২০২৬ বিশ্বকাপে ইরান খেলতে পারবে?

- আপডেট সময় : ০৩:১১:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
- / ৩৩৮ বার পড়া হয়েছে

কয়েকদিন ধরে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। এক পর্যায়ে এ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশটি। সে হামলার জেরে ইরাক ও কাতারের বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান।
যদিও আজ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে উভয়পক্ষ। কিন্তু এরপরও একটা প্রশ্ন জোরেশোরে উঠছে। ২০২৬ বিশ্বকাপে ইরান কি অংশ নিতে পারবে?
প্রশ্নটা ওঠার বেশ কয়েকটি কারণও আছে। আগামী বছর হতে যাওয়া এ বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের অন্যতম সহ আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে যৌথ আয়োজন করলেও বিশ্বকাপের ১০৪ ম্যাচের ৭৮টিই অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে। গত মার্চে এশিয়া থেকে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে ইরান। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে যুদ্ধাবস্থায় পৌঁছে যাওয়ায় ইরানের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা জেগেছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। গত মার্চে ট্রাম্প প্রশাসন যে ১১টি দেশকে লাল তালিকাভুক্ত করেছিল, তার একটি ইরান। লাল তালিকাভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে ফিফার আইন অনুযায়ী ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে বাধা দেওয়ার কোনো বিধান নেই। ইরানের ম্যাচ দেখতে দেশটির দর্শকেরা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না পারলেও খেলোয়াড়, স্টাফ এবং অন্যান্য সহযোগীদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে।
এর আগে সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়েছিল ইরান। এবারের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ড্র এখনো হয়নি, হবে ডিসেম্বরে। তবে ড্র-তে ইরান যদি কোনোভাবে ‘এ’ গ্রুপে স্থান পায়, তাহলেই কেবল নিশ্চিত হবে যে, ইরানের দলকে গ্রুপের ম্যাচগুলো খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হবে না। গ্রুপ ‘এ’-র ম্যাচগুলো মেক্সিকোতে হবে। আর এর আগে কখনো বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পেরোতে না পারা ইরান যদি কেবল গ্রুপে সেরা হয়ে পরের রাউন্ডে, সে ক্ষেত্রে রাউন্ড অব ৩২-তেও তাদের ম্যাচ পড়বে মেক্সিকোতে। সেটি পেরোলে রাউন্ড অব সিক্সটিনের ম্যাচও মেক্সিকোতেই পড়বে। এরপর যদি সব হিসেবকে কাঁচকলা দেখিয়ে ইরান কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতেই হবে ইরানের দলকে।
প্রশ্ন হলো, ইরান কি ‘এ’ গ্রুপের স্লট পাবে? এ ড্র-তে ইরানকে বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখা হবে কি না, কিংবা ইরানের কোনো বিকল্প ভেবে রাখা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব চেয়ে ফিফার কাছে আবেদন করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। কিন্তু সে অনুরোধে সাড়া দেয়নি ফিফা।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইরানে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফিফা সভাপতি জিয়ান্তি ইনফান্তিনোর ঘনিষ্ঠতা কারও অজানা নয়। সে কারণে ইরানকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন হতে পারে ইনফান্তিনোর জন্য।
ইনফান্তিনো অবশ্য একা সিদ্ধান্ত নেবেন না। বিশ্বকাপে দলগুলোর অংশগ্রহণ ও ড্রয়ের ধরন নিয়ে ফিফা সভাপতির সঙ্গে সিদ্ধান্তে মতামত দেবে ফিফা কাউন্সিল। তবে আয়োজক কমিটির মতামতও নেওয়া হবে। সে আয়োজক কমিটিতে আবার কানাডা মেক্সিকো এবং ইরানের সদস্য আছেন। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উয়েফা প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দর সেফেরিন।
সেফেরিন এখানে প্রাসঙ্গিক, কারণ এর আগে ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে ফিফা ও উয়েফার সমস্ত কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিল রাশিয়া। যে কারণে কাতার বিশ্বকাপেও রাশিয়ার জায়গা হয়নি। ২০২২ সালে ইউক্রেন ও বেলারুশকে (রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র) উয়েফার টুর্নামেন্টের ড্র-তে আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেফেরিনের উয়েফা। এবার ইরান ইস্যুতে ফিফা তেমন পথে হাঁটবে কি না, সেটাই এখন দেখার।