স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাজেট; এবার প্রথম কমছে আকার

- আপডেট সময় : ১২:৪০:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে

আজ (সোমবার ২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন দেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি হবে বাংলাদেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন তাজউদ্দিন আহমেদ ১৯৭২ সালে, যার আকার ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। এরপর থেকে প্রতি বছর বাজেটের আকার বেড়েছে, তবে এবার ঘটছে ব্যতিক্রম। চলমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিলো ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আর আজ উপস্থাপিত হতে যাওয়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, আগের বছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবার জাতীয় বাজেটের আকার কমছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে এই বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটি তার প্রথম বাজেট উপস্থাপন হলেও দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২টি করে বাজেট পেশ করেছেন এ এম এ মুহিত ও এম সাইফুর রহমান।
স্বাধীন বাংলাদেশের এসব বাজেট নিয়েই আজকের আয়োজন—
মুজিবনগর সরকারের বাজেট: ১৯ জুলাই, ১৯৭১ (১৯৭১ জুলাই-সেপ্টেম্বর)
তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট। স্বাধীনতা সংগ্রামে অপরিহার্য ব্যয় মেটাতে এ বাজেট দেয়া হয়। তবে বাজেটের সময়কাল ছিল জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাস। যেখানে ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও রাজস্ব আয় ৭ কোটি ৭৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
৩০ জুন, ১৯৭২ (১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর)
এটিই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট। যুদ্ধ, ৩০ জুন ১৯৭২ পরবর্তী পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে পেশ করা হয় দুই বাজেট। নেতৃত্ব দেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ধরা হয় ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা ও ব্যয় ৯৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি ৫১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আয় ২৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ও ব্যয় ২১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। উদ্বৃত্ত থাকে ৭৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এডিপিতে বরাদ্দ থাকে ৩১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন, পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন ব্যয় ৫০১ কোটি টাকা। এ বাজেটের মোট আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা।
১৪ জুন, ১৯৭৩ (১৯৭৩-৭৪ অর্থবছর)
বৈদেশিক সাহায্য কম নিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদের ব্যবহারের মতো প্রকল্প ও নীতি নিয়ে বাজেট দেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ৯৯৫ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ৩৭৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ও ব্যয় ২৯৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, উদ্বৃত্ত ৭৯ কোটি। উন্নয়ন ও পুনর্নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
১৯ জুন, ১৯৭৪ (১৯৭৪-৭৫ অর্থবছর)
প্রথমবার হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার শেষ বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘উন্নয়নের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক প্রয়াসে জাতি সব পর্যায়ে অগ্রণী হয়েছিল কি না, তা তলিয়ে দেখা দরকার। সততা, নিয়মানুবর্তিতা, বাস্তবানুগ উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন ও কঠোর পরিশ্রমের আজ বড় প্রয়োজন। একথা মনে রাখা দরকার যে, স্লোগান দিয়ে সমাজতন্ত্র কায়েম হয় না, দুর্নীতি দূর হয় না, বুলি আউড়িয়ে প্রবৃদ্ধি আনা যায় না; জনসাধারণকে সর্বকালের জন্য ধোঁকা দেওয়া চলে না। সে বছর ১০৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ৪৭০.২৩ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৪৭০.২৩ কোটি টাকা ও এডিপি ৫২৫ কোটি টাকা।
২৩ জুন, ১৯৭৫ (১৯৭৫-৭৬ অর্থবছর)
১ হাজার ৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার উন্নয়ন বাজেটে রাজস্ব আয় ৭৫৫.৩৮ কোটি টাকা, ব্যয় ৫৯৯.১৯ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ১৫৬.১৯ কোটি টাকা ও এডিপি ৯৫০.২৯ কোটি টাকা। বাজেট প্রণয়ন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আজিজুর রহমান মল্লিক। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেকনোক্র্যাট অর্থমন্ত্রী ও ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রথম হাইকমিশনার।
২৬ জুন, ১৯৭৬ (১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর)
রেডিও-টেলিভিশন মাধ্যমে জাতীয় সংসদের বাইরে বঙ্গভবন থেকে বাজেট দেন সামরিক আইন প্রশাসক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মেজর জিয়াউর রহমান। ১ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ৯৬৬.৩৮ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৭৬৮ কোটি টাকা; উদ্বৃত্ত ১৯৮.৫০ কোটি টাকা ও এডিপি ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বাজেটে শিল্পায়ন ও বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তি আয়করের ন্যূনতম সীমা বাড়ানো হয়।
