ঢাকা ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • / ৩৮৪ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন মার্কিন প্রস্তাবে ইসরাইল সম্মতি জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবে হামাসের মূল দাবিগুলোই নেই। এই প্রস্তাবে গাজা আগ্রাসন আর ক্ষুধামুক্ত হবে না বলেও দাবি করা হয়। শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে হামাসের। দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসকে ৬০ দিনের মধ্যে ১০ জীবিত ইসরাইলি বন্দিকে হস্তান্তর করতে হবে। সঙ্গে ফিরিয়ে দিতে হবে ১৮ ইসরাইলি বন্দির মরদেহ। বিনিময়ে ইসরাইল ফিরিয়ে দেবে কারাগারে বন্দি ১ হাজার ২০০ বেশি ফিলিস্তিনিকে।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই মধ্যস্থতা করে আসলেও প্রস্তাবগুলো বরাবরই ছিল ইসরাইলের পক্ষে। নতুন মার্কিন প্রস্তাবে বন্দিদের মুক্তি আর সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব থাকলেও নেই স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতির কোন আভাস। আর তাই ইসরাইল সম্মত হলেও, মার্কিন ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

গোষ্ঠীটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে যেই প্রস্তাব দিয়েছে তাতে গাজায় গণহত্যা বন্ধ হবে না, দুর্ভিক্ষও দূর হবে না। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো জানিয়েছে, এই প্রস্তাবে হামাসের কোনো দাবিই পূরণ হবে না।

প্রস্তাবের পুরো বিস্তারিত না আসলেও হামাস বলছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি, উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার, কিংবা নিরবচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ সরবরাহ, কোনটিই এতে নিশ্চিত হয়নি। প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির মধ্যে জীবিত আর মৃত ২৮ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস।

ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পাবে ১ হাজার ২০০ বেশি ফিলিস্তিনি। যদিও হামাস বলছে, ৬০ দিন পর আবারও নতুন করে আগ্রাসন চায় না স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে দুই-একদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে হামাস।

এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে তৎপরতা দেখালেও অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরের চিত্র ভিন্ন। গেল কয়েক দশকের মধ্যে চলতি সপ্তাহেই অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতি সর্বোচ্চ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের বেসরকারি সংস্থা পিস নাও বলছে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত নিরসনে অসলো চুক্তি সইয়ের ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর, ইহুদি বসতি স্থাপনের সবচেয়ে বড় নজির এটি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২২টি নতুন বসতি স্থাপন করা হবে পশ্চিমতীরের বিভিন্ন স্থানে, যেখান থেকে ইসরাইল বসতি সরিয়ে নিয়েছিলো। ইসরাইলি পার্লামেন্ট এরই মধ্যে ওই প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন ইসরাইলের এই পদক্ষেপকে শান্তি ভঙ্গের আরেকটি উদ্যোগ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

যদিও অবরুদ্ধ পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুজালেম আর অবরুদ্ধ গোলান মালভূমিতে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি। গেলো কয়েক মাস ধরেই পশ্চিমতীরে প্রথমবারের মতো সেনা অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে করে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।

যুদ্ধবিরতি আলোচনা, আগ্রাসন আর পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার মধ্যেই ত্রাণ নিয়ে মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা গাজা উপত্যকায়। ত্রাণ পৌঁছালেও তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় গাজা শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে ঘটছে লুটের ঘটনা।

হামাস বলছে, গাজা শহরের একটি মার্কেটে তাদের নিরাপত্তা কর্মীদের হত্যা করেছে ইসরাইল। ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদেরও প্রতিনিয়ত ত্রাণ নিতে লড়াই করতে হচ্ছে। দিতে হচ্ছে প্রাণ।

বৃহস্পতিবারও উপত্যকায় প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণ গেছে। উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসাসেবার জরুরি অবস্থার মধ্যেই উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় আল আওদা হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। উত্তর গাজায় এটিই ছিল একমাত্র সক্রিয় হাসপাতাল।

