ঢাকা ১২:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

১২৬তম জন্মবার্ষিকী: তারুণ্যের অনুপ্রেরণায় নজরুল

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / ৩৮১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম কাজী নজরুল ইসলাম। আজ তার ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে এই বর্ণময় কবিকে। যিনি ছিলেন বিদ্রোহের আগুন, প্রেমের অরুণা, আর সংগীতের বুলবুল। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ) জন্ম নেয়া এই মহামানব বেঁচে আছেন কোটি তরুণের চেতনায়, সাহসে, স্বপ্নে। ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠেছিলেন নজরুল। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান তরুণরা যেন নজরুলের উত্তরাধিকার।

নজরুল মানেই বিপ্লব। রণহুঙ্কার যার কবিতায়। তার কবিতায় আরও এসেছে নিপীড়িত মানুষের কথা, বিদ্রোহীর গর্জন, আর বঞ্চিতের সংগ্রাম।

গানে আছে প্রেমের কোমলতা। এক হাতে তিনি বাজিয়েছেন যুদ্ধের দামামা, অন্য হাতে তুলেছেন প্রেমের বেহালা। হয়ে উঠেছেন ভালোবাসার বুলবুল।

১৯১৪ সালে কিশোর নজরুলকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের এক রুটির দোকান থেকে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুরে নিয়ে আসেন দারোগা কাজী রফিজুল্লাহ। স্কুলে ভর্তি করেন সপ্তম শ্রেণিতে।

নামাপাড়া গ্রামে নজরুলের স্মৃতি রাখা হয়েছে সযত্নে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রদর্শক আরিফ হাসান বলেন, ‘তার হাতে লিখা অসংখ্য চিঠি সেখানে দেখবেন। বাংলায় তো আছেই, এছাড়া উর্দু, হিন্দিতেও লিখা আছে।’

তার হাতে লিখা অসংখ্য চিঠি সেখানে দেখবেন। বাংলায় তো আছেই, এছাড়া উর্দু, হিন্দিতেও লিখা আছে।

১৯১৭ সালে তিনি সরাসরি যোগ দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। ১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা। আনন্দময়ীর আগমন কবিতার জন্য তাকে দেয়া হয় সশ্রম কারাদণ্ড।

এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চব্বিশের জুলাইয়ে আবারও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী হয়ে ওঠে দেশের ছাত্র-জনতা। যেন তরুণরা হয়ে উঠে এক একজন অদম্য ‘কাজী নজরুল’।

তার গান কবিতা হয়ে উঠেছিল ছাত্র-জনতার সাহস। সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী, চির উন্নত মম শির। অন্যায়, বৈষম্য, নিপীড়নের বিরুদ্ধে নজরুল হয়ে ওঠেন প্রেরণার বাতিঘর।

আরিফ হাসান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে তরুণদের মুখে কোন কবিতা ছিল? কোন গান ছিল? আমরা যদি জুলাই স্পিরিট বলি, আমরা যদি ধরতে চাই তাহলে কিন্তু নজরুলের একটাই কবিতা ছিল। আমাদের তরুণ সমাজ কিন্তু কথা বলছে। তারা মুখে বলে হোক, লিখে হোক বা দেয়াল লিখনে হোক, তারা কিন্তু বলছে।’

নজরুল বিশেষজ্ঞরা জানান, তরুণরা সবসময় নজরুলকে ধারণ করেন চিন্তা-চেতনায়। শুধু বিপ্লব নয়, সাম্য ও মানবতার জন্য কাজ করেছেন তিনি।

নজরুল একাধারে কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। শিল্পের নানা শাখায় রেখেছেন তার ক্ষুরধার মেধার স্বাক্ষর। তার গান, ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার বাণী ছড়িয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে।

লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, ‘কেউ কেউ আমাকে বুঝাতো যে একদিন তো পৃথিবীতে সাম্যবাদ আসবে, অত্যাচার-নিপীড়ন বন্ধ হবে, তখন নজরুলের কাব্যের আবেদন ফুড়িয়ে যাবে। এটা হলে ভালো হতো হয়তো। কিন্তু আমরা তো সেই সম্ভাবনা দেখছি না। যারা বিদ্রোহী হতে চাইবে, তাদের কাছে নজরুল আবেদন তৈরি করবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে করেছে, পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে করেছে।’

ইসলামি গান হোক বা শ্যামাসঙ্গীত, সবখানেই নজরুল ছিলেন এক সমান উজ্জ্বল। দর্শনের ক্ষেত্রেও তার চিন্তাধারা ছিল বিপ্লবাত্মক।

মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, ‘তিনি যখন কলকাতায় নতুন করে গান লিখতে শুরু করলেন, সুর দিতে শুরু করলেন, সে সময় পর্যন্ত কিন্তু বাঙালি মুসলমান পরিবারে, বিশেষ করে ভদ্রসমাজে গান নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইসলামের দৃষ্টিতে গান আদৌও জায়েজ কি না? সেই বিতর্ক চলছে। এটা নিয়ে অনেকে পত্রপত্রিকায় লিখছেন। সে সময়ে নজরুল এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। তিনি এসে ইসলামি গান দিয়ে গানকে মুসলমান পরিবারের একেবারে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলেন।’