২৫ জুন, ১৯৭৭ (১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর)
২ হাজার ১৮৪ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, ব্যয় ৯০৬ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ২৫০ কোটি ও এডিপি ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তখনও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বাজেট ইতিহাসে প্রথমবার ‘কালোটাকা’ সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। কালোটাকা সাদা না করা হলে কঠোর ব্যবস্থার অনুশাসন দেন জিয়া।
৩০ জুন, ১৯৭৮ (১৯৭৮-৭৯ অর্থবছর)
দুই হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার বাজেট দেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জিয়াউর রহমান। রাজস্ব আয় ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, ব্যয় ৯০৬ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ২৫০ কোটি ও এডিপি ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
২ জুন, ১৯৭৯ (১৯৭৯-৮০ অর্থবছর)
তিন অর্থবছর পর বাজেট ফিরে আসে সংসদে। উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী মীর্জা নুরুল ইসলাম। ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, ব্যয় ৯০৬ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ২৫০ কোটি ও এডিপি ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
৭ জুন, ১৯৮০ (১৯৮০-৮১ অর্থবছর)
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে এম সাইফুর রহমান আয়কর আদায়ে গুরুত্ব দেন। ২০ হাজার টাকার বেশি সম্পদে দায় বিবরণীসহ রিটার্ন দাখিল না করলে জরিমানা ধার্য করা হয়। ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা, ব্যয় ১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৭৮৫ কোটি ও এডিপি ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
৬ জুন, ১৯৮১ (১৯৮১-১৯৮২ অর্থবছর)
এম সাইফুর রহমানে তার দ্বিতীয় বাজেটে সব আমদানির উপর ১ শতাংশ হারে উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করেন। ৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, ব্যয় ১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা ও এডিপি ৩ হাজার ১৫ কোটি টাকা।
৩০ জুন, ১৯৮২ (১৯৮২-৮৩ অর্থবছর)
সামরিক প্রশাসক জেনারেল এইচ এম এরশাদের সচিবালয়ে নিজের প্রথম বাজেট দেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ৪ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ২ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা, ব্যয় ২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৭৩০ কোটি টাকা ও এডিপি ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
৩০ জুন, ১৯৮৩ (১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর)
প্রথমবার আমদানি পণ্যকে কাঁচামাল, শিল্প রসদ ও প্রক্রিয়াজাত বা প্রস্তুত পণ্য তিন ভাগে শুল্কায়ন করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটের আকার ৫ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় ৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা, ব্যয় ২ হাজার ৩৪ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৯৮৩ কোটি টাকা ও এডিপি ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।
২৭ জুন, ১৯৮৪ (১৯৮৪-৮৫ অর্থবছর)
নতুন আয়কর আইন চালুর ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান। রাজস্ব আয় ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, ব্যয় ২ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৬৬২ কোটি টাকা ও এডিপি ৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৬ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা৷
৩০ জুন, ১৯৮৫ (১৯৮৫-৮৬ অর্থবছর)
নতুন আয়করদাতাদের জন্য এক লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধন মেনে নেয়া ও নতুন শিল্প স্থাপনে করছাড় দেন এম সাইদুজ্জামান। রাজস্ব আয় ধরা হয় ৩ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা, ব্যয় ৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৪৪১ কোটি টাকা ও এডিপি ৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।
২৭ জুন, ১৯৮৬ (১৯৮৬-৮৭ অর্থবছর)
শিল্প ঋণে সুদহার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য নেয়া হয়। একইসঙ্গে কমানো হয় জ্বালানির দামও। রাজস্ব আয় ধরা হয় ৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা, ব্যয় ৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৭২৮ কোটি টাকা ও এডিপি ৪ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৮ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
১৮ জুন, ১৯৮৭ (১৯৮৭-৮৮ অর্থবছর)
এটি ছিল অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামানের চতুর্থ ও শেষ বাজেট। কালোটাকা সাদা করতে ‘অন্যান্য’ সূত্র হিসেবে দেখিয়ে ২০ শতাংশ কর দিলেই বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার বিধান করা হয়। রাজস্ব আয় ধরা হয় ৪ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, ব্যয় ৪ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৪৩৪ কোটি টাকা ও এডিপি ৫ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা।
১৬ জুন, ১৯৮৮ (১৯৮৮-৮৯ অর্থবছর)
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার ৫ হাজার কোটি অতিক্রম করে। আয়কর দিয়ে ‘কালোটাকা’ সাদা করার সুযোগ বহাল রাখেন অর্থমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল মুনএম। বাজেটের আকার দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয় ৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, ব্যয় ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৩১৯ কোটি টাকা ও এডিপি ৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা।
