হিমবাহ গলে তলিয়ে গেছে সুইজারল্যান্ডের প্রায় পুরো গ্রাম

- আপডেট সময় : ০৫:০৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে

জলবায়ু পরিবর্তনে করুণ পরিণতির দিকে চলে গেছে সুইজারল্যান্ডের ভালাইস উপজেলার দৃষ্টিনন্দন একটি গ্রাম। ২৮ মে ভয়াবহ পাহাড় ধসে হিমবাহ গলে তলিয়ে গেছে প্রায় পুরো গ্রাম। ছবির মতো সুন্দর এই গ্রামে পড়েছে বরফ, মাটি আর পাথরের স্তূপ। লনজা নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গ্রামে তৈরি হয়েছে আবর্জনার বিশাল লেক। এই গ্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় হিমবিজ্ঞানীরা।
সুইজারল্যান্ডের গ্রাম ব্ল্যাটেন। পাথর ধসে বড় হিমবাহ গলে যার অনেকাংশই ডুবে গেছে পানির নিচে। স্যাটেলাইটের ছবিতে স্পষ্ট, দুর্যোগের আগে আর পরের চিত্র। পাথরধস আর হিমবাহ গলে বড় ধরনের ভূমি ধসে বিলীন হয়ে যেতে পারে পুরো গ্রাম।
বুধবার বিকেলে সুইজারল্যান্ডের আল্পস থেকে পাথর ধসের পর বিশাল হিমবাহ গলে যায়। ধসে পড়ে বরফ আর পাথর ভেঙে পড়তে থাকে ব্ল্যাটেন গ্রামের দিকে। পাথর ধসের আশঙ্কায় এই গ্রাম আগেই খালি করে রাখা হয়েছিল। হিমবাহ ধসে পড়ার পর দেখা গেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ গ্রামই তলিয়ে গেছে। গ্রাম দিয়ে বয়ে চলা লনজা নদীর প্রবাহও ভূমি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, গেল দুই সপ্তাহ ধরে এখানে অস্থিতিশীলতার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ফলশ্রুতিতে পাহাড় ধসে হিমবাহ গলে গিয়ে সেগুলো নিচে পড়ে গেছে। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে পেরে ওঠা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
হিমবাহবিজ্ঞানী ড. মিলিন জ্যাকমার্ট বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে পর্বত থেকে পাথর পড়ছিল হিমবাহের ওপর। হিমবাহগুলো পাথরের ওজন নিতে পারেনি। এরপর বরফ গলে পাথরও নিচের দিকে নেমে আসে। বুধবার হিমবাহের বরফ আর অনেক পাথর ভেঙে নিচে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা হয়েছে। উষ্ণায়ন বাড়ায় বরফ দ্রুত গলছে, পাথরও দ্রুত ভাঙছে। এই অবস্থায় পর্বত কখনও স্থিতিশীল থাকে না।’
পৃথিবীর নানা প্রান্তের পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। পর্বতগুলোতে যার প্রভাব আরো দ্রুত পড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ আনা না গেলে এই ধস বাড়তে থাকবে বলে জানা বিজ্ঞানীরা। যেহেতু পাথর ধসে পড়ছে হিমবাহের ওপর, পাথরের পরিমাণ পর্বতগুলোতে বেশি থাকায় সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়।
ড. মিলিন জ্যাকমার্ট বলেন, ‘যা দেখলাম, সেটিই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন এই ধরনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করি, নিশ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিষয়টা খুবই ভয়াবহ। স্থানীয়দের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। তারা কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলে উঠবে জানি না।’
সুইজারল্যান্ড সেনাবাহিনী পুরো বিষয়টি প্রত্যক্ষ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লনজা নদীর প্রবাহ দুই কিলোমিটারজুড়ে আবর্জনার কারণে বন্ধ থাকায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।