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের

আপডেট সময় : ০৪:৫৬:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন মার্কিন প্রস্তাবে ইসরাইল সম্মতি জানালেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবে হামাসের মূল দাবিগুলোই নেই। এই প্রস্তাবে গাজা আগ্রাসন আর ক্ষুধামুক্ত হবে না বলেও দাবি করা হয়। শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে হামাসের। দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসকে ৬০ দিনের মধ্যে ১০ জীবিত ইসরাইলি বন্দিকে হস্তান্তর করতে হবে। সঙ্গে ফিরিয়ে দিতে হবে ১৮ ইসরাইলি বন্দির মরদেহ। বিনিময়ে ইসরাইল ফিরিয়ে দেবে কারাগারে বন্দি ১ হাজার ২০০ বেশি ফিলিস্তিনিকে।

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই মধ্যস্থতা করে আসলেও প্রস্তাবগুলো বরাবরই ছিল ইসরাইলের পক্ষে। নতুন মার্কিন প্রস্তাবে বন্দিদের মুক্তি আর সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব থাকলেও নেই স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতির কোন আভাস। আর তাই ইসরাইল সম্মত হলেও, মার্কিন ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।

গোষ্ঠীটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে যেই প্রস্তাব দিয়েছে তাতে গাজায় গণহত্যা বন্ধ হবে না, দুর্ভিক্ষও দূর হবে না। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো জানিয়েছে, এই প্রস্তাবে হামাসের কোনো দাবিই পূরণ হবে না।

প্রস্তাবের পুরো বিস্তারিত না আসলেও হামাস বলছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি, উপত্যকা থেকে সেনা প্রত্যাহার, কিংবা নিরবচ্ছিন্নভাবে ত্রাণ সরবরাহ, কোনটিই এতে নিশ্চিত হয়নি। প্রস্তাব অনুযায়ী, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির মধ্যে জীবিত আর মৃত ২৮ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস।

ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পাবে ১ হাজার ২০০ বেশি ফিলিস্তিনি। যদিও হামাস বলছে, ৬০ দিন পর আবারও নতুন করে আগ্রাসন চায় না স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে দুই-একদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে হামাস।

এদিকে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে তৎপরতা দেখালেও অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরের চিত্র ভিন্ন। গেল কয়েক দশকের মধ্যে চলতি সপ্তাহেই অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরে ইহুদি বসতি সর্বোচ্চ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের বেসরকারি সংস্থা পিস নাও বলছে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত নিরসনে অসলো চুক্তি সইয়ের ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর, ইহুদি বসতি স্থাপনের সবচেয়ে বড় নজির এটি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২২টি নতুন বসতি স্থাপন করা হবে পশ্চিমতীরের বিভিন্ন স্থানে, যেখান থেকে ইসরাইল বসতি সরিয়ে নিয়েছিলো। ইসরাইলি পার্লামেন্ট এরই মধ্যে ওই প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। গাজায় যুদ্ধ চলাকালীন ইসরাইলের এই পদক্ষেপকে শান্তি ভঙ্গের আরেকটি উদ্যোগ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

যদিও অবরুদ্ধ পশ্চিমতীর, পূর্ব জেরুজালেম আর অবরুদ্ধ গোলান মালভূমিতে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থি। গেলো কয়েক মাস ধরেই পশ্চিমতীরে প্রথমবারের মতো সেনা অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে করে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।

যুদ্ধবিরতি আলোচনা, আগ্রাসন আর পশ্চিমতীরে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার মধ্যেই ত্রাণ নিয়ে মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোটা গাজা উপত্যকায়। ত্রাণ পৌঁছালেও তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় গাজা শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে ঘটছে লুটের ঘটনা।

হামাস বলছে, গাজা শহরের একটি মার্কেটে তাদের নিরাপত্তা কর্মীদের হত্যা করেছে ইসরাইল। ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদেরও প্রতিনিয়ত ত্রাণ নিতে লড়াই করতে হচ্ছে। দিতে হচ্ছে প্রাণ।

বৃহস্পতিবারও উপত্যকায় প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণ গেছে। উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসাসেবার জরুরি অবস্থার মধ্যেই উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় আল আওদা হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। উত্তর গাজায় এটিই ছিল একমাত্র সক্রিয় হাসপাতাল।