ঢাকা ০৫:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল আজও জীবন্ত

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:০২:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / ৩৮৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলা সাহিত্যে ‘যুগস্রষ্টা’ কবি নজরুল। তার ঘটনাবহুল নাটকীয় জীবন। ২২ বছরের সংক্ষিপ্ত সৃজনশীলতারকালে সাহিত্য ও সংগীতে কবি যা দিয়েছেন তা বাঙালির আত্মপরিচয়, জাতীয় চেতনা ও গৌরবময় অমূল্য সম্পদ। প্রেম ও দ্রোহের কবি হয়ে তিনি বাংলা ভাষাভাষীদের হৃদয়ে এখনও বেঁচে আছেন। ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’ প্রতিপাদ্যে ময়মনসিংহের ত্রিশালে উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী।

রোদে পুড়ছে ত্রিশালের কাজিরশিমলা গ্রামের দারোগা বাড়ির উঠোন। নারকেল গাছটার তলায় দুখু মিয়ার ঘর। নিরব নিস্তব্ধ শান্ত পুকুর। যার জল আজও কবির স্পর্শ পেতে ব্যাকুল।

দেয়ালে দেয়ালে ফুটে আছে কবির হাতে লেখা নির্জন স্বাক্ষর, কোনো কবিতায় সে দুরন্ত, কোথাও প্রতিবাদে গগনের পানে অসিম ছুটে চলার প্রত্যয়। আবার কোথাও প্রেয়সীর কাছে পাওয়া বেদনার নিদারুণ বিলাপ।

ত্রিশালের কাজিরশিমলায় যে খাটে ঘুমাতেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। উঁকি দেয়া দখিনের এক টুকরো রোদের রেখায় ছবিগুলো যেন এখনো চঞ্চল হয়ে উঠছে। লাইব্রেরিতে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত নজরুল, তার সংগীত, গবেষণাকর্ম।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘জাতীয়ভাবে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন হয় না অনন্ত ১৫ বছর হচ্ছে।’

১৯১৪ সালে ভারতের আসনসোলের চায়ের দোকান থেকে দারোগা রফিজউল্লাহ কিশোর নজরুলকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে তার ঠাঁই হয়েছিল ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামে বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়িতে। দুই বাড়ি মিলিয়ে কবি ত্রিশালে ছিলেন প্রায় এক বছর। এর এক শতাব্দী পরও ত্রিশাল যেন এখনও কবির আবাসস্থল। দুই স্থানেই রয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র। কবির বর্ণাঢ্য কৈশোরকে আগলে ২০০৬ সালে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। যা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় নামেই অধিক পরিচিত।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘নজরুলের স্মৃতিকেন্দ্র আর তার সাহিত্য নিয়েই এই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় গড়া।’

সীমিত সচল জীবনে রচনা করেছেন গজল, কাব্য সংগীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সংগীত, খেয়াল, রাগপ্রধান, ঠুমরীসহ তিন হাজারেরও বেশি গান।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) সংগীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সুশান্ত সরকার বলেন, ‘সংগীতের যতগুলো শাখা-প্রশাখা আছে, এমন কোনো শাখা-প্রশাখা নেই যেখানে নজরুল ইসলামের পদচারণা ঘটেনি। অসাধারণ একজন প্রতিভা।’

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘তার গানে আমরা প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ, দোহ, সবকিছুর একটা মিশ্রণ পাই। নজরুল কী লিখে গেছেন, কী বাণী দিয়ে গেছেন আমাদের মধ্যে, এটা অসাধারণ।’

এছাড়া নজরুলের রচিত নাটকের ভাষা গীত ও কাব্যের যুগলবন্দিতে আবৃত। যা সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে। তবে দেশে নজরুল নাট্যচর্চায় উদাসীনতার কথা জানান ভক্তরা।

জাককানইবির নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিনি যে চেতনা দিয়ে থাকেন সেটি নাটকের মাধ্যমে আমরা সব ধরনের চেতনা পেয়ে থাকি। মূলত কখনও তাকে বিদ্রোহী হিসেবে দেখেছি, বিপ্লবী হিসেবে দেখেছি। আবার কখনও তাকে দেখেছি তিনি ধর্মীয় চেতনা নিয়ে কথা বলছেন।’

তবে নিজের সৃষ্টি দিয়ে প্রেম ও দ্রোহের কবি হয়ে বাঙালির হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন বহুমাত্রিক ঔজ্জ্বল্যে ঋদ্ধ কাজী নজরুল ইসলাম।