১৫ জুন, ১৯৮৯ (১৯৮৯-৯০ অর্থবছর)
অর্থমন্ত্রী ড. ওয়াহিদুল হক বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক খাতের দুর্বলতা ও খেলাপি ঋণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘অর্থনীতির বিকাশের ফলে ঋণের প্রয়োজন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। ঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার অবনতি একটি দুঃসহ অবস্থা সৃষ্টি করে। আপাতদৃষ্টে এ অবস্থার একটি সহজ পরিত্রাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের পুনঃঅর্থায়ন বৃদ্ধি কিন্তু এর পরিণাম মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি, ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিকাশের গতিধারা বিপর্যস্ত ও বাধাগ্রস্ত হয়।’ ১২ হাজার ৭০৩ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ৭ হাজার ১৮০.৫৩ কোটি টাকা, ব্যয় ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ২৮০.৫৩ কোটি টাকা, এডিপি ৫ হাজার ৮০৩.০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
১৪ জুন, ১৯৯০ (১৯৯০-১৯৯১ অর্থবছর)
সরকারি চাকরিজীবীদের আয়করের আওতায় আনা হয়। চালু করা হয় ন্যাশনাল ট্যাক্স পেয়ার নম্বর। এটি অর্থমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল মুনএমের দ্বিতীয় ও শেষ বাজেট; যেখানে রাজস্ব আয় ৭ হাজার ৫৬২.৭৮ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ২৬৩ কোটি টাকা ও এডিপি ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
১২ জুন, ১৯৯১ (১৯৯১-১৯৯২ অর্থবছর)
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ক্ষমতায় এলে পুনরায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে এম সাইফুর রহমান টানা পাঁচটি বাজেট দেন। এই বাজেট থেকে তিনি চালু করেন মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ব্যবস্থা। বাজেটে রাজস্ব আয় ৮ হাজার ৫০৩.০৯ কোটি টাকা, ব্যয় ৮ হাজার ৮৩.২৫ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৪১০.৮৪ কোটি টাকা ও এডিপি ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ১৫ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা।
১৮ জুন, (১৯৯২-৯৩ অর্থবছর)
বাণিজ্য সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিয়ে আসে ১৭ হাজার ৬০৪ কোটি টাকার বাজেট। যেখানে রাজস্ব আয় ১০ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা, ব্যয় ৮ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ২ হাজার ৪ কোটি টাকা, এডিপি ৮ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।
১০ জুন, ১৯৯৩ (১৯৯৩-৯৪ অর্থবছর)
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ১২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা; ব্যয় ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৩ হাজার ৩৫ কোটি টাকা ও এডিপি বরাদ্দ ৯ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।
৯ জুন, ১৯৯৪ (১৯৯৪-৯৫ অর্থবছর)
যমুনা সেতুর সারচার্জ ও লেভি তুলে নেয়া হয়। রাজস্ব আয় ১৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা, ব্যয় ৯ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৩ হাজার ৬৮৯ কোটি ও এডিপি বরাদ্দ ১১ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার ২০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
১৫ জুন, ১৯৯৫ (১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর)
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। রাজস্ব আয় ১৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, ব্যয় ১১ হাজার ৭০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা ও এডিপি বরাদ্দ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ২৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
২৮ জুলাই, ১৯৯৬ (১৯৯৬-৯৭ অর্থবছর)
দায়িত্ব নিয়ে পাঁচ বছরে অর্থনীতির উন্নতি ও স্থিরতার উদাহরণ তৈরি করেছিলেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। তার প্রথম বাজেটে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ লক্ষ্য নেয়া হয়। মূল্যস্ফীতি হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। রাজস্ব আয় ১৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা, ব্যয় ১২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৫ হাজার ১৭ কোটি টাকা, এডিপি ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ২৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
১২ জুন, ১৯৯৭ (১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর)
সামাজিক নিরাপত্তায় প্রথমবারের মতো ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। রাজস্ব আয় ১৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, ব্যয় ১৪ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৫ হাজার ৮০ কোটি টাকা ও এডিপি ১২ হাজার ৮০০ কোটি।। বাজেটের আকার ২৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা।
১১ জুন, ১৯৯৮ (১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর)
শেয়ার বাজার ও শিল্প খাতে ৭ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়। ২৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকার বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ২০ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা, ব্যয় ১৫ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৪ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা, এডিপি ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
১০ জুন, ১৯৯৯ (১৯৯৯-২০০০ অর্থবছর)
রাজস্ব আয় ২৪ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, ব্যয় ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৬ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা, এডিপি বরাদ্দ ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৩৪ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। দেয়া হয় কালোটাকা সাদা করার বিভিন্ন সুযোগ।
৮ জুন, ২০০০ (২০০০-০১ অর্থবছর)
৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ২৪ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা, ব্যয় ১৯ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, এডিপি ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। শিল্প, কৃষি ও খাদ্যপণ্যে তহবিল গঠন করা হয়।
৭ জুন, ২০০১ (২০০১-০২ অর্থবছর)
৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ২৭ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা, ব্যয় ২২ হাজার ৩৮ কোটি টাকা, এডিপি ১৯ হাজার কোটি টাকা। এটি শাহ এস এম কিবরিয়ার দেয়া শেষ বাজেট।
৬ জুন, ২০০২ (২০০২-০৩ অর্থবছর)
৪৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকার বাজেট দেন এম সাইফুর রহমান। রাজস্ব আয় ৩৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা, ব্যয় ২৩ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা, এডিপি বরাদ্দ ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
১২ জুন, ২০০৩ (২০০৩-০৪ অর্থবছর)
নির্বাচনে প্রার্থী হলে নিতে বা সরকারি দরপত্রে অংশ নিতে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়। ৫১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ৩৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা, ব্যয় ২৮ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা, এডিপি ২০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
১০ জুন, ২০০৪ (২০০৪-০৫ অর্থবছর)
যথাসময়ে রিটার্ন দাখিল ও জীবনমান সম্পর্কিত তথ্য দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়৷ ৫৭ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ৪১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, ব্যয় ৩৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা ও এডিপি ২২ হাজার কোটি টাকা।
৬ জুন, ২০০৫ (২০০৫-০৬ অর্থবছর)
৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকার বাজেটে রাজস্ব আয় ৪৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা, ব্যয় ৩৫ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, এডিপি ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ‘কালোটাকা’ সাদা করার মেয়াদ বাড়ানো হয়।
৭ জুন, ২০০৬ (২০০৬-০৭ অর্থবছর)
৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার এ বাজেট বিএনপি আমলের সবশেষ বাজেট। যেখানে রাজস্ব আয় ৫২ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা, ব্যয় ৪২ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ও এডিপি ২৬ হাজার কোটি টাকা।
৭ জুন, ২০০৭ (২০০৭-০৮ অর্থবছর)
৮৭ হাজার ১১৩ কোটি টাকার বাজেট দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থমন্ত্রী এ বি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। রাজস্ব আয় ৫৭ হাজার ৩০১ কোটি টাকা, ব্যয় ৫২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ও এডিপি ২৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। করমুক্ত আয় সীমা ও আওতা বাড়ানো হয়।
৯ জুন, ২০০৮ (২০০৮-০৯ অর্থবছর)
স্থানীয় শিল্পের প্রসারে কর অবকাশ ও করপোরেট করহার হ্রাস করা হয়। রাজস্ব আয় ৬৯ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৬০ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ও এডিপি ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা।
১১ জুন, ২০০৯ (২০০৯-১০ অর্থবছর)
‘গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ’ সরকার ক্ষমতায় এলে ফের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পান আবুল মাল আবদুল মুহিত৷ প্রথমবারের মতো ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাজেট দেন তিনি। রাজস্ব আয় ৭৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা, ব্যয় ৬৯ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ও এডিপি ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজার শিল্প ভৌত অবকাঠামো খাতে অপ্রদর্শিত আয়ে ১০ শতাংশ করে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বাজেট থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ-২০২১’ গড়ার কর্মসূচি নেয়া হয়।
১০ জুন, ২০১০ (২০১০-২০১১ অর্থবছর)
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) চালু হয়। যা ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলো। কর বসানো হয় সঞ্চয়পত্রের সুদে। রাজস্ব আয় ৯২ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা, ব্যয় ৭৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ও এডিপি ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
৯ জুন, ২০১১ (২০১১-১২ অর্থবছর)
আয়কর ও ভ্যাট আইনের খসড়া অনুমোদন ও সড়ক, সেতু অবকাঠামোতে কর অবকাশ সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। রাজস্ব আয় ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, ব্যয় ৮৭ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা ও এডিপি ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
৭ জুন, ২০১২ (২০১২-১৩ অর্থবছর)
মুঠোফোনে বিলের উপর ২ শতাংশ হারে সারচার্জ বসানোর প্রস্তাব করা হয়। বাড়ে মিনিট প্রতি কথা বলার খরচ। রাজস্ব আয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, ব্যয় ৯৯ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা, এডিপি ৫৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
৬ জুন, ২০১৩ (২০১৩-১৪ অর্থবছর)
কর অবকাশ সুবিধা দুই বছর বাড়ানো ও করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ থেকে চার লাখ ২০ হাজারে উন্নীত করা হয়৷ রাজস্ব আয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা, ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা, এডিপি ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।
৫ জুন, ২০১৪ (২০১৪-১৫ অর্থবছর)
৪৪ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি আয় থাকলে আয়কর দিতে ৩০ শতাংশ আয়কর আরোপ করা হয়, আগে যা ছিল ২৫ শতাংশ। রাজস্ব আয় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা, ব্যয় ১ লাখ ২৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা, এডিপি ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
৪ জুন, ২০১৫ (২০১৫-১৬ অর্থবছর)
২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করমুক্ত আয় সীমা আড়াই লাখ টাকা লাখ টাকা করা হয়, ১ শতাংশ হারে উৎসে কর আরোপ হয় পোশাক খাতে। রাজস্ব আয় ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা; ব্যয় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ও এডিপি ৯৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ব্যয় ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
২ জুন, ২০১৬ (২০১৬-১৭ অর্থবছর)
‘আয়কর দিবস’ ঘোষণা করা হয় ৩০ অক্টোবর। দিনটি বাৎসরিক আয়কর দাখিলের অপরিবর্তনীয় সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। রাজস্ব আয় ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, ব্যয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা ও এডিপি ১ লাখ ১০ হাজার ২৭ কোটি টাকা। মোট ব্যয় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
১ জুন, ২০১৭ (২০১৭-১৮ অর্থবছর)
নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করা হয় দুই বছরের জন্য। বাজেট অতিক্রম করে চার লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা, ব্যয় ২ লাখ ৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা ও এডিপি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। মোট ব্যয় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।
৭ জুন ২০১৮ (২০১৮-১৯ অর্থবছর)
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ১২তম ও শেষ বাজেট উপস্থাপন। নিজের শেষ দশ বাজেটে তিনি এক লাখ থেকে বাজেটের আকার চার লাখ কোটিতে উন্নীত করেন। এ বাজেটে কর্পোরেট ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর হার আড়াই শতাংশ কমানো হয়। রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি, ব্যয় ২ লাখ ৫১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ও এডিপি ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
১৩ জুন, ২০১৯ (২০১৯-২০ অর্থবছর)
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার প্রথম বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। প্রবাসী আয় বাড়াতে ২ শতাংশ হারে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, ব্যয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা, এডিপি ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। মোট ব্যয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
১১ জুন, ২০২০ (২০২০-২১ অর্থবছর)
করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, ব্যয় ৩ লাখ ২ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা, এডিপি ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। মোট ব্যয় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
৩ জুন, ২০২১ (২০২১-২২ অর্থবছর)
বাড়ির নকশা ও সঞ্চয়পত্রে টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করা হয়। ন্যূনতম সারচার্জ বাতিল করা হয়। রাজস্ব আয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা, ব্যয় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা, এডিপি ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ লাখ ৬৮১ কোটি টাকা।
৯ জুন, ২০২২ (২০২২-২৩ অর্থবছর)
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ‘কালোটাকা’ ঘোষণা দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়৷ বিদেশ থেকে এ অর্থ আনতে ৭ শতাংশ, বিদেশে স্থাবর সম্পত্তিতে ১৫ শতাংশ ও অস্থাবর সম্পত্তিতে ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিদেশে ঘোষণাকৃত কালোটাকা সাদা করার অনুমতি দেয়া হয়। রাজস্ব আয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, ব্যয় ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি ও এডিপি ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
১ জুন, ২০২৩ (২০২৩-২৪ অর্থবছর)
‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনাম বক্তৃতা দেন বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। সম্পত্তি নিবন্ধন কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়। করমুক্ত আয় সীমার নিচে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে তা রহিত করা হয়। রাজস্ব আয় ৫ লাখ কোটি টাকা, এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
৬ জুন, ২০২৪ (২০২৪-২৫ অর্থবছর)
‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ শিরোনামে নিজের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। রাজস্ব আয় লক্ষ্য ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি। এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এতে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি।
ওই বছরই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। দেশের দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন।
১৬ বছরে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়লেও দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরেই মন্দা সময় পার করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। ডলার সংকট, রিজার্ভের বড় ক্ষয়সহ বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বড় বিপদে ছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট সবশেষ প্রায় আট লাখ কোটি টাকায় নিয়ে গেছে আওয়ামী সরকার। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ছিল ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল, বছর শেষে এর ১৪-১৫ শতাংশ অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। পরে এ অবাস্তবায়িত বাজেটের অংশ বছর বছর আরো বড় হয়েছে।
অর্থনীতির কোনো সূত্র না মেনেই প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়িয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষমতায় থেকে সহযোগীদের নিয়ে প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ, লুটপাট আর পাচারের তথ্য পেয়েছে শ্বেতপত্র কমিটি। ফলে ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর অলীক ও অবাস্তবায়নযোগ্য বাজেট কমিয়ে আনা হয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায়। সেসময় বাজেটের আকার দ্বিগুণ বা তিনগুণ হলেও আনুপাতিক হারে বরাদ্দ কমেছে জনগুরুত্বপূর্ণ খাত স্বাস্থ্য ও শিক্ষায়। বিপরীতে বেড়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ।
এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে জাতীয় সংসদ না থাকায় বিটিভিতে বিকেল ৩টায় বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। সম্ভাব্য বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এ ঘাটতি পূরণ করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
আগামী অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে চলতি অর্থবছরে থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে পরিচালন ও নন-এডিপিখাতে।
রাষ্ট্রের নাগরিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সুরক্ষা, মৌলিক সেবার নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সর্বোপরি বৈষম্য দূর করা ও জনকল্যাণমুখী বাজেট পেশের লক্ষ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিগত সময়ে শুধু প্রস্তাবনায় এসব কথা থাকলেও আগামী বাজেটে তা বাস্তবায়ন হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।
নতুন অর্থবছরে এডিপি সম্ভাব্য বাজেটে পাঁচ খাতেই যাচ্ছে মোট বরাদ্দের ৬৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এরমধ্যে অন্যতম অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি ও স্বাস্থ্য। আর সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ১৪৩টি। ইতোমধ্যে ব্যয় হওয়ায় বিগত সরকারের সময়ে নেয়া অতিমূল্যায়িত অনেক প্রকল্পেও সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এবারের বাজেট ৫৪তম। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার বাইরে এ বাজেট পেশ করা হবে। যেখানে যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে সেই জুলাই আগস্ট বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা রয়েছে। এদেরসহ বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের করমুক্ত আয়সীমা রাখা হতে পারে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
প্রতিবছর সাধারণত জুন মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়। এবছর ৫ জুন প্রথম বৃহস্পতিবার হলেও ওইদিন থেকে ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায়, ২ জুন বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রথা মেনে বাজেট ঘোষণার পরদিন বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
নির্বাচিত সরকারের সময় বাজেট ঘোষণার পর জুন মাসজুড়ে সংসদ সদস্যরা বাজেটের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো সংসদে তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তার প্রেক্ষিতে ২৯ জুন অর্থবিল সংশোধন করে পাস করে সংসদ, পরদিন বাজেট পাস করা হয়।
বছর সংসদ কার্যকর না থাকায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মতামত জানানোর সুযোগ থাকছে। অন্যান্য বছর এ ধরনের সুযোগ থাকলেও, সেখানে খুব বেশি মতামত পাওয়া যেতো না।
এবারও ২৯ জুন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংশোধন শেষে অর্থবিল ও পরদিন প্রস্তাবিত বাজেট অধ্যাদেশ আকারে জারি করে ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
বরাবরের মতো এবারো অর্থ বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পরিকল্পনা কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে বাজেট বক্তব্য আপলোড করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ।