কমেছে মুরগির দাম, স্থিতিশীল সবজি বাজার

- আপডেট সময় : ০২:৩৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
- / ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে

সরবরাহ ভালো থাকায় আলুসহ সবজি ও পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। একই সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কমেছে। গরু-খাসির মাংসের দোকানগুলোতে নেই তেমন ভিড়। দামও আগের জায়গায় রয়ে গেছে। মাছের বাজারেও রয়েছে স্বস্তির চিত্র। সবমিলিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা মাংসের পরিবর্তে মাছ-মুরগি ও ডিমের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী, মালিবাগ, শান্তিনগর, আগারগাঁও, মিরপুরসহ আশেপাশের বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে বেগুনের কেজি প্রকারভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, দেশি পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সজনে ডাটার কেজি ১২০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচা আম ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি টমেটো ৮০ টাকা, ভারতীয় গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা, ধনে পাতা ৩০০ টাকা কেজি, কাঁচা কলার হালি ২০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা পিস, ক্যাপসিকাম ৩৫০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কলমি শাক দুই আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা এবং ডাটা শাক দুই আঁটি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে আলু ২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে আদার কেজি ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।
বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে ৩০০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৫০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে মাছের বাজার গত সপ্তাহের মতোই চড়া দেখা গেছে। এসব বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২৭০০ টাকা এবং ৭০০ গ্রামের ইলিশ ২৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
চাষের এক কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, দেশি শিং ১০০০ টাকা, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, বোয়ালমাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা এবং পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরা বাজারে গৃহিণী নাহিদা সুলতানা বলেন, “ঈদের পর এখন এমনিতেই গরুর মাংস খেতে ইচ্ছা করছে না, আবার দামও অনেক বেশি। আজ দেখলাম ব্রয়লারের দাম একটু কমেছে। দুই কেজি নিয়ে যাচ্ছি, রান্নাও সহজ, খরচও ম্যানেজেবল।”
তিনি আরও বলেন, “দেখলাম মাছও তুলনামূলক সস্তা, তাজাও। পাবদা আর তেলাপিয়া নিলাম। বাচ্চারাও মাছ পছন্দ করে, রান্নাতেও সময় কম লাগে।”
ডিমের দাম প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, “বাসায় ডিম এখন প্রায় প্রতিদিনই লাগে। আগের চেয়ে ১৫–২০ টাকা কমে পাচ্ছি বলে কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে খুচরায় এখনো বেশি রাখছে, সেটাও ঠিক নয়।”
বাজারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি বিক্রেতা মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, “ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই মুরগির বিক্রি বাড়ছে। মানুষ এখন হালকা খাবার খাচ্ছে, কোরবানির মাংস খেয়ে সবাই ক্লান্ত। ব্রয়লারের কেজি ৫–১০ টাকা কমেছে। বিক্রি বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু লাভ খুব একটা নেই, দাম কম থাকায় মার্জিনও কম।”
তিনি আরও বলেন, “ বাজারে সোনালি মুরগির চাহিদাও বাড়ছে। তবে দেশি মুরগি অনেক দাম, তাই হাত কম যাচ্ছে ওদিকে।”
মগবাজারে মাছ বিক্রেতা মো. কাওছার মিয়া বলেন, “ঈদের সময় মাছ কেউ কিনত না, দোকান একেবারে ফাঁকা ছিল। এখন আবার বাজারে লোকজন আসছে, মাছও ভালো যাচ্ছে। রুই, কাতল, পাবদা এসব সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “দাম খুব একটা বাড়েনি। মাছ যেমন আসছে প্রচুর, তেমনি মানুষও মাছ খেতে আগ্রহী হচ্ছে। যারা কোরবানি দেননি বা কম দিয়েছে, তারা আবার মাছ-মুরগিতেই ফিরে গেছে। এখন দিনে ১৫–২০ কেজি রুই-কাতল বিক্রি হচ্ছে, আগের তুলনায় দ্বিগুণ বলা যায়।”