ঢাকা ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
ব্রেকিং নিউজ ::
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইরানের বন্দর আব্বাসের গ্যাস স্থাপনা, ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং তেহরানের অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে: ইসরায়েলি মিডিয়া :::: ইরানের রাজধানী তেহরান, হরমোজগান, কেরমানশাহ, পশ্চিম আজারবাইজান, লোরেস্তান ও খুজেস্তানসহ ইরানের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে নতুন করে তীব্র হামলা চালিয়েছে ইসরাইল :::: ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক বলেছেন, কূটনৈতিক উপায় 'এখনো শেষ হয়ে যায়নি' :::: ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে আলোচনা করলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারা :::: ইসরাইলি হামলায় ইরানের এসফাহান পরমাণু স্থাপনার চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: আইএইএ :::: ইরানে ইসরায়েলি হামলাকে 'অসহনীয়' বলল জাপান :::: ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কথা বললেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ :::: ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন কাতারের শেখ তামিম :::: ইরানের সামরিক বাহিনী বলছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলের ১০টি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে :::: ইরানের গ্যাসক্ষেত্রে বেসামরিক অবকাঠামোতে ইসরাইলি হামলা ::: তেহরানে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক হামলায় নিহত ৪০

এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৯:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫
  • / ৩৫৫ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা ঘোষণার পর থেকেই তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই সময়সীমা ঘোষণা করলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে হতাশা প্রকাশ করে। খবর বিবিসি বাংলা

তবে শেষ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী দলগুলো এই সময়সীমা মেনে নিলেও নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উৎসবমুখর ও সর্বোপরি গ্রহণযোগ্য করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে রয়েছে একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক ঐকমত্য ও আস্থার সংকট
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে দাবি করেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’ তবে বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করেই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে ‘জুলাই সনদ’সহ সংস্কার কর্মসূচিগুলো আগামী মাসেই চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মূল চ্যালেঞ্জ হবে সব পক্ষের আস্থা অর্জন করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘সরকারের পক্ষপাতহীন আচরণ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এটি দূর না হলে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, তা নিয়েও সন্দেহ থাকবে।’

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও আইনগত জটিলতা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, বিতর্কহীন নির্বাচনি আইন বাস্তবায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগামী দশ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক মো. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ভোটার তালিকা ছাড়া নির্বাচন কমিশন এখনো কিছুই করতে পারেনি। সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’ তবে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, কমিশন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।

অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বলতে সব দলের নয়, সব ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকেই তারা বোঝেন।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর দলের বিরাট সংখ্যক সমর্থক ভোটারকে প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, একটা বড় অংশ ভোটার ও তাদের দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে কীভাবে, সেটা দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

বিচার ও সংস্কারেও চ্যালেঞ্জ
সরকারের তিনটি প্রধান ম্যান্ডেট- সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচার ইস্যুতে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১১ মাসে সরকার সংস্কার ইস্যুতে দৃশ্যত তেমন কিছু করেনি। বরং সংস্কারের নামে আলোচনা দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি
বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দলটি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।’

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান নির্বাচনে সম্ভাব্য ‘ডাকাতির’ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘জাতি যেনতেন নির্বাচন চায় না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে সহিংসতার বিচার, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নিশ্চয়তা ও নির্বাচনি সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাই হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ০৩:৩৯:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জুন ২০২৫

দেশে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা ঘোষণার পর থেকেই তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই সময়সীমা ঘোষণা করলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে হতাশা প্রকাশ করে। খবর বিবিসি বাংলা

তবে শেষ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী দলগুলো এই সময়সীমা মেনে নিলেও নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উৎসবমুখর ও সর্বোপরি গ্রহণযোগ্য করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে রয়েছে একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক ঐকমত্য ও আস্থার সংকট
প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে দাবি করেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’ তবে বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করেই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে ‘জুলাই সনদ’সহ সংস্কার কর্মসূচিগুলো আগামী মাসেই চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মূল চ্যালেঞ্জ হবে সব পক্ষের আস্থা অর্জন করা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘সরকারের পক্ষপাতহীন আচরণ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এটি দূর না হলে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, তা নিয়েও সন্দেহ থাকবে।’

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও আইনগত জটিলতা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, বিতর্কহীন নির্বাচনি আইন বাস্তবায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগামী দশ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক মো. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ভোটার তালিকা ছাড়া নির্বাচন কমিশন এখনো কিছুই করতে পারেনি। সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’ তবে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, কমিশন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।

অন্তর্ভুক্তির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতি
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বলতে সব দলের নয়, সব ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাকেই তারা বোঝেন।

কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর দলের বিরাট সংখ্যক সমর্থক ভোটারকে প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, একটা বড় অংশ ভোটার ও তাদের দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে কীভাবে, সেটা দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

বিচার ও সংস্কারেও চ্যালেঞ্জ
সরকারের তিনটি প্রধান ম্যান্ডেট- সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচার ইস্যুতে দৃশ্যমান অগ্রগতি আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১১ মাসে সরকার সংস্কার ইস্যুতে দৃশ্যত তেমন কিছু করেনি। বরং সংস্কারের নামে আলোচনা দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি
বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দলটি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।’

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান নির্বাচনে সম্ভাব্য ‘ডাকাতির’ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘জাতি যেনতেন নির্বাচন চায় না।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে সহিংসতার বিচার, সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নিশ্চয়তা ও নির্বাচনি সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাই হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।