মধুমাস জ্যৈষ্ঠ; ফুল-ফলে সমৃদ্ধ আবহমান বাংলার রূপ

- আপডেট সময় : ১০:১৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
- / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে

দখিনা হাওয়ায় দোলায় উতলা প্রকৃতি। মনপবনেও লেগেছে তার ছোঁয়া। নাগরদোলায় ভর করে উষ্ণ খরা কিংবা হঠাৎ বৃষ্টিতে মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুভাগমন। প্রকৃতির পরম লালিত ছোঁয়ায় পত্র-পল্লবের হামাগুড়িতে ভেসে ওঠে ফুল আর ফল। প্রকৃতির এমন সৃজনশীল পরিবর্তন সবই গ্রীষ্মের স্মারক।
জ্যৈষ্ঠের প্রখর রোদে ফুলের সুরভীতে কুঞ্জপথ আজ লাবণ্যময়। ফুলের সুবাস ছড়িয়ে নগরের অলিগলিতে যেন ফুলের তোরণ। যানজটের ফাঁক গলে রঙিন ফুলেদের লুকোচুরি। যে আবেদনে আটকে যায় পথচারির চোখ।
এই যেমন মঞ্জরির হলুদ ফুটেছে আলো হয়ে, আওড়াচ্ছে মধুমাসেও, থামেনি সোনালুদের জৌলস। আর কৃষ্ণচূড়া-জারুলের দাপট কমলেও বাগানবিলাস, পালান, বকুল, কাঠগোলাপ, চম্পাদের পদচারণায় মুগ্ধ রুপন্তিরা। সঙ্গে বিদেশি ফুলের আলিশান দেমাগ দেখার মত।
বাগানে বাগানে রসালো ফল নামাতে চাষিদের চঞ্চলতা। পরমার মোহনীয় আবেদনে ফলের ম ম গন্ধে মধুময় হাট-বাজার। মধুমাস জ্যৈষ্ঠে শীর্ষ চাহিদা আম আর লিচুর পাশাপাশি কাঁঠাল, আনারস, জাম, জামরুল, ডেউয়া, বেলসহ বাহারি ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। দাম নিয়ে অবশ্য ক্রেতাদের মন্তব্য আর কত পরে কমে পাবে রসালো ফল।
ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘জামরুল আমি নিজে গাছে উঠে পেরে খেয়েছি। এই কারণে দোকানদারদের সাথে লেগে যায় আমি কেন সব বুঝি।’
দোকানদারদের একজন বলেন, ‘আমাদের সব ধরনের খরচ দিয়ে তারপর মুনাফা করতে হয়।’
তাল-পানি খাওয়ার অনবদ্য স্মৃতি গ্রামীণ জনপদের চিরায়িত দৃশ্য। তবে, এই শহরে জ্যৈষ্ঠের দিনে তালের শাঁস খাওয়ার সঙ্গে পুরোনো স্মৃতিতে ফেরা। নিম্নবিত্তের সংসারে বিদেশি ফল খাওয়ার সাধ হয়তো খুব একটা হয় না কিন্তু মধুমাসে দেশিয় ফল খাইয়ে তৃষ্ণা মেটানোর অভিপ্রায়। দাম যত হোক সামর্থ্যের নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও সব শ্রেণি পেশার মানুষই স্বাদ নিয়ে থাকেন মৌসুমি ফলের।
ক্রেতাদের একজন বলেন, ‘ছোটকালের স্মৃতি তো আর শহরের এসে মিলবে না। গ্রামে আমরা গাছ থেকে পেরে খেতাম।’
ফল ব্যবসায় পঞ্চাশ পার করে উপলব্ধি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে ফল পাকার গতি। জ্যৈষ্ঠের ফল দেরিতে পাকার পেছনে দায়ী প্রকৃতি বদল। প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখকরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ঋতু হারাচ্ছে ভারসাম্য। তাই প্রকৃতি সুরক্ষায় ফুল-ফল রোপণে উৎপাদক শ্রেণিকে উদ্বুদ্ধ ও গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দেন।
প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য না থাকায় আমাদের ফলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এই কারণে আমাদের মৌসুম ওলটপালট হচ্ছে।’
অনেক নিম্নবিত্ত জ্যৈষ্ঠের ফল খেয়ে সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মধুমাসের। নিয়মিত ফল খাওয়ার সুযোগ না থাকলেও মৌসুমি ফলে রয়েছে ওষুধিগুণ। পুষ্টিবিদরা মনে করেন, মৌসুমি ফলের পুষ্টিগুণ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। তাই পরিমিত মাত্রায় ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুল আরেফিন বলেন, ‘যেহেতু এই সময় আমরা বেশি ফল পেয়ে থাকি তাই কারো কারো ক্ষেত্রে পরিমিত পরিমাণ খাওয়ায় ভালো।’