ঢাকা ০২:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ইরানে সামরিক অভিযান ছাড়া বিকল্প দেখছেন না ট্রাম্প!

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:১৭:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
  • / ৩৪৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইরান-ইসরাইল সংঘাত কোনদিকে গড়াচ্ছে, সেটি জানা না থাকলেও অবধারিত হয়ে উঠছে মার্কিন সামরিক শক্তির সরাসরি উপস্থিতি। ইরানের বিরুদ্ধে কোন পথে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? সমীকরণ বলছে, ইসরাইলের লক্ষ্য শতভাগ অর্জনে কমান্ডো স্টাইলে ইরানে স্থল অভিযানই চালাতে হবে ট্রাম্পকে।

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, তা হয়তো জানা যাবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই, যেমনটা দু’দিন আগে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। আঞ্চলিক দুই শক্তির মধ্যে চলমান সংঘাত নজিরবিহীন হলেও এখন পর্যন্ত আকাশপথেই তা সীমিত।

ট্রাম্পের বেঁধে দেয়া সময় সামনে রেখে তোড়জোড় বেড়েছে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে। সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ইরান আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতৃত্বাধীন আলোচনায় চাপ দিয়ে গেলেও, একই সময় ইরানকে কোণঠাসা করতে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার ইরানের হামলার ঝুঁকি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘাঁটি খালিও করে ফেলেছে।

ইরানে ইসরাইলি বিমান হামলায় সরাসরি যুক্ত হতে চাইলে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কাজে লাগাতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। সেক্ষেত্রে শঙ্কা রয়েছে মার্কিন এসব ঘাঁটিতে ইরান ও মিত্র বাহিনীগুলোর পাল্টা হামলার।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি যেখানে, সেই কাতারের আল-উদাইদসহ বিমানঘাঁটিতে ৪০টির বেশি বিমান সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি সেখানে কর্মকর্তাদের প্রবেশও সাময়িক নিষিদ্ধ করেছে দোহার মার্কিন দূতাবাস। অন্যদিকে পাঠিয়েছে এফ সিক্সটিন, এফ টোয়েন্টি টু আর এফ থার্টি ফাইভসহ বিপুল সংখ্যক বোমারু বিমান আর বিমানবাহী রণতরী।

কেসি ওয়ান থার্টি ফাইভ স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কার ও কেসি ফোর্টি সিক্স পেগাসাসসহ ৩১টির বেশি রিফুয়েলিং এয়ারক্রাফট পাঠানো হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন ঘাঁটিতে। মধ্যপ্রাচ্যের পথে রয়েছে যুদ্ধবিমানসহ ৬০টির বেশি বিমান ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ।

কাছাকাছি এলাকায় এরই মধ্যে নোঙর ফেলেছে আরেক বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন। দিয়েগো গার্সিয়ায় ব্রিটিশ-মার্কিন যৌথ সামরিক ঘাঁটির স্যাটেলাইট ছবিতে শনাক্ত হয়েছে বি ফিফটি টুসহ বিভিন্ন বোমারু বিমান।

লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রকে কেন দরকার ইসরাইলের? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া আকাশপথে হামলা চালিয়ে ভূপৃষ্ঠের অনেকটা গভীরে অবস্থিত ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা ইসরাইলের জন্য অসম্ভব। এসব স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোর্দো জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে ইসরাইল হামলা চালালেও আঁচড় কাটতে পারেনি বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ।

ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশই উৎপাদন হয় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ফোর্দোতে; আরও পরিশোধনের মাধ্যমে যা সহজেই পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে উপযোগী উপাদানে রূপ পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমারও নাগালের বাইরে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৩শ’ ফুট গভীরে নির্মিত ফোর্দো।

ফোর্দোর চেয়েও বেশি গভীরে নাতাঞ্জ জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প। তবে আইএইএ’র তথ্য, এই স্থাপনায় থাকা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রি ফিউজ হামলা চালিয়ে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে ইসরাইল। কিন্তু পুরো স্থাপনা ধ্বংস করতে বিমান হামলা তো দূরের কথা, ইসরাইলের শতভাগ সামরিক শক্তিতেও সম্ভব নয়।

ফোর্দোর মতো স্থাপনায় হামলা চালাতে চাইলে একমাত্র মার্কিন বিমান বাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা বি-টু স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান পাঠাতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম জিবিইউ ফিফটি সেভেন এ বাই বি ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স পেনেট্রেটর বোমা একসাথে বহরে সক্ষম বি-টু স্পিরিট।

একেকটি বোমার ওজন ৩০ হাজার পাউন্ড, যা মার্কিন অস্ত্রভাণ্ডারের সবচেয়ে বড় প্রচলিত বোমা এবং ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বিধ্বংসী নকশায় তৈরি বলে এটি লম্বায় সাড়ে ২০ ফুট। কিন্তু একটি বোমা ভূগর্ভের ২শ’ ফুটের বেশি যেতে পারে না। তাই ফোর্দোর মতো স্থাপনা ধ্বংস করতে চাইলে একই স্থানে ফেলতে পরপর কয়েকটি জিবিইউ ফিফটি সেভেন। কিন্তু তাতেও এসব স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংসের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেটি করতে হলে কমান্ডো স্টাইলে ইরানে স্থল অভিযানই চালাতে হবে ট্রাম্পকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ইরানে সামরিক অভিযান ছাড়া বিকল্প দেখছেন না ট্রাম্প!

আপডেট সময় : ১০:১৭:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরাইল সংঘাত কোনদিকে গড়াচ্ছে, সেটি জানা না থাকলেও অবধারিত হয়ে উঠছে মার্কিন সামরিক শক্তির সরাসরি উপস্থিতি। ইরানের বিরুদ্ধে কোন পথে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? সমীকরণ বলছে, ইসরাইলের লক্ষ্য শতভাগ অর্জনে কমান্ডো স্টাইলে ইরানে স্থল অভিযানই চালাতে হবে ট্রাম্পকে।

ইরান-ইসরাইল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, তা হয়তো জানা যাবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই, যেমনটা দু’দিন আগে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। আঞ্চলিক দুই শক্তির মধ্যে চলমান সংঘাত নজিরবিহীন হলেও এখন পর্যন্ত আকাশপথেই তা সীমিত।

ট্রাম্পের বেঁধে দেয়া সময় সামনে রেখে তোড়জোড় বেড়েছে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে। সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ইরান আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতৃত্বাধীন আলোচনায় চাপ দিয়ে গেলেও, একই সময় ইরানকে কোণঠাসা করতে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার ইরানের হামলার ঝুঁকি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ঘাঁটি খালিও করে ফেলেছে।

ইরানে ইসরাইলি বিমান হামলায় সরাসরি যুক্ত হতে চাইলে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কাজে লাগাতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। সেক্ষেত্রে শঙ্কা রয়েছে মার্কিন এসব ঘাঁটিতে ইরান ও মিত্র বাহিনীগুলোর পাল্টা হামলার।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি যেখানে, সেই কাতারের আল-উদাইদসহ বিমানঘাঁটিতে ৪০টির বেশি বিমান সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি সেখানে কর্মকর্তাদের প্রবেশও সাময়িক নিষিদ্ধ করেছে দোহার মার্কিন দূতাবাস। অন্যদিকে পাঠিয়েছে এফ সিক্সটিন, এফ টোয়েন্টি টু আর এফ থার্টি ফাইভসহ বিপুল সংখ্যক বোমারু বিমান আর বিমানবাহী রণতরী।

কেসি ওয়ান থার্টি ফাইভ স্ট্র্যাটোট্যাঙ্কার ও কেসি ফোর্টি সিক্স পেগাসাসসহ ৩১টির বেশি রিফুয়েলিং এয়ারক্রাফট পাঠানো হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন ঘাঁটিতে। মধ্যপ্রাচ্যের পথে রয়েছে যুদ্ধবিমানসহ ৬০টির বেশি বিমান ধারণক্ষমতাসম্পন্ন রণতরী ইউএসএস নিমিৎজ।

কাছাকাছি এলাকায় এরই মধ্যে নোঙর ফেলেছে আরেক বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস কার্ল ভিনসন। দিয়েগো গার্সিয়ায় ব্রিটিশ-মার্কিন যৌথ সামরিক ঘাঁটির স্যাটেলাইট ছবিতে শনাক্ত হয়েছে বি ফিফটি টুসহ বিভিন্ন বোমারু বিমান।

লক্ষ্যে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রকে কেন দরকার ইসরাইলের? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া আকাশপথে হামলা চালিয়ে ভূপৃষ্ঠের অনেকটা গভীরে অবস্থিত ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা ইসরাইলের জন্য অসম্ভব। এসব স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফোর্দো জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে ইসরাইল হামলা চালালেও আঁচড় কাটতে পারেনি বলে নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ।

ইরানের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় অংশই উৎপাদন হয় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ফোর্দোতে; আরও পরিশোধনের মাধ্যমে যা সহজেই পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে উপযোগী উপাদানে রূপ পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমারও নাগালের বাইরে ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৩শ’ ফুট গভীরে নির্মিত ফোর্দো।

ফোর্দোর চেয়েও বেশি গভীরে নাতাঞ্জ জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ প্রকল্প। তবে আইএইএ’র তথ্য, এই স্থাপনায় থাকা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রি ফিউজ হামলা চালিয়ে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে ইসরাইল। কিন্তু পুরো স্থাপনা ধ্বংস করতে বিমান হামলা তো দূরের কথা, ইসরাইলের শতভাগ সামরিক শক্তিতেও সম্ভব নয়।

ফোর্দোর মতো স্থাপনায় হামলা চালাতে চাইলে একমাত্র মার্কিন বিমান বাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা বি-টু স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান পাঠাতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম জিবিইউ ফিফটি সেভেন এ বাই বি ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স পেনেট্রেটর বোমা একসাথে বহরে সক্ষম বি-টু স্পিরিট।

একেকটি বোমার ওজন ৩০ হাজার পাউন্ড, যা মার্কিন অস্ত্রভাণ্ডারের সবচেয়ে বড় প্রচলিত বোমা এবং ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার বিধ্বংসী নকশায় তৈরি বলে এটি লম্বায় সাড়ে ২০ ফুট। কিন্তু একটি বোমা ভূগর্ভের ২শ’ ফুটের বেশি যেতে পারে না। তাই ফোর্দোর মতো স্থাপনা ধ্বংস করতে চাইলে একই স্থানে ফেলতে পরপর কয়েকটি জিবিইউ ফিফটি সেভেন। কিন্তু তাতেও এসব স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংসের কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেটি করতে হলে কমান্ডো স্টাইলে ইরানে স্থল অভিযানই চালাতে হবে ট্রাম্পকে।