কেমন আছে সমালোচিত ইসরায়েলের মুসলিমরা

- আপডেট সময় : ০৩:৫৯:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
- / ৩৩৬ বার পড়া হয়েছে

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত একটি দেশ ইসরায়েল, যার জন্মই হয়েছে রাজনৈতিক চুক্তি, উপনিবেশবাদী হস্তক্ষেপ এবং সংঘাতময় ইতিহাসের মধ্য দিয়ে। ইতিহাসের পরিক্রমায় আজকের ইসরায়েল মূলত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের মধ্যেই গড়ে ওঠা একটি রাষ্ট্র, যেন দেশের ভিতরে আরেকটি দেশ। এর পেছনে রয়েছে জটিল আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ইহুদি শরণার্থীদের অভিবাসন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্র এবং মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা।
ভৌগোলিকভাবে দেশটি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব তীরে ও লোহিত সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত। এর উত্তর স্থলসীমান্তে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্দান ও ফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর), পশ্চিমে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মিসর অবস্থিত।
অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী তেল আবিব হলো দেশটির প্রধান নগর, যদিও ইসরায়েল সরকার সমগ্র জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত।
ইসরায়েলের মুসলিম জনগোষ্ঠী
২০২৩ সালের শেষে ইসরায়েলে মুসলমান জনসংখ্যা আনুমানিক ১৭ দশমিক ৮২ মিলিয়ন (সমগ্র জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ১ শতাংশ) ছিল, যাদের বেশির ভাগই আরব সুন্নি। জেরুজালেম শহরে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করে (প্রায় ৩৮০,০০০ জন), যা ইসরায়েলের মোট মুসলমান জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং জেরুজালেম শহরের মোট জনসংখ্যার ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ।
এখানেও মুসলিমদের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হচ্ছে। তারা দেশের নাগরিক হলেও, জীবনযাপন অনেক ক্ষেত্রেই জটিল ও বৈষম্যপূর্ণ। মুসলিম নাগরিকরা ভোটাধিকার ভোগ করে এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করলেও, মূলধারার রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ সীমিত। তাঁদের কণ্ঠ অনেক সময় উপেক্ষিত হয়। (https://www.timesofisrael.com/still-on-the-fringe-of-israeli-society-arabs-are-unenthusiastic-about-the-elections/?utm_source=chatgpt.com)
ইসরায়েলি মুসলিমদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। কর্মসংস্থান, শিল্প ও ব্যবসায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত। অনেক সময় রাষ্ট্রীয় সেবা ও উন্নয়ন থেকেও তারা বঞ্চিত থাকে। অনেক মুসলমান অভিযোগ করেন যে, তারা সরকারি ও সামাজিক কাঠামোতে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন। ভূমি, নির্মাণ অনুমতি, নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
তবে আমেরিকান একজন লেখিকা, বক্তা, এক্টিভিস্ট আইজা মেরক ইসরায়েল সফরের সময় তার একটি ভিডিও কন্টেন্টে দাবি করেন, ইসরায়েলের এমন একটি শহর আছে, যেখানে মুসলমানরা ইহুদি, খ্রিস্টানদের সঙ্গে সহাবস্থানে আছে। তার ভাষায় সেই শহরটি হচ্ছে ইসরায়েলের ‘নো নিউজ সিটি’ হাইফা। যেখানে মুসলিম, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে। শিক্ষা গ্রহণ করে। পেশাগত জীবনেও তাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখা যায়। তার ভিডিওতে তিনি একটি হাসপাতাল দেখান যেখানে ৫০ ভাগ ডাক্তার মুসলিম আর ৫০ ভাগ ডাক্তার ইহুদি, তারা সাবইকে একসঙ্গে জীবন রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। যদিও ইসরায়েলের অন্যান্য এলাকার পরিস্থিতি এমন নয়। (সূত্র : https://www.facebook.com/reel/1202417848044359)
অন্যান্য এলাকায় ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইসরায়েলি মুসলিমরা মসজিদে নামাজ পড়তে পারে, ইসলামী শিক্ষা নিতে পারে এবং ধর্মীয় উত্সব উদযাপন করতে পারে। তবে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশসহ কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধের সম্মুখীন হতে হয় তাদের। বিশেষ করে ধর্মীয় দিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে নিরাপত্তার অজুহাতে সেখানে প্রবেশ সীমিত করে দেওয়া হয়।
সার্বিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সেখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর জীবনে দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। মাঝেই মাঝেই তাদের ইহুদিদের উগ্র আচরণের সম্মুখীন হতে হয়। গত ২৬ মে, ২০২৫ রোজ সোমবার কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিরা জেরুজালেমের পুরোনো শহরের অলিগলি ও মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকার ভেতর দিয়ে মিছিল করার সময় কিছু ইসরায়েলি ‘আরবদের মৃত্যু হোক’ ও ‘তোমাদের গ্রাম জ্বলে যাক’ বলে স্লোগান দেয়।
এমনকি তারা পবিত্র আল-আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণ ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কার্যালয়ে আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ঢুকে পড়ে। এ সময় সেখানকার ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালানো, থুতু নিক্ষেপ করা ও মুসলমানদের দোকানে বা ঘরে প্রবেশের ঘটনাও ঘটে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। (সূত্র, উইকিপিডিয়া, জুইশ নিউজ সিন্ডিকেট, টাইমস অব ইসরায়েল, এপি নিউজ)