ঢাকা ০৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আয় কমছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৫৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের চামড়া খাতকে এগিয়ে নিতে ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পকে স্থানান্তরিত করা হয় সাভারের হেমায়েতপুরে। কিন্তু সেখানেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপি কার্যকর না করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে আশা জাগানিয়া এই খাত। ফলে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ধারাবাহিকভাবে আয় কমছে। এই সুযোগে ধীরে ধীরে চামড়ার জায়গা দখল করে নিচ্ছে আর্টিফিসিয়াল লেদার বা কৃত্রিম চামড়া। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।

কোরবানির ঈদ শেষ হতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চামড়া জড়ো হচ্ছে সাভারের চামড়া শিল্প নগরে। এসব চামড়ার স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয়। কিছু চামড়া আবার ব্যবহৃত হয় চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে।

দেশে চামড়াশিল্পের বিকাশ হয় হাজারীবাগ থেকে। একটা সময় এখানে গড়ে ওঠে চামড়ার কারখানাগুলো। হাজারীবাগ হয়ে ওঠে অর্থনীতির অন্যতম শক্ত ভীত। তবে এই শিল্পের বর্জ্যে বুড়িগঙ্গাসহ আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে দুঃসহ। তথ্য বলছে, হাজারীবাগে থাকাকালে ট্যানারিগুলো প্রতিদিন প্রায় ২১ হাজার ঘনমিটারেরও বেশি তরল বর্জ্য পরিশোধন না করেই সরাসরি বুড়িগঙ্গায় ফেলতো।

এই বিষবলয় থেকে মুক্ত হতে চামড়া শিল্পকে স্থানান্তরিত করা হয় সাভারের হেমায়েতপুরে। তবে সেখানেও ধুঁকছে এই শিল্প। চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা সিইটিপি নিয়ে। ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরিত হবার পরে আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয় কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপি।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘আমাদের যে ব্যবসায়িক ব্যাংকগুলো আছে। তারা এলডব্লিউ সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ চামড়া নিচ্ছে না। আমরা চলে যাচ্ছি নন ব্র্যান্ড বায়ারের কাছে। আমাদের যদি এই সেক্টর বাঁচাতে হয় তাহলে সিইটিপি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম দ্রুত চালু করতে হবে।’

এদিকে, বিশ্বের বড় ও নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দামে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে প্রয়োজন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ বা এলডব্লিউজি সনদ। সিইটিপির অব্যবস্থাপনায় আটকে রয়েছে সেই সনদপ্রাপ্তি। তাই রপ্তানি সম্ভাবনাময় এই খাতকে বাঁচাতে সরকারকে উদ্যোগী হবার তাগিদ বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এখানে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার একটা প্লান্ট তৈরি করার কথা কিন্তু তারা ১৪ হাজার কিউবিক মিটার প্লান্ট তৈরি করে সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে দেশ থেকে চলে গিয়েছে। এরপর এই প্রজেক্ট একটা ইনকমপ্লিট একটা প্রজেক্ট হিসেবে আছে। এই কাজ শেষ না হওয়ার প্রধান কারণ সরকারের অবহেলা ও তাদের দুর্নীতি।’

দেশে প্রতিবছর প্রচুর চামড়া উৎপাদিত হয়, যার ২৫ শতাংশ স্থানীয় বাজারে ব্যবহৃত হয়, বাকি ৭৫ শতাংশ রপ্তানি করা হয়। তবে এলডব্লিউজি সনদ, ব্যাংক ঋণসহ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে রপ্তানি এখন নিম্নমুখী। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ধারাবাহিকভাবে আয় কমছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় ছিল ১ হাজার ২২৩ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় মাত্র ১ হাজার ৩৯ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের চামড়াশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার বলেন, ‘ইটিপি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যখন করা হয়েছে তখন আসলে আমাদের সাথে ডিসকাস করে হয়নি। সমস্যা আছে। তারে মানে আমরা সাভারে গিয়েছি কিন্তু সাভারে যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণ হয়নি। আমাদের ১৪০টি কারখানার মধ্যে মাত্র ৬টি আছে সনদধারী কারখানা। এটাও তো আমাদের জন্য দুঃখজনক।’

দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার বাজারে যখন মন্দা যাচ্ছে তখন ধীরে ধীরে চামড়ার জায়গা দখল করে নিচ্ছে আর্টিফিসিয়াল লেদার। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। এমন বাস্তবতায় ট্যানারি মালিকরা বলছেন, দেশের চামড়াশিল্পকে এগিয়ে নিতে বন্ড সুবিধা, সিইটিপি কার্যকর করাসহ এই খাতের সকল বৈষম্য দূর করতে হবে। তাহলেই আবারও ফিরবে চামড়াজাত পণ্যের সুদিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আয় কমছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে

আপডেট সময় : ১১:৫৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

দেশের চামড়া খাতকে এগিয়ে নিতে ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পকে স্থানান্তরিত করা হয় সাভারের হেমায়েতপুরে। কিন্তু সেখানেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপি কার্যকর না করায় মুখ থুবড়ে পড়েছে আশা জাগানিয়া এই খাত। ফলে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ধারাবাহিকভাবে আয় কমছে। এই সুযোগে ধীরে ধীরে চামড়ার জায়গা দখল করে নিচ্ছে আর্টিফিসিয়াল লেদার বা কৃত্রিম চামড়া। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী।

কোরবানির ঈদ শেষ হতেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চামড়া জড়ো হচ্ছে সাভারের চামড়া শিল্প নগরে। এসব চামড়ার স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হয়। কিছু চামড়া আবার ব্যবহৃত হয় চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে।

দেশে চামড়াশিল্পের বিকাশ হয় হাজারীবাগ থেকে। একটা সময় এখানে গড়ে ওঠে চামড়ার কারখানাগুলো। হাজারীবাগ হয়ে ওঠে অর্থনীতির অন্যতম শক্ত ভীত। তবে এই শিল্পের বর্জ্যে বুড়িগঙ্গাসহ আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে দুঃসহ। তথ্য বলছে, হাজারীবাগে থাকাকালে ট্যানারিগুলো প্রতিদিন প্রায় ২১ হাজার ঘনমিটারেরও বেশি তরল বর্জ্য পরিশোধন না করেই সরাসরি বুড়িগঙ্গায় ফেলতো।

এই বিষবলয় থেকে মুক্ত হতে চামড়া শিল্পকে স্থানান্তরিত করা হয় সাভারের হেমায়েতপুরে। তবে সেখানেও ধুঁকছে এই শিল্প। চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা সিইটিপি নিয়ে। ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তরিত হবার পরে আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয় কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার বা সিইটিপি।

ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘আমাদের যে ব্যবসায়িক ব্যাংকগুলো আছে। তারা এলডব্লিউ সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ চামড়া নিচ্ছে না। আমরা চলে যাচ্ছি নন ব্র্যান্ড বায়ারের কাছে। আমাদের যদি এই সেক্টর বাঁচাতে হয় তাহলে সিইটিপি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম দ্রুত চালু করতে হবে।’

এদিকে, বিশ্বের বড় ও নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর কাছে ভালো দামে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে প্রয়োজন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ বা এলডব্লিউজি সনদ। সিইটিপির অব্যবস্থাপনায় আটকে রয়েছে সেই সনদপ্রাপ্তি। তাই রপ্তানি সম্ভাবনাময় এই খাতকে বাঁচাতে সরকারকে উদ্যোগী হবার তাগিদ বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এখানে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার একটা প্লান্ট তৈরি করার কথা কিন্তু তারা ১৪ হাজার কিউবিক মিটার প্লান্ট তৈরি করে সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে দেশ থেকে চলে গিয়েছে। এরপর এই প্রজেক্ট একটা ইনকমপ্লিট একটা প্রজেক্ট হিসেবে আছে। এই কাজ শেষ না হওয়ার প্রধান কারণ সরকারের অবহেলা ও তাদের দুর্নীতি।’

দেশে প্রতিবছর প্রচুর চামড়া উৎপাদিত হয়, যার ২৫ শতাংশ স্থানীয় বাজারে ব্যবহৃত হয়, বাকি ৭৫ শতাংশ রপ্তানি করা হয়। তবে এলডব্লিউজি সনদ, ব্যাংক ঋণসহ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে রপ্তানি এখন নিম্নমুখী। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ধারাবাহিকভাবে আয় কমছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় ছিল ১ হাজার ২২৩ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয় মাত্র ১ হাজার ৩৯ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের চামড়াশিল্পের বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার বলেন, ‘ইটিপি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যখন করা হয়েছে তখন আসলে আমাদের সাথে ডিসকাস করে হয়নি। সমস্যা আছে। তারে মানে আমরা সাভারে গিয়েছি কিন্তু সাভারে যে প্রত্যাশা ছিল তা পূরণ হয়নি। আমাদের ১৪০টি কারখানার মধ্যে মাত্র ৬টি আছে সনদধারী কারখানা। এটাও তো আমাদের জন্য দুঃখজনক।’

দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার বাজারে যখন মন্দা যাচ্ছে তখন ধীরে ধীরে চামড়ার জায়গা দখল করে নিচ্ছে আর্টিফিসিয়াল লেদার। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন অনেক ব্যবসায়ী। এমন বাস্তবতায় ট্যানারি মালিকরা বলছেন, দেশের চামড়াশিল্পকে এগিয়ে নিতে বন্ড সুবিধা, সিইটিপি কার্যকর করাসহ এই খাতের সকল বৈষম্য দূর করতে হবে। তাহলেই আবারও ফিরবে চামড়াজাত পণ্যের সুদিন।