ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বাজেট ২০২৫-২৬: কমছে আকার, প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জে নেই কমতি

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:২৬:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সংসদ নেই, সেজন্য বাজেটে কীভাবে প্রতিফলন হবে জনমতের? কোন প্লাটফর্মেই বা বাজেট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে? কীসের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এই আলোচনা এখন অর্থনীতির বিভিন্ন অঙ্গনে। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে মাসব্যাপী খোলামেলা আলোচনা করে অধ্যাদেশের পথে হাঁটতে হবে সরকারকে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলমান অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আট হাজার কোটি টাকা কম। বিশ্লেষকরা বলছেন, যৌক্তিক রাজস্ব পরিকল্পনা এবং বাজেট ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করাই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এরইমধ্যে বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এবার যেহেতু কোনো সংসদ নেই, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বাজেটের বিভিন্ন ধারা উপধারা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই বাজেট অনুমোদন বা অধ্যাদেশের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে হবে বলে মতামত দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘যেহেতু জুন মাসের ভেতরে বাজেট পেশ করার প্রয়োজন পড়ে সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উচিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের বাজেটের বিভিন্ন ধারা উপধারাগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংসদের বাইরের প্রক্রিয়ার ভেতরে তারা জবাবদিহিতাকে তুলে ধরছেন কি না। তারা এটাতে আগ্রহী আছেন কি না। উনাদের জন্য তাহলে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় আরও বেশি এনগেজড হতে হবে।’

আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলমান অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আট হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবার প্রথম কমছে বাজেটের আকার। অন্যদিকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে বড় প্রকল্প হাতে না নিলেও পুরোনো প্রকল্পের যাঁতাকলে এবারও পিষ্ট শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। যেখানে এই দুই খাতকেই বেশি গুরুত্ব দিতে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমি দুটি জিনিস দেবো। যেগুলো আমার দরিদ্র মানুষ বা প্রান্তিক মানুষরা আছেন তাদের চাহিদার জায়গায় বরাদ্দটা দেয়া হচ্ছে কি না। চিকিৎসা, শিক্ষার মতো জায়গাগুলোতে খরচগুলো বাড়ছে কি না।’

তারা বলছেন, বড় প্রকল্পগুলোকে এড়িয়ে নজর দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্য, শিক্ষার পাশাপাশি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সামাজিক সুরক্ষা খাতকে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা- এই তিনটাকে যদি আমরা বাড়াতে চাই তাহলে এক হতে পারে যে বর্তমানে যে সম্পদ আছে এখানে পুনর্বণ্টন করতে হবে। সুতরাং শিক্ষায় দুই শতাংশের জায়গায় যদি আমি চার শতাংশ নিতে চাই তাহলে আমাকে কিন্তু আরও দুই শতাংশ অন্য জায়গা থেকে কমাতে হবে।’

ব্যক্তি যেখানে আয় বুঝে ব্যয় করে, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা উল্টো- কিন্তু বিশ্লেষকদের মত, জনগণের উপর জোরপূর্বক করের বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে আয়ের সাথে ব্যয়কে সামঞ্জস্য করতে হবে রাষ্ট্রকেও। সেক্ষেত্রে কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা অন্তর্বর্তী সরকারের উপর অন্যতম সংস্কারের দাবি বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে তো আমরা আশা করবো যে এবার সাধারণ মানুষের জন্য যে অপ্রত্যক্ষ কর আছে, টাকে না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর কীভাবে আমরা ভিত্তি সম্প্রসারণ করতে পারি। এখানে যে লিকেজ আছে সেটা কীভাবে আমরা কমাতে পারি, এটাতে নজর রাখা হবে।’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের উচিত রাজস্বের সাথে বিবেচনা করেই বা ঋণ বিবেচনা করেই কেবলমাত্র সরকারের ব্যয়ের কাঠামোটি করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাজেটটি সম্ভবত উল্টোভাবে প্রণয়ন হতো। মানে ব্যয় ঠিক করে পরে আয়ের বিষয় ঠিক হতো। ফলে বিভিন্ন সূচকে আমরা অসামঞ্জস্য দেখতাম।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেটের ঘাটতি কতটুকু দূর করা যায়, সে বিষয়ে চেষ্টা থাকতে হবে সরকারের। পাশাপাশি নজর দিতে বিনিয়োগ বান্ধব উন্মুক্ত শ্রমবাজারের নতুন এক বাংলাদেশের দিকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বাজেট ২০২৫-২৬: কমছে আকার, প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জে নেই কমতি

আপডেট সময় : ১২:২৬:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

সংসদ নেই, সেজন্য বাজেটে কীভাবে প্রতিফলন হবে জনমতের? কোন প্লাটফর্মেই বা বাজেট নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে? কীসের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করবে অন্তর্বর্তী সরকার। এই আলোচনা এখন অর্থনীতির বিভিন্ন অঙ্গনে। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে মাসব্যাপী খোলামেলা আলোচনা করে অধ্যাদেশের পথে হাঁটতে হবে সরকারকে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলমান অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আট হাজার কোটি টাকা কম। বিশ্লেষকরা বলছেন, যৌক্তিক রাজস্ব পরিকল্পনা এবং বাজেট ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করাই সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এরইমধ্যে বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এবার যেহেতু কোনো সংসদ নেই, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বাজেটের বিভিন্ন ধারা উপধারা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই বাজেট অনুমোদন বা অধ্যাদেশের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে হবে বলে মতামত দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘যেহেতু জুন মাসের ভেতরে বাজেট পেশ করার প্রয়োজন পড়ে সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উচিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং উপদেষ্টা পরিষদের বাজেটের বিভিন্ন ধারা উপধারাগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংসদের বাইরের প্রক্রিয়ার ভেতরে তারা জবাবদিহিতাকে তুলে ধরছেন কি না। তারা এটাতে আগ্রহী আছেন কি না। উনাদের জন্য তাহলে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় আরও বেশি এনগেজড হতে হবে।’

আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলমান অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আট হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবার প্রথম কমছে বাজেটের আকার। অন্যদিকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে বড় প্রকল্প হাতে না নিলেও পুরোনো প্রকল্পের যাঁতাকলে এবারও পিষ্ট শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। যেখানে এই দুই খাতকেই বেশি গুরুত্ব দিতে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমি দুটি জিনিস দেবো। যেগুলো আমার দরিদ্র মানুষ বা প্রান্তিক মানুষরা আছেন তাদের চাহিদার জায়গায় বরাদ্দটা দেয়া হচ্ছে কি না। চিকিৎসা, শিক্ষার মতো জায়গাগুলোতে খরচগুলো বাড়ছে কি না।’

তারা বলছেন, বড় প্রকল্পগুলোকে এড়িয়ে নজর দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। স্বাস্থ্য, শিক্ষার পাশাপাশি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সামাজিক সুরক্ষা খাতকে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা- এই তিনটাকে যদি আমরা বাড়াতে চাই তাহলে এক হতে পারে যে বর্তমানে যে সম্পদ আছে এখানে পুনর্বণ্টন করতে হবে। সুতরাং শিক্ষায় দুই শতাংশের জায়গায় যদি আমি চার শতাংশ নিতে চাই তাহলে আমাকে কিন্তু আরও দুই শতাংশ অন্য জায়গা থেকে কমাতে হবে।’

ব্যক্তি যেখানে আয় বুঝে ব্যয় করে, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে তা উল্টো- কিন্তু বিশ্লেষকদের মত, জনগণের উপর জোরপূর্বক করের বোঝা চাপিয়ে না দিয়ে আয়ের সাথে ব্যয়কে সামঞ্জস্য করতে হবে রাষ্ট্রকেও। সেক্ষেত্রে কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা অন্তর্বর্তী সরকারের উপর অন্যতম সংস্কারের দাবি বলেও মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে তো আমরা আশা করবো যে এবার সাধারণ মানুষের জন্য যে অপ্রত্যক্ষ কর আছে, টাকে না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর কীভাবে আমরা ভিত্তি সম্প্রসারণ করতে পারি। এখানে যে লিকেজ আছে সেটা কীভাবে আমরা কমাতে পারি, এটাতে নজর রাখা হবে।’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সরকারের উচিত রাজস্বের সাথে বিবেচনা করেই বা ঋণ বিবেচনা করেই কেবলমাত্র সরকারের ব্যয়ের কাঠামোটি করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাজেটটি সম্ভবত উল্টোভাবে প্রণয়ন হতো। মানে ব্যয় ঠিক করে পরে আয়ের বিষয় ঠিক হতো। ফলে বিভিন্ন সূচকে আমরা অসামঞ্জস্য দেখতাম।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেটের ঘাটতি কতটুকু দূর করা যায়, সে বিষয়ে চেষ্টা থাকতে হবে সরকারের। পাশাপাশি নজর দিতে বিনিয়োগ বান্ধব উন্মুক্ত শ্রমবাজারের নতুন এক বাংলাদেশের দিকে।