ভোলায় বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি; পানিবন্দি ৫০ হাজারের বেশি মানুষ

- আপডেট সময় : ০৪:২৭:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

ভোলাজুড়ে ৩৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকলেও, অরক্ষিত ৪০ কিলোমিটার। এরমধ্যে বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে ১৮ কিলোমিটার এলাকা। ফলে, হুমকির মুখে শতশত বসতবাড়ি আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গেল কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টিতে তজুমদ্দিন, মনপুরা ও লালমোহনের বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি। পানি বন্দি ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
দেশের উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী তীরের ৩৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। যার ৪০ কিলোমিটারই অরক্ষিত। আর ১৮ কিলোমিটার চিহ্নিত করা হয়েছে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে। ফলে, প্রতিবছর বর্ষা আসলেই আতঙ্কে দিন কাটে নদী পাড়ের হাজারও বাসিন্দার। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও নেই সংস্কারের কোনও কার্যকর উদ্যোগ।
বাঁধ না থাকায় প্রতি বর্ষায় ভাঙনের মুখে পড়ে বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু স্থাপনা। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। গেল কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে তজুমদ্দিন, মনপুরা ও লালমোহনের বাঁধ। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার হাজির হাট চরজ্ঞান গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বেলায়েত হোসেন। প্রতি বর্ষা মৌসুমে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধ করেই কাটছে তার জীবন। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। শুধু বেলায়েত হোসেন নন। তার মত আতঙ্কে উপকূলীয় এলাকার অনেকেই।
বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমাদের জায়গা নেই, জমি নেই ঝড় আসলে আমরা কোথায় যাবো।’
স্থানীয়রা বলছেন, ‘ঝড় আসলে আমরা আতঙ্কে থাকি। আমরা নদীতে থাকি, আমাদের পরিবার বাড়িতে থাকে। বাড়িঘর নিয়ে আমরা ভয়ে থাকি। আমরা এই ঝড় বৃষ্টিতে কই যাব, কি করবো।’
স্থানীয়রা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকায় নদী মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিটার দূরে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ জনপদ।
যদিও বরাবরের মতই ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ভোলায় প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকা বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। আমরা এগুলো মনিটরিং করছি। কোথাও কোন সমস্যা হলে তা আমরা মনিটরিং করছি সাথে সাথে।’
ভোলা-১ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দীন আরিফ বলেন, ‘২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা দরপত্র দিয়েছি। সম্প্রতি নোয়া প্রদান করেছি। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রকল্প প্রস্তাব করেছি যেখানে ৪ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা, বাঁধ সংরক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করেছি।’
সংশ্লিষ্টদের অবহেলা আর ক্রমাগত নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছর একটু একটু করে মানচিত্র থেকে ছোট হচ্ছে দ্বীপজেলা ভোলা। আর তাই কেবল অপরিকল্পিত প্রকল্প আর সরকারি অর্থের অপচয় নয়, স্থায়ী সমাধান চান স্থানীয়রা।