শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ

- আপডেট সময় : ১১:৩১:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / ৩৬৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে রাজনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপির। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদের সূচনা ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মৌলিক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও ৭৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় দুর্ভিক্ষ ও গণতন্ত্রহীনতার।
শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতে ৭৫ এর ৭ নভেম্বর সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার মধ্যে দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আসেন মেজর জিয়াউর রহমান।
পরবর্তীতে ৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে চলে আসেন ক্ষমতার কেন্দ্রে। বাকশালের বিপরীতে ফিরিয়ে আনেন বহুদলীয় গণতন্ত্র। এর ঠিক বছর খানেক পর প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
নতুন দল গঠনের মধ্যদিয়ে দেশের মানুষকে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের সাথে। জোর দেন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ, জাতি নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিকের জাতীয় ঐক্যের। সাবেক প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়াউর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদ নিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রভাব বিস্তার করায় দেশের মানুষের মধ্যে যে শঙ্কা ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিলো সেটি মোকাবেলায় জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সূচনা করেছিলেন মেজর জিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আধিপত্যবাদের হাত থেকে মুক্ত করে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জাতীয়তাবাদের প্রচলন করেন। ত্যাগ তিতিক্ষার পর ৭১ সালে আমরা স্বাধীন জাতি পেয়েছি। সাধারণ মানুষের সংগ্রামের ফলেই এটি পেয়েছি। এই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যেন কোনোভাবে ক্ষুণ্ন না হয় সেজন্য তিনি বাংলাদেশের জনগণের সামনে জাতীয়তাবাদের কথা প্রচার করেছেন।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরীও মনে করেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদের ছায়া দেশের রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। এর বিরুদ্ধেই মেজর জিয়া অবস্থান নেয়ায় জনমানুষের নেতায় পরিণত হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা একটা স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি। আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করবো কিন্তু আমরা আধিপত্য মেনে নিব না। এটাকে আমি বলবো জিয়াউর রহমানের রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু। এবং সেটার ওপর ভর করে তিনি জাতীয়তাবাদের ডেফিনিশন দিয়েছেন।’
তবে জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও আধিপত্যবাদী অবস্থান থেকে থেকে বিএনপি সরে আসছে কি-না সে প্রশ্নও রাখেন ড. দিলারা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যে রাজনীতি ইন্ডিয়াকে তোষণ করা এটার বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করতে পারব। এবং এ দলটা যখন সরকার গঠন করবে তখন আমরা ভারতীয় আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসবো। কিন্তু এখন যে বিএনপি, এই বিএনপিকে আমি চিনি না।’
বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা ড. খন্দকার মোশাররফের দাবি বিএনপি তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী অবস্থান ধারণ করে রাজনীতি করছে। আর সেকারণেই এখনো ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে বিএনপি । আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন বলেও মনে করেন জ্যেষ্ঠ এ রাজনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে প্রকৃতপক্ষে হত্যা করা হয় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে। কারা ষড়যন্ত্র করেছে যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না। অর্থাৎ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ভালোবেসে যারা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এটা যারা পছন্দ করে নাই।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অবস্থান দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।