নিউজটি শেয়ার করুন

দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুল আজও জীবন্ত

আপডেট সময় : ১২:০২:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

বাংলা সাহিত্যে ‘যুগস্রষ্টা’ কবি নজরুল। তার ঘটনাবহুল নাটকীয় জীবন। ২২ বছরের সংক্ষিপ্ত সৃজনশীলতারকালে সাহিত্য ও সংগীতে কবি যা দিয়েছেন তা বাঙালির আত্মপরিচয়, জাতীয় চেতনা ও গৌরবময় অমূল্য সম্পদ। প্রেম ও দ্রোহের কবি হয়ে তিনি বাংলা ভাষাভাষীদের হৃদয়ে এখনও বেঁচে আছেন। ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’ প্রতিপাদ্যে ময়মনসিংহের ত্রিশালে উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী।

রোদে পুড়ছে ত্রিশালের কাজিরশিমলা গ্রামের দারোগা বাড়ির উঠোন। নারকেল গাছটার তলায় দুখু মিয়ার ঘর। নিরব নিস্তব্ধ শান্ত পুকুর। যার জল আজও কবির স্পর্শ পেতে ব্যাকুল।

দেয়ালে দেয়ালে ফুটে আছে কবির হাতে লেখা নির্জন স্বাক্ষর, কোনো কবিতায় সে দুরন্ত, কোথাও প্রতিবাদে গগনের পানে অসিম ছুটে চলার প্রত্যয়। আবার কোথাও প্রেয়সীর কাছে পাওয়া বেদনার নিদারুণ বিলাপ।

ত্রিশালের কাজিরশিমলায় যে খাটে ঘুমাতেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। উঁকি দেয়া দখিনের এক টুকরো রোদের রেখায় ছবিগুলো যেন এখনো চঞ্চল হয়ে উঠছে। লাইব্রেরিতে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত নজরুল, তার সংগীত, গবেষণাকর্ম।

স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘জাতীয়ভাবে নজরুল জয়ন্তী উদযাপন হয় না অনন্ত ১৫ বছর হচ্ছে।’

১৯১৪ সালে ভারতের আসনসোলের চায়ের দোকান থেকে দারোগা রফিজউল্লাহ কিশোর নজরুলকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে তার ঠাঁই হয়েছিল ত্রিশালের নামাপাড়া গ্রামে বিচুতিয়া ব্যাপারী বাড়িতে। দুই বাড়ি মিলিয়ে কবি ত্রিশালে ছিলেন প্রায় এক বছর। এর এক শতাব্দী পরও ত্রিশাল যেন এখনও কবির আবাসস্থল। দুই স্থানেই রয়েছে নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র। কবির বর্ণাঢ্য কৈশোরকে আগলে ২০০৬ সালে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। যা নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় নামেই অধিক পরিচিত।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘নজরুলের স্মৃতিকেন্দ্র আর তার সাহিত্য নিয়েই এই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় গড়া।’

সীমিত সচল জীবনে রচনা করেছেন গজল, কাব্য সংগীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সংগীত, খেয়াল, রাগপ্রধান, ঠুমরীসহ তিন হাজারেরও বেশি গান।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) সংগীত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সুশান্ত সরকার বলেন, ‘সংগীতের যতগুলো শাখা-প্রশাখা আছে, এমন কোনো শাখা-প্রশাখা নেই যেখানে নজরুল ইসলামের পদচারণা ঘটেনি। অসাধারণ একজন প্রতিভা।’

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘তার গানে আমরা প্রেম, ভালোবাসা, বিরহ, দোহ, সবকিছুর একটা মিশ্রণ পাই। নজরুল কী লিখে গেছেন, কী বাণী দিয়ে গেছেন আমাদের মধ্যে, এটা অসাধারণ।’

এছাড়া নজরুলের রচিত নাটকের ভাষা গীত ও কাব্যের যুগলবন্দিতে আবৃত। যা সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে। তবে দেশে নজরুল নাট্যচর্চায় উদাসীনতার কথা জানান ভক্তরা।

জাককানইবির নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিনি যে চেতনা দিয়ে থাকেন সেটি নাটকের মাধ্যমে আমরা সব ধরনের চেতনা পেয়ে থাকি। মূলত কখনও তাকে বিদ্রোহী হিসেবে দেখেছি, বিপ্লবী হিসেবে দেখেছি। আবার কখনও তাকে দেখেছি তিনি ধর্মীয় চেতনা নিয়ে কথা বলছেন।’

তবে নিজের সৃষ্টি দিয়ে প্রেম ও দ্রোহের কবি হয়ে বাঙালির হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন বহুমাত্রিক ঔজ্জ্বল্যে ঋদ্ধ কাজী নজরুল ইসলাম।