ্রে একফোঁটা পানির সামিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

সন্তানকে খাবার দিতে দিশেহারা গাজার মায়েরা

আপডেট সময় : ০৬:১৭:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে শুরু করলেও উপত্যকার উত্তর থেকে দক্ষিণে শুধু খাবারের জন্য হাহাকার। ইসরাইলি হামলা আতঙ্কের মধ্যেই সন্তানদের মুখে একবেলা খাবার তুলে দিতে দাতব্য সংস্থাগুলোতে ছুটোছুটি করছেন অসহায় মায়েরা। তাদের অভিযোগ, উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশের কথা শুধু শুনছেন তারা, এখনও পর্যন্ত চোখে দেখেননি খাবার। এমনকি দুধের শিশুর জন্য কোথাও একটু দুধও পাচ্ছেন না অনেক মা।

মার্ভেত হিজাজি আর তার নয় সন্তান, গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) কারও পেটে পড়েনি এক টুকরো রুটি। পিনাট বাটারের এক প্যাকেট দিয়ে অপুষ্টিতে জন্ম নেয়া বাচ্চাটাকে শুধু অভুক্ত রাখেননি। গত রোববার (১৮ মে) মাত্র আধা কেজি স্যুপ পেয়েছেন পুরো পরিবারের জন্য, সোমবার (১৯ মে) পেয়েছেন অল্প কিছু সবজি আর আলু সেদ্ধ। বাধ্য হয়ে পানি খেয়ে ভরেছেন পেট।

মঙ্গলবার (২০ মে) দাতব্য সংস্থা থেকে পেয়েছেন আধা কেজি পাস্তা। বুধবার (২১ মে) অপর্যাপ্ত হলেও ভারত-ডাল খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার সেই দাতব্য সংস্থা বন্ধ থাকায় সারাদিন কপালে জোটেনি এক ফোটা খাবার। বাচ্চাকে খাইয়েছেন পিনাট বাটার, কারণ দুধ তো উপত্যকা থেকে উধাও হয়ে গেছে।

মার্ভেত হিজাজি বলেন, ‘মেয়েটা এখন পর্যন্ত কিছু খায়নি। বাচ্চারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিতে যাচ্ছে। স্যুপ পেলে খায়, না পেলে না খেয়ে থাকতে হয়। পরিস্থিতি এমন যে, মৃত্যু কামনা করি নিজের। রাতে ঘুমাতে পারি না, বাচ্চারা কী খাবে, এই চিন্তা করে।’

হিজাজির পরিবার উপত্যকার উত্তরে গাজা শহরে থাকতেন। ইসরাইলের আগ্রাসনে স্বামী হারানোর পর পালিয়ে দক্ষিণের দেইর আল বালাহতে আসেন। যুদ্ধবিরতির পর গাজা শহরে ফিরে গেলেও এখন থাকতে হচ্ছে তাবুতে। হতাশা নিয়ে তিনি জানান, স্বামীকে হারিয়ে সব হারিয়েছেন তিনি। আরব দেশগুলো পর্যন্ত গাজার মানুষের চিৎকার পৌঁছায় না। এই যুদ্ধ থেকে কেউ তাদের বাঁচাতে আসে না। অথচ যুদ্ধের আগে আয় ছিল, খাবার ছিল। এখন একটুকরো রুটির জন্য যুদ্ধ করতে হয় তাদের।

মার্ভেত হিজাজি বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে ওকে দুধ দিতে পারছি না। এজেন্সিতে গেলাম। দুধ চাইলে তারা বললো, যখন এক বছর হলে টিকা দিতে আসবো, তখন এক ক্যান দুধ দেবে। ততদিন কি ওকে পানি খাইয়ে রাখবো? বাচ্চাদের একটুকরো রুটি পর্যন্ত দিতে পারছি না।’

হিজাজির মতো পরিস্থিতি গাজার প্রায় সব মায়েদের। সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তারা। ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে শুরু করলেও সবজি, ফল কিংবা গম, চোখেও দেখেননি তারা। খাবারের অভাবে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। দাতব্য সংস্থার খাবারে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিশু।

গাজায় অবস্থানকারী একজন মা বলেন, ‘পৃথিবীতে আমরাই সবচেয়ে বেশি নির্মমতার শিকার। প্রতি দুই বছর পরপর, কিংবা প্রতি এক বছর পরপর আমাদের ওপর আগ্রাসন চালানো হয়। আমরা মাফ চাই। আল্লাহ ক্ষমাশীল। আমাদের কেন নিস্তার দেয়া হচ্ছে না। আমাদের ত্রাণ দিন।’

গাজা উপত্যকার অর্ধেকের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে যাচ্ছে, জাতিসংঘ এমন সতর্কবার্তা দিলেও ইসরাইল বলেই যাচ্ছে উপত্যকায় পর্যাপ্ত খাবার আছে। গেলো ২ মার্চের পর চলতি সপ্তাহেই গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাইল। তেল আবিবের পরিকল্পনা ছিল, শুধু সেই এলাকাতে ত্রাণ যাবে, যেই এলাকা ইসরাইলের সেনাদের দখলে। যেখানে ভেটো দিয়ে জাতিসংঘসহ বাকি মানবাধিকার সংস্থা জানায়, এতে করে পুরো উপত্যকায় আরও বাস্তুচ্যুত হবে মানুষ। জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, ইসরাইল যে ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, তা সমুদ্রে একফোঁটা পানির সামিল।