বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ ভারতের ওড়িশা থেকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এর প্রভাবে ঝড়ো বাতাসসহ ভারী বৃষ্টির কবলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সব রাজ্য। কেরালার আট রাজ্যে ‘রেড অ্যালার্টের’ পাশাপাশি অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস পশ্চিম উপকূলসহ ভারতের বড় অংশে।
পঞ্জিকার পাতায় বর্ষা আসতে বাকি এখনো দুই সপ্তাহ। এরমধ্যেই ঝড়বৃষ্টির দাপটে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের কপালে।
ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠছে সমুদ্র, বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বর্ষায় বাঁধের ভাঙন আর দুর্যোগের শঙ্কা মাথায় নিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন অনেকে। দুর্যোগ শেষে ভিটেমাটিতে ফিরে অনেককেই সংসার শুরু করতে হয় শূন্য থেকে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আজ (শুক্রবার, ৩০ মে) পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে জারি রয়েছে সর্বোচ্চ আবহাওয়া সতর্কতা রেড অ্যালার্ট। আগামীকাল (শনিবার, ৩১ মে) পর্যন্ত দুইদিন কলকাতাসহ রাজ্যজুড়ে প্রবল বৃষ্টি, দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি, আগামী রোববার (১ জুন) পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারসহ বিভিন্ন জেলায় মুষলধারে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি এলাকায় ধস নামার আভাস রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনা করেছে প্রশাসন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার পূর্বাভাস আছে ভারী বর্ষণের। এক্ষেত্রে সরকারের যা যা করণীয় তা করা হচ্ছে।’
শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নিম্নচাপটি অবস্থান করছিল বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমে ওড়িষা উপকূলের কাছে। সেখান থেকে বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তরমুখী নিম্নচাপটি এগোচ্ছে স্থলভাগের দিকে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় যা রূপ নেবে গভীর নিম্নচাপে। এর প্রভাবে ওড়িষা ও ছত্তিশগড়, পূর্বের বিহার রাজ্যেও জেলায় জেলায় ভারী বৃষ্টি অব্যাহত। নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা আর আসামসহ পুরো উত্তরপূর্বাঞ্চলে জারি রয়েছে ভারি বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের সতর্কতা।
আরব সাগর থেকে বঙ্গোপসাগরে এগিয়ে আসা নিম্নচাপের প্রভাবে ভারতের বড় অংশে সপ্তাহব্যাপী বর্ষার ঘনঘটায় বজ্রসহ ঝড়বৃষ্টির কবলে কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, দিল্লিসহ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। রয়েছে জলাবদ্ধতা আর বন্যার আভাস। কেরালায় আট রাজ্যে রেড অ্যালার্ট আর বাকি সব রাজ্যে অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, বিভিন্ন এলাকায় হতে পারে ২৪ ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় শুক্রবার রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিঘ্নিত রেল যোগাযোগ।
এদিকে, উত্তর প্রান্তের জম্মু-কাশ্মীরেও মুষলধারে বৃষ্টি আর ঝড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত। হিমালয় পর্বতমালার কোলঘেঁষা রাম্বান শহরে শেকড় উপড়ে পড়া গাছপালার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর, যানবাহন।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘বজ্রসহ ঝড়ের মধ্যে পড়েছিল এই এলাকা। আমার গাড়ি এখানেই দাঁড় করানো ছিল। অনেকবার এখানে গাড়ি দাঁড় করিয়েছে। থানার ঠিক সামনে একটা গাছ ছিল। বাতাসের তীব্রতায় গাছটা দেয়াল ভেঙে পড়েছে একদম সোজা আমার গাড়ির ওপর।’
শুক্র-শনিবার জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খান্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখান্ড, রাজস্থানেও ঝড়বৃষ্টির আভাস আছে। দেড়শ' কোটি মানুষের দেশ ভারতে জনসংখ্যার বড় অংশের জীবন-জীবিকা কৃষিনির্ভর বলে বৃষ্টিপাত জরুরি। কিন্তু দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে অতিবৃষ্টিতে বন্যা-জলাবদ্ধতায় জনভোগান্তিও নিয়মিত ঘটনা।