১৮ বছর পর ফের মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতল আর্সেনাল

- আপডেট সময় : ১২:২৩:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / ৩৭৩ বার পড়া হয়েছে

লিসবনে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতল আর্সেনাল। স্টিনা ব্ল্যাকস্টেনিয়াস ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন, যা আর্সেনালকে ১৮ বছর পর ইউরোপীয় গৌরব এনে দিল।
শনিবার লিসবনের এস্তাদিও হোসে আলভালাদে স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে বেথ মিডের পাস থেকে ৭৫তম মিনিটে গোল করেন ব্ল্যাকস্টেনিয়াস। আর এই গোলের পরেই ইতিহাস গড়ে ফেলে আর্সেনাল।
২০০৭ সালে প্রথমবার মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জেতার পর আবার এই ট্রফি জিতল আর্সেনাল। তারাই এখনও পর্যন্ত একমাত্র ইংলিশ ক্লাব যারা মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। খেলার শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে আর্সেনালের খেলোয়াড়রা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন এবং গ্যালারির লাল-সাদা অংশে দৌড়ে যান উদযাপন করতে, যেখানে বার্সেলোনার বার্গান্ডি-নীল সমর্থকদের ভিড় ছিল বেশি।
আর্সেনাল স্ট্রাইকার আলেসিয়া রুসো বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বিশ্বাস করেছিলাম। আমাদের সামর্থ্য ছিল, শুধু সেটাকে কাজে লাগানো ছিল প্রশ্ন। আর আমরা সেটা করে দেখিয়েছি!’
এই ম্যাচে বার্সেলোনা ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। তারা গত পাঁচ বছরে চতুর্থ শিরোপার লক্ষ্যে খেলছিল এবং লিঁও ছাড়া আর কোনও দল টানা তিনবার এই শিরোপা জেতেনি। দুইবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী আইতানা বোনমাতি ও আলেক্সিয়া পুতেলাসের নেতৃত্বে দলটি নকআউটে উলফসবার্গ ও ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন চেলসিকে উড়িয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু আর্সেনাল দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু বাদ দিলে এবং সেরা সুযোগগুলো তৈরি করে। বার্সেলোনা গোলকিপার কাটা কোলের দুটি অসাধারণ সেভ ফ্রিদা মানুম ও ব্ল্যাকস্টেনিয়াসকে বাঁচিয়ে দেন, শেষমেশ ব্ল্যাকস্টেনিয়াস জাল খুঁজে নেন।
আর্সেনালের জন্য এটি ছিল একটি রূপকথার মত সমাপ্তি। মরশুমে কোচ ইয়োনাস আইডেভাল পদত্যাগ করেন এবং সহকারী কোচ রেনে সেগলার্স দায়িত্ব নেন। তাঁর অধীনে ইউরোপে দুর্দান্ত পথচলা শুরু করে দলটি। রিয়াল মাদ্রিদ ও আটবারের চ্যাম্পিয়ন লিঁও-র বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসার জয়েই আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। আর সেখান থেকেই এ দিনের এই ঐতিহাসিক জয়।
স্টেডিয়ামে বার্সেলোনার সমর্থকরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে শেষ দিকে তাদের চিৎকারও ম্যাচ ঘোরাতে পারেনি। বার্সার সবচেয়ে কাছাকাছি গোলের সুযোগ ছিল ক্লাউডিয়া পিনার শট, যা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বার কাঁপিয়ে ফিরে আসে। এরপর আর বার্সা ছন্দে ফিরতে পারেনি। ম্যাচের পরে বার্সেলোনার আইতানা বোনমাতি বলেন, ‘আমরা আমাদের সব সমর্থকদের কাছে দুঃখিত। যারা আমাদের সমর্থন করতে এসেছে। আমরা আবার চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
আর্সেনাল এই ম্য়াচের শুরুতে কিছুটা নার্ভাস ছিল, তবে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায়। তাদের প্রেসিং খেলার ছন্দ কেড়ে নেয় বার্সেলোনার। বাঁ দিক দিয়ে লং পাসে আক্রমণ চালিয়ে যায় আর্সেনাল। ইংল্যান্ডের রুসো পুরো ম্যাচে দলকে সামনে নিয়ে যান, শারীরিক শক্তি দিয়ে বল ধরে রেখে আক্রমণ সচল রাখেন।
২২তম মিনিটে আর্সেনাল গোল পেয়েছিল মনে হলেও, ভিএআরের পর অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। মানুমের লং শট ২৭ মিনিটে দুর্দান্তভাবে রক্ষা করেন কাটা কোল। বোনমাতিই একমাত্র বার্সা খেলোয়াড় যিনি প্রথমার্ধে ছন্দে ছিলেন। তাঁর ড্রিবল আর্সেনালকে চাপে ফেলে। তবে লিয়া উইলিয়ামসন তাঁর একটি শট ব্লক করে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনা আক্রমণে ঝড় তোলে। পিনার চিপ শট বারে লাগে, বোনমাতির শট বাঁচান গোলকিপার দাফনে ভ্যান ডমসেলার, ওনা বাতিয়ে তিনটি লং রেঞ্জ শট নেন। ৭২তম মিনিটে ব্ল্যাকস্টেনিয়াস কাটা কোলকে একা পেয়ে যান, তবে গোলকিপার পা বাড়িয়ে রক্ষা করেন। তবে দ্বিতীয়বার তিনি থামাতে পারেননি ব্ল্যাকস্টেনিয়াসকে, যিনি অবশেষে ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেন। এই জয় দিয়ে আর্সেনাল প্রমাণ করল, তারা ইউরোপের সেরা। এবং বহু বছর পর আবারও শীর্ষে ফিরে এসেছে।