পরমাণু নিয়ে ইরানের সঙ্গে সমঝোতায় ট্রাম্পের চোখ নোবেলে!

- আপডেট সময় : ০১:২৫:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / ৩৩৯ বার পড়া হয়েছে

পরমাণু সমৃদ্ধকরণ নিয়ে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হতে পারেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ঠিক এ কারণেই তেহরানের সঙ্গে সুর নরম করে বারবার আলোচনার পথে হাঁটছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় নিরাপত্তা আর পরমাণু প্রকল্পে হামলার আশঙ্কা অতীতের চেয়ে তীব্র হওয়ায় ওয়াশিংটনের প্রস্তাব আমলে নিতে পারে তেহরানও।
গেল সপ্তাহে পরমাণু ইস্যুতে ইতালির রোমে পঞ্চম ধাপের বৈঠক শেষে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতির আভাস দেয় ওয়াশিংটন ও তেহরান। যদিও পরমাণু সমৃদ্ধকরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে শর্ত বা প্রস্তাব ছিল তা আমলে নেয়নি ইরান। যার অর্থ এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার কোনো আলামত পাওয়া যাচ্ছে না।
বরং গেল সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে সমঝোতা না হলেও টিকে থাকার সক্ষমতা আছে তেহরানের। মূলত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে ইরান ট্রাম্পের সামনে সুর নরম করতে পারে- এমন গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন পেজেশকিয়ান। এখন প্রশ্ন উঠছে, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এত আগ্রহের কারণ কী?
প্রথম মেয়াদের তুলনায় দ্বিতীয় মেয়াদে ইরান ইস্যুতে অনেকটাই সুর নরম করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরমাণু স্থাপনা ধ্বংসের হুমকি দিলেও সরে আসছেন না পরমাণু চুক্তির আলোচনা থেকে। বরং ইরান ও এর অক্ষশক্তিগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে নিয়োগ দিয়েছেন স্টিভ উইটকফের মতো দূরদর্শী প্রতিনিধিকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু ইস্যুতে ট্রাম্পের এমন মনোভাব ইঙ্গিত করে, তেহরানের কয়েক দশকের বিরোধ মিটিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার নজির স্থাপন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো ট্রাম্পের নজর এখন নোবেল পুরস্কারের দিকে। আধুনিক বিশ্বে যখন পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েই চলছে, তখন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করতে পারলে- একে ব্যাজ অব অনার হিসেবেই ধারণ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিশ্লেষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আপনি যদি ট্রাম্পের বক্তব্য খেয়াল করে শোনেন, তাহলে বুঝতে পারবেন। বিষয়টি শুনতে খুব সামান্য মনে হলেও মনে রাখতে হবে এই একই কথা ট্রাম্প বহুবার বলেছেন। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে চান। তার বিশ্বাস, ইরানের সঙ্গে আলোচনায় সফল হলে তিনি অবশ্যই পুরস্কার জিতবেন।’
কিন্তু পরমাণু ইস্যুতে ইরান কেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় যাবে? তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে। শুরুতে তেহরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হলেও, দেশটির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপোস করা ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম ইরান। তবে বিশ্লেষকদের মত, পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের সামরিক হামলার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতায় আসতে পারে তেহরান।
বিশ্লেষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ইরানের পরমাণু প্রকল্পে সামরিক হামলার সম্ভাবনা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন তীব্র। যে কোনো সময় তাদের ভূখণ্ডে সামরিক হামলার আশঙ্কা রয়েছে।’
ফলে বৈঠক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে না- এমন গুঞ্জন এখনও মেনে নেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে মত বিশ্লেষকদের। বরং তারা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নিয়ে কিছুটা নমনীয় শর্ত দিলে, তেহরান বরং তা বিবেচনা করতে পারে।