এই ক্ষণজন্মা কবি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

১২৬তম জন্মবার্ষিকী: তারুণ্যের অনুপ্রেরণায় নজরুল

আপডেট সময় : ১২:০০:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম কাজী নজরুল ইসলাম। আজ তার ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে এই বর্ণময় কবিকে। যিনি ছিলেন বিদ্রোহের আগুন, প্রেমের অরুণা, আর সংগীতের বুলবুল। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ) জন্ম নেয়া এই মহামানব বেঁচে আছেন কোটি তরুণের চেতনায়, সাহসে, স্বপ্নে। ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে উঠেছিলেন নজরুল। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান তরুণরা যেন নজরুলের উত্তরাধিকার।

নজরুল মানেই বিপ্লব। রণহুঙ্কার যার কবিতায়। তার কবিতায় আরও এসেছে নিপীড়িত মানুষের কথা, বিদ্রোহীর গর্জন, আর বঞ্চিতের সংগ্রাম।

গানে আছে প্রেমের কোমলতা। এক হাতে তিনি বাজিয়েছেন যুদ্ধের দামামা, অন্য হাতে তুলেছেন প্রেমের বেহালা। হয়ে উঠেছেন ভালোবাসার বুলবুল।

১৯১৪ সালে কিশোর নজরুলকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের এক রুটির দোকান থেকে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুরে নিয়ে আসেন দারোগা কাজী রফিজুল্লাহ। স্কুলে ভর্তি করেন সপ্তম শ্রেণিতে।

নামাপাড়া গ্রামে নজরুলের স্মৃতি রাখা হয়েছে সযত্নে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রদর্শক আরিফ হাসান বলেন, ‘তার হাতে লিখা অসংখ্য চিঠি সেখানে দেখবেন। বাংলায় তো আছেই, এছাড়া উর্দু, হিন্দিতেও লিখা আছে।’

তার হাতে লিখা অসংখ্য চিঠি সেখানে দেখবেন। বাংলায় তো আছেই, এছাড়া উর্দু, হিন্দিতেও লিখা আছে।

১৯১৭ সালে তিনি সরাসরি যোগ দিয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। ১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা। আনন্দময়ীর আগমন কবিতার জন্য তাকে দেয়া হয় সশ্রম কারাদণ্ড।

এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চব্বিশের জুলাইয়ে আবারও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী হয়ে ওঠে দেশের ছাত্র-জনতা। যেন তরুণরা হয়ে উঠে এক একজন অদম্য ‘কাজী নজরুল’।

তার গান কবিতা হয়ে উঠেছিল ছাত্র-জনতার সাহস। সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী, চির উন্নত মম শির। অন্যায়, বৈষম্য, নিপীড়নের বিরুদ্ধে নজরুল হয়ে ওঠেন প্রেরণার বাতিঘর।

আরিফ হাসান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে তরুণদের মুখে কোন কবিতা ছিল? কোন গান ছিল? আমরা যদি জুলাই স্পিরিট বলি, আমরা যদি ধরতে চাই তাহলে কিন্তু নজরুলের একটাই কবিতা ছিল। আমাদের তরুণ সমাজ কিন্তু কথা বলছে। তারা মুখে বলে হোক, লিখে হোক বা দেয়াল লিখনে হোক, তারা কিন্তু বলছে।’

নজরুল বিশেষজ্ঞরা জানান, তরুণরা সবসময় নজরুলকে ধারণ করেন চিন্তা-চেতনায়। শুধু বিপ্লব নয়, সাম্য ও মানবতার জন্য কাজ করেছেন তিনি।

নজরুল একাধারে কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। শিল্পের নানা শাখায় রেখেছেন তার ক্ষুরধার মেধার স্বাক্ষর। তার গান, ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার বাণী ছড়িয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে।

লেখক ও গবেষক মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, ‘কেউ কেউ আমাকে বুঝাতো যে একদিন তো পৃথিবীতে সাম্যবাদ আসবে, অত্যাচার-নিপীড়ন বন্ধ হবে, তখন নজরুলের কাব্যের আবেদন ফুড়িয়ে যাবে। এটা হলে ভালো হতো হয়তো। কিন্তু আমরা তো সেই সম্ভাবনা দেখছি না। যারা বিদ্রোহী হতে চাইবে, তাদের কাছে নজরুল আবেদন তৈরি করবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে করেছে, পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে করেছে।’

ইসলামি গান হোক বা শ্যামাসঙ্গীত, সবখানেই নজরুল ছিলেন এক সমান উজ্জ্বল। দর্শনের ক্ষেত্রেও তার চিন্তাধারা ছিল বিপ্লবাত্মক।

মোরশেদ শফিউল হাসান বলেন, ‘তিনি যখন কলকাতায় নতুন করে গান লিখতে শুরু করলেন, সুর দিতে শুরু করলেন, সে সময় পর্যন্ত কিন্তু বাঙালি মুসলমান পরিবারে, বিশেষ করে ভদ্রসমাজে গান নিয়ে বিতর্ক চলছে। ইসলামের দৃষ্টিতে গান আদৌও জায়েজ কি না? সেই বিতর্ক চলছে। এটা নিয়ে অনেকে পত্রপত্রিকায় লিখছেন। সে সময়ে নজরুল এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। তিনি এসে ইসলামি গান দিয়ে গানকে মুসলমান পরিবারের একেবারে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলেন।’

এই ক্ষণজন্মা কবি ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। এরপর ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশেই।