টেসলার প্রধান নির্বাহী (সিইও) ও মালিক ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাস্ক ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন দিলে কঠোর পরিণতি হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। আর মাস্ক বলছেন, আমেরিকার ৮০ শতাংশ মানুষ নতুন রাজনৈতিক দল চায়। এ কারণ ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন দলের নাম ঘোষণা করেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, নির্বাচনী প্রচার থেকে হোয়াইট হাউজ, সবসময়ই ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দেখা গেছে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে। তবে সম্প্রতি ট্রাম্পের কর ও ব্যয়-সংক্রান্ত বাজেট বিল নিয়ে মাস্কের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বন্ধু থেকে রীতিমতো প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছেন মাস্ক।
দুজনের বিরোধ মিটিয়ে সম্পর্ক ঠিক করতে চান কিনা, শনিবার এনবিসি নিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, মাস্কের সঙ্গে সম্পর্ক এবার শেষ হয়ে গেছে। এসময় টেসলা সিইও প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করেছেন বলেও জানান ট্রাম্প।
‘ট্রাম্পকে আমি ভালোবাসি’ থেকে ‘ট্রাম্পের পদত্যাগ চাই’, মাস্ক ইউটার্ন নিলেন কেন? ‘ট্রাম্পকে আমি ভালোবাসি’ থেকে ‘ট্রাম্পের পদত্যাগ চাই’, মাস্ক ইউটার্ন নিলেন কেন?
এনবিসি নিউজের ওই সাক্ষাৎকারে মাস্কের ডেমোক্র্যাটদের সমর্থনের সম্ভাবনার বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট বলেন, এমনটি হলে এর পরিণতি হবে কঠোর।
হোয়াইট হাউজে ইলন মাস্কের স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা। সংযোগটি দেওয়ার সময় বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ জানালেও মাস্কের লোকজন তা উপেক্ষা করেন বলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এদিকে, আমেরিকায় ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধের পর বৃহস্পতিবার এক্স পোস্টে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মতামত চান মাস্ক। এতে সম্মতি দেয় তার ২২ কোটি ফলোয়ারের ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা। পরে শুক্রবার ‘দ্য আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি দলের নাম ঘোষণা করেন টেসলা সিইও ।
তবে, বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের নতুন দল গঠন করবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানাননি তিনি। এ ছাড়া আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানাবেন কিনা, সেটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এর আগে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ভোটে ছিলেন মাস্ক। ২০২২ সালে দল পাল্টে আসেন ট্রাম্প শিবিরে। এবার নিজেই দল আনতে যাচ্ছেন।
ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। এ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের একটি সংবাদের শিরোনাম। ছবি: রয়টার্স
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, রিপাবলিকানদের মধ্যে মাস্ক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। যদিও তাঁর রাজনৈতিক উত্থান অনেকটাই ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত ধরে। কিন্তু এখন তিনি ডেমোক্র্যাট আর ট্রাম্পের অনুগতদের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে যেতে পারেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফৌজদারি অভিযোগসহ সাধারণ মানুষের কাছে কেলেঙ্কারি থেকে বেঁচে থাকার রেকর্ড রয়েছে। তিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহারের স্পষ্ট ইচ্ছাও দেখিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর ডেমোক্রেটিক পূর্বসূরি জো বাইডেনের প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এরই মধ্যে মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স, যোগাযোগবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকসহ মাস্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘বাজেটে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অর্থ সাশ্রয় করার সবচেয়ে সহজ উপায় ইলনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিল করা।’
মাস্কও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প তাঁর একটি ইচ্ছার কথা জানান। তিনি বলেন, মঙ্গল গ্রহের মাটিতে আমেরিকার পতাকা দেখার অভিপ্রায় রয়েছে তাঁর। কিন্তু সম্প্রতি মাস্ক বলেছেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য স্পেসএক্সের রকেট ব্যবহারের যে উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে, তিনি তা বাতিল করার পরিকল্পনা করছেন। তবে সেটি নিশ্চিত নয়। মার্কিন সিনেটে ট্রাম্পের সই করা কর ও ব্যয় বিল আটকে দিতে আর্থিক খাতের রক্ষণশীল আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারেন মাস্